রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার নরদাশ ইউনিয়নের জোঁকা বিলের মাছ চাষ করা কে কেন্দ্র করে গঠিত কমিটির সভাপতি, সাধারন সম্পাদক ও কতিপয় সদস্যদের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এ ঘটনায় বর্তমানে উভয় পক্ষই মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছে। যে কোন সময় ওই ঘটনায় জেরে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের সৃষ্টি হতে পারে। এতে প্রাণহানিরও আশঙ্কা রয়েছে। ওই বিলের প্রায় শতাধিক সদস্য তাদের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ উত্থাপন করেন। তারা অচিরেই বর্তমান কমিটি বিলুপ্ত করে নতুন কমিটি গঠনের দাবী জানিয়েছেন।
এদিকে সোমবার দুপুর ১২ টায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে জোঁকা বিল নিয়ে চলমান সমস্যার একটা মিমাংশা বৈঠকের দিন আগে থেকেই ধার্য্য করা হয়েছিল। সেই কথা মতো বিল কমিটির লোকজন সহ দুই শতাধিক জমির মালিক মিমাংসা বৈঠকে উপস্থিত হয়। এক পক্ষ হাজির হলেও হাজির হননি জোঁকাবিল মৎস্য প্রকল্পের সভাপতি নরদাশ ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুর রশিদ সহ তার পক্ষের লোকজন। এর আগেও কয়েক বার মিমংসার দিন থাকলেও কেউ আসেননি। এ ঘটনায় বিল কমিটির অন্য সদস্য সহ স্থানীয় জমির মালিকদের মধ্যে দেখা দিয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। চলমান সমস্যার সমাধানে হাজির না হয়ে সমস্যাকে আরো জটিল আকারে নিয়ে যাচ্ছে সভাপতি সহ তার অনুসারীরা। সেই সাথে সঠিক ভাবে বিলের হিসাব-নিকাশ প্রদান না করে প্রতিদিনই মাছ বিক্রয় করছে তারা। মাছ চাষ প্রকল্পের বেশ কয়েকজন সদস্য সহ জমির মালিকরা বলেন কমিটির সভাপতি আবদুর রশিদ আমাদেরকে কোন টাকা পরিশোধ না করে নিজেই তার অনুসারীদের নিয়ে আত্মসাৎ করে চলেছে। জোঁকা বিলের জমির মালিক কামরুল ইসলাম, আবদুল মান্নান, রহিদুল ইসলাম, কুবাদ আলী সহ অনেকে বলেন, তিন বছরে ৩০ বার বিলের টাকা ভাগ-বাটোয়ারার কথা থাকলেও ৩ বছরে মাত্র ১১ বার টাকা সদস্যদের মাঝে বন্টন করা হয়েছে। বাকি টাকা নিজের কাছে রেখেছে। শুধু তাই নই সাবেক সভাপতি আনিছুর রহমান হত্যা কান্ডের মামলায় যারা ক্ষতিগ্রস্থ তাদেরকে ক্ষতিপূরণ দেয়ার নামে তার কাছে ৯ লাখ টাকা রেখে দিয়েছে। যে টাকা এখনও কাউকে দেয়া হয়নি। প্রতিবছর প্রায় ৮ থেকে ১০ কোটি টাকার মাছ বিক্রয় হয় এই জোঁকা বিল থেকে। জমির মালিক সহ যাদেরকে কমিটি থেকে বাদ দেয়া হয়েছে তাদের কাউকে টাকা পরিশোধ করা হয়নি। বিলের দখল নিজের কাছে রাখতে সন্ত্রাসী বাহিনী ব্যবহার করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। বর্তমানে বিলের মেয়াদ শেষের পথে তার পরও টাকা পরিশোধ না করায় অনিশ্চিতায় মধ্যে পড়েছে জমির মালিক সহ স্থানীয় লোকজন। পাওনা টাকা চাইতে গেলেই ধরে নিয়ে গিয়ে মারপিট করে সভাপতি সহ তার লোকজন। এ ঘটনায় থানা সহ মহামান্য আদালতে মামলা মোকদ্দমাও করেন ভুক্তভোগীরা। রোববার (১০ জানুয়ারী) চলমান বিরোধ নিষ্পত্তি লক্ষ্যে রাজশাহী পুলিশ সুপার বরাবরে লিখিত আবেদন করেন জমির মালিক সহ কমিটি থেকে বাদ দেয়া সদস্যরা। বর্তমানে জোঁকা বিল নিয়ে যে বিরোধ চলছে তা যে কোন সময় সংঘর্ষে রুপ নিতে পারে তাই অপ্রীতিকর ঘটনা যেন না ঘটে সে ব্যাপারে দ্রুত একটা কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণের আবেদন জানানো হয়। এর আগে প্রশাসনের রহস্য জনক কারণে আনিছুর রহমানকে জীবন দিতে হয়েছিল এই মাছ চাষকে কেন্দ্র করে। একই ঘটনার যেন পুনরাবৃত্তি না ঘটে সে জন্য সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের তদন্ত পূর্বক সকল সদস্যের প্রাপ্ত অংশ পরিশোধসহ নতুন কমিটি গঠনের ব্যবস্থা করা আবশ্যক। এতে জোঁকা বিলে মাছ চাষ করতে গেলে বিলের সকল হিসাব-নিকাশ পরিশোধের মাধ্যমে আবারও নতুন কমিটি দিয়ে এলাকার শান্তি শৃংখলা বজায় রাখার ব্যবস্থা করা জরুরী। এতে জোকা বিলের হাজারো জমির মালিক সহ অপূরনীয় ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পাবে এলাকার নিরীহ জনগণ। পাশাপাশি বিলের মৎস্য চাষের সাথে জড়িত সকল সদস্য যেন তাদের ন্যয্য হিস্যা থেকে বঞ্চিত না হয় এবং আইন শৃংখলার অবনতি না হয় সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের দাবী জানানো হয়েছে। অন্যদিতে নির্দিষ্ট সময়ে বিলের পানি অপসারণের ব্যবস্থা না করলে হাজার হাজার বিঘা জমিতে কৃষক তাদের ধানের আবাদ করতে পারবেনা।
নরদাশ ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা পরিষদের সদস্য মাস্টার আবদুর রশিদকে সভাপতি এবং সাধারন সম্পাদক আমিনুল ইসলামসহ ৪২সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়। গঠিত কমিটিতে সভাপতি তার নিজস্ব লোকজনকে রেখে যারা নেতৃত্ব দিতে পারবে এমন লোকজনকে কৌশলে বাদ দেয়া হয়েছে। তাদেরকে নিয়েই সভাপতি লুটপাটের রাজত্ব কায়েম করে চলেছে। এতে করে ওই বিলের যারা বেশির ভাগ জমির মালিক তাদের মধ্যে ক্ষোভ ও হতাশা বাড়তে থাকে। সেই ক্ষোভের বহিঃপ্রকার ঘটাতে যে কোন সময়ে আবারও একটা রক্তক্ষয়ি সংঘর্ষের সৃষ্টি হতে পারে। বিলের জমির মালিকরা অভিযোগ করেন কমিটি গঠনের পর থেকে সভাপতি ও সাধারন সম্পাদক কোন সভা আহ্বান করেননি। সকল সদস্যদের মাঝে লভ্যাংশের টাকাও ভাগ করে দেননি। সভাপতি ও সাধারন সম্পাদক কতিপয় সদস্যকে নিয়ে মাছ বিক্রি করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। হিসেব চাইতে গেলেই মামলা-হামলা ও প্রাণনাশের ভয় দেখানো হয় বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেন। হাট-মাধনগর গ্রামের আফাজ উদ্দিন সরকার, বাবুল হোসেন, আতাউর রহমান, সাহেব আলীসহ প্রায় অর্ধ-শতাধিক ওই বিলের জমি মালিক এসব অভিযোগ করেন। কমিটির অনিয়মের বিষয়ে প্রতিবাদ করায় তাদের বাড়িঘরে একাধিক বার হামলা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা। এসব ঘটনার জের ধরে সম্প্রতি কয়েকটি বাড়িতে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে বাড়িঘর ভাংচুর করে। ওই দিন বাসুদেবপাড়া গ্রামের জাহাঙ্গীরের বাড়িতে প্রতিপক্ষরা দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে ভয়ভীতি দেখায় ও বাড়িতে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করেছে বলে জাহাঙ্গীরের স্ত্রী আরিফা বেগম ও জাহাঙ্গীরের মা সাহারা অভিযোগ করেন। হামলাকারীদের ভয়ে জাহাঙ্গীরসহ বেশ কয়েকজন পালিয়ে বেড়াচ্ছেন বলেও জানান তাদের পরিবারের সদস্যরা। বর্তমানে তারা নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছেন।
এ ঘটনায় জোঁকা বিল মৎস্য চাষ প্রকল্পের সভাপতি আবদুর রশিদ বলেন, আমি শারীরিক ভাবে অসুস্থ থাকার কারণে মিমাংশা বৈঠকে উপস্থিত হতে পারিনি। এ ব্যাপারে আমি ইউএনও অফিসে লিখিত আবেদন করেছি। এর আগেও ডেকেছে সে সময় আমি ঢাকায় চিকিৎসা শেষে বাড়ি আসি। তাই সে সময়েও উপস্থিত হতে পারিনি।
এ ব্যাপারে বাগমারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শরিফ আহম্মেদ বলেন, জোঁকা বিলের দুই পক্ষের মধ্যে চলমান সমস্যার নিরশনের লক্ষ্যে উভয় পক্ষকে ডাকা হলে এক পক্ষ না আসায় মিমাংসা সম্ভব হয়নি। এর আগেও তারা মিমাংসা বৈঠকে অনুপস্থিত ছিল।