বৈশ্বিক মহামারি করোনার বিপর্যয় মোকাবিলা করে ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে ভারত সীমান্ত ঘেঁষা শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার গারো পাহাড়খ্যাত ‘গজনী অবকাশ’ পর্যটন কেন্দ্র। ২০২০ সালকে বিদায় জানিয়ে নতুন বছর ২০২১ সালের শুরুতেই লোকে লোকারণ্য হয়ে উঠেছে এ পর্যটন কেন্দ্রটি। শুক্রবার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এ পর্যটন কেন্দ্রে উচ্ছ্বাস আর আনন্দে মেতে উঠেছেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার ভ্রমণ পিপাসুরা। এদিকে অনেক দিন পর এমন পর্যটক আগমনে দারুণ খুশি এখানকার ব্যবসায়ীরা। তবে পর্যটন কেন্দ্রে আগত দর্শনার্থীদের বেশিরভাগ মানছে না স্বাস্থ্যবিধি।
এই পর্যটন কেন্দ্রের মনোমুগ্ধকর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য খুব সহজেই আকৃষ্ট করে আগত পর্যটকদের। প্রকৃতি এখানে প্রতিনিয়ত হাতছানি দিয়ে ডাকে। পাহাড় টিলা আর সমতল ভূমিতে সবুজের সমারোহ। শাল, গজারী, সেগুন, ছোট-বড় মাঝারি টিলা, লতাপাতার বিন্যাস প্রকৃতি প্রেমিদের নিশ্চিত দোলা দিয়ে যায়। অপরূপ রূপের চাদর মোড়ানো পাহাড় আর সেই পাহাড়ের পাশ ঘেঁষেই রয়েছে ভারতের মেঘালয় রাজ্য।অন্যদিকে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে নতুন করে পাহাড়ের বুক জুড়ে তৈরী হেেয়ছে সুদীর্ঘ ওয়াকওয়ে। পায়ে হেঁটে পাহাড়ের স্পর্শ নিয়ে লেকের পাড় ধরে হেঁটে যাওয়া যাবে এক পাহাড় থেকে অন্য পাহাড়ে। পড়ন্ত বিকেলে ছোট ছোট নৌকায় করে ঘুরার জন্য রয়েছে লেক। লেকের বুকে নৌকায় চড়ে পাহাড়ের পাদদেশে কফি আড্ডা আর গান এখানে আগত দর্শণার্থীদের জন্য অন্যরকম অভিজ্ঞতা তৈরী করবে। গারো মা ভিলেজেও ছোঁয়া লেগেছে নতুনত্বের। মাশরুম ছাতার নীচে বসে বা পাখি ব্রেঞ্চে বসে পাহাড়ের ঢালে আদিবাসীদের জীবনযাত্রা, দিগন্তজোড়া ধান ক্ষেত আর পাহাড়ী জনপদের ভিন্ন জীবনমান উপভোগ করা যাবে খুব সহজেই। আগত শিশু দর্শণার্থীদের জন্য চুকুলুপি চিলড্রেনস পার্কের পাশাপাশি এবার নতুন যুক্ত হচ্ছে শিশু কর্ণার। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখে মুগ্ধ পর্যটকরা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, গজনী অবকাশের বিভিন্ন জায়গায় কেউবা তুলছেন সেলফি, কেউবা নিজ ও প্রিয়জনের ছবি ক্যামেরাবন্দি করছেন নিজের মোবাইল ফোনে। চুকুলুপি চিলড্রেনস পার্ক ছিল সকাল থেকেই মুখরিত। শিশুদের ভিড় বেড়ে যাওয়ায় পার্কের ফটকে লম্বা লাইন দেখা যায়। এ সময় শিশুদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে ওঠে এ শিশুপার্কটি। বিভিন্ন রাইডে চড়ে ও খোলামেলা পরিবেশ পেয়ে আনন্দে মেতে ওঠে শিশুরা। শিশুদের সঙ্গে অনেক অভিভাবককেও আনন্দে মেতে উঠতে দেখা যায়।
জামালপুর থেকে আগত দর্শনার্থী শাহরিয়ার রনি বলেন, বৈশ্বিক মহামারি করোনার জন্য অনেক দিন ঘরে বন্দী থাকার পর পরিবারের সবাইকে নিয়ে অপরূপ রূপের চাদর মোড়ানো পাহাড় দেখতে এসেছেন। গারো পাহাড় ও পর্যটন কেন্দ্রে তৈরী কৃত্রিম দৃশ্যগুলো তাদের মনে অনেক আনন্দ দিয়েছে বলে জানান তিনি।
ব্যবসায়ী শাহিন বলেন, এমন দর্শনার্থী প্রতিদিন থাকলে করোনার জন্য যে ক্ষতি হয়েছে, তা পুষিয়ে নেওয়া সম্ভব। তাদের বিক্রিও ভাল বলে জানান তিনি।
পর্যটন কেন্দ্রের প্রবেশদারের ইজারাদারদের পক্ষ থেকে দায়িত্বে থাকা শাহজাহান সরকার বলেন, আজ ছোট-বড় প্রায় ২ শতাধিক গাড়ি দিয়ে পর্যটকরা এসেছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রুবেল মাহমুদ বলেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে পর্যটকদের পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। যারা মাস্ক নিয়ে আসে নাই অথবা মাস্ক হারিয়ে ফেলেছে তাদের মাস্ক বিতরণ করা হচ্ছে। নতুন বছরে করোনার দ্বিতীয় থাবা যদি সঠিকভাবে মোকাবিলা করা যায় তা হলে গজনী অবকাশ আবারো ঘুরে দাঁড়াবে। তিনি আরও বলেন, তবে অনেক দিন পর গজনী অবকাশে দর্শনার্থী বেড়েছে। এখানকার আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভাল থাকায় নিরাপত্তার কোন সমস্যা নেই। এ ছাড়া আগত দর্শনার্থীরা যাতে নির্বিঘেœ ঘুরাফেরা করতে পারে তার জন্য পোশাক ও সাদা পোশাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য নিয়োজিত রয়েছে।