বিরিজ হওয়ার আগে মেলাদিন হামরা কষ্ট করচি। হামাগেরে বাপ দাদারাও কষ্ট করে গেচে। সাড়া জেবন হামরা খেওয়াত পাড় হচি। একন বিরিজ হয়য়াও হামাকেরে কোন নাব (লাভ) হলোনা। একন বলে টোল দেওয়া নাগবে। এভাবেই আক্ষেপের সাথে কথা গুলো বললেন, গাইবান্ধার বোনারপাড়ার পাশ^বর্তি হরিরামপুর ইউনিয়নের বাড়নীতলা গ্রামের রিক্সা-ভ্যান চালক জাহিদুল ইসলাম। জাহিদুলের মত একই আক্ষেপ আরও শত শত খেটে খাওয়া মানুষের। তাদের মধ্যে আরেক জন ওই ইউনিয়নের হাজির বাজারের বাসিন্দা রিক্সা-ভ্যান চালক আইয়ুব মিয়া বলেন, বিরিজ পায়য়া হামরা খুব খুশি হচিলেম। একন শুনিচ্ছি আবার টোল দেওয়া নাগবে। টোলই যুদি দেওয়া নাগে, তাহলে তো হামাকেরে খেওয়া পারাপারই ভালো আচিলো।
গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার শেষ প্রান্ত ও সাঘাটা উপজেলার বোনারপাড়ার সন্নিকটে নাকাইহাট-গোবিন্দগঞ্জ সড়কের বড়দহ সেতুতে টোল আদায়ের সরকারী সিদ্ধান্ত হওয়ায় অত্রালাকার খেটে খাওয়া মানুষ গুলো এভাবেই তাদের আক্ষেপের কথা প্রকাশ করেন। কাটাখালী নদীর পশ্চিম পাড়ের সাথে পুর্ব পাড়ের যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম ছিলো খেয়া পারাপার। সাড়া বছর তিন ইউনিয়নের মানুষ মাড়ের নৌকায় চলাচল করত। গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা শহরের সাথে যোগাযোগ স্থাপন সহ দেশের যেকোন স্থানে যেতে এই নদীতে খেওয়াই ছিলো এ এলাকার মানুষের একমাত্র ভরসা। উপজেলার হরিরামপুর, নাকাইহাট, বাজুনিয়ারপাড়া, বড়দহ, নাওভাঙা, বুড়িরভিটা, শিবেরবাজার, ক্রোড়গাছা, রামচন্দ্রপুর, শংকরগঞ্জ, তেতুলতলি, রামনগর, পাটোয়া, রামপুরা ও সাঘাটা উপজেলার বোনারপাড়া ইউনিয়নের দলদলিয়া, বাটি, দুর্গাপুর সহ ২০ টি গ্রামের মানুষের দির্ঘ দিনের দাবির প্রেক্ষিতে ১৯৯৬ সালে সড়ক ও জনপথ বিভাগের আওতায় কাটাখালি নদীর উপর বড়দহ সেতুটির নির্মাণ কাজ শুরু হয়। তারপর নদীর গতিপথ পরিবর্তন, দুপাশে ভাঙন সহ নানা জটিলতায় মাঝপথে প্রায় দুইযুগ সেতুর নির্মাণ কাজ বন্ধ থাকে। ১৪৮ মিটার দৈর্ঘ্যরে লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে কাজ শুরু হলেও কয়েক ধাপে নির্মাণ কাজের লক্ষমাত্রা ও পরিধি বেড়ে সর্বশেষ দৈর্ঘ্য হয় ২৫৩.৫৬ মিটার। এরপর বর্তমান সরকার ২য় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর আবারও কাজ শুরু হয়ে ২০১৪ সালের শেষের দিকে শেষ হয়। ২০১৫ সালের ২০ আগস্ট সেতুর উপর দিয়ে চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়। সেতুটি নির্মাণ হওয়ায় এলাকাবাসীর কাঙ্খিত স্বপ্ন পুরণ হয়। সেই সাথে দির্ঘদিনের নদী ভাঙন ও বন্যা কবলিত এ এলাকার মানুষের জীবন মানেরও উন্নয়ন ঘটতে শুরু করে। গ্রামে উৎপাদিত সবজি ও ধান চাল সহ কৃষিপন্ন সহজেই হাটবাজারে নেওয়া যাচ্ছে এ সেতুর বদৌলতে। কিন্তু এরই মাঝে সেতুতে চলাচল করতে যানবাহনের টোল আদায়ের সিদ্ধান্ত কোন ভাবেই মানতে পারছে না গ্রামের মানুষ গুলো। সেতুর পাশ^বর্তি নাওভাঙা গ্রামের বাসিন্দা মুনছুর আলী জানান, সেতুর টোল প্রদান করা আমাদের জন্য খুব কষ্ট হবে। এমন চিন্তা কখনো মাথায় আসেনি। গ্রামের মানুষ সামান্ন আয় করে কোনমতে জীবন চালায়, তারা টোল দিবে কিভাবে? এমন প্রশ্ন করে হাজিরবাজার গ্রামের মিজানুর রহমান বলেন, আমরা এ এলাকার সবাই খেটে খাওয়া মানুষ। বেশির ভাগ মানুষই রিক্সা-ভ্যান চালিয়ে জীবন চালায়। হরিরামপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান শাহজাহান আলী সাজু বলেন, এদিকের মানুষ তো গরীব। তাদের জন্য কোন আলাদা ব্যবস্থা হলে উপকার হবে। গাইবান্ধা সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী মো: আসাদুজ্জামান বলেন, এলাকাবাসী তো টোল না নিতে আন্দোলন করছে। এ দাবি কথা আমরা উপরে জানিয়েছি। তবে স¦ল্প আয়ের মানুষের জন্য একটা ব্যবস্থা হবে বলে জানান তিনি।