ঢাকা-কক্সবাজার রুটে চলাচল করবে বুলেট ট্রেন। ওই লক্ষ্যে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ প্রায় শেষ। বুলেট ট্রেনটি প্রায় সাড়ে ৩শ কিলোমিটার উড়ালপথ দিয়ে যাতায়াত করবে। ব্যালাস্টলেস (পাথরবিহীন) হবে এর ট্র্যাক। আর তেল বা কয়লার বদলে ট্রেনটি বিদ্যুতে চলবে। ওই রেলপথে ৫টি অত্যাধুনিক উড়াল স্টেশন নির্মাণ করা হবে। সেজন্য প্রাথমিক ব্যয় ধরা হচ্ছে ১৫০ হাজার কোটি টাকা। প্রথমে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত বুলেট ট্রেন চলানোর প্রকল্প নেয়া হয়েছিল। কিন্তু প্রকল্পটি সংশোধন করে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। অতিসম্প্রতি রেলপথমন্ত্রীর উপস্থিতিতে এক বৈঠকে ঢাকা থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত দ্রুতগতির রেলপথ নির্মাণের সম্ভাব্যতা সমীক্ষা এবং ওই প্রকল্পের বিশদ ডিজাইনের হালনাগাদ তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে। তাতে বলা হয়, সম্ভাব্যতা যাচাই এবং নকশা তৈরির কাজ প্রায় শেষ। রেলপথ মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, চায়না রেলওয়ে ডিজাইন করপোরেশন (চীন) ও বাংলাদেশ রেলওয়ে এবং মজুমদার এন্টারপ্রাইজ এদেশে বুলেট ট্রেন চলাচলের সম্ভাব্যতা যাচাই ও নকশা তৈরির কাজ যৌথভাবে করেছে। এর আওতায় বিভিন্ন অবকাঠামোর বিশদ ডিজাইন তৈরি, দরপত্রের দলিলাদি প্রস্তুকরণ, নতুন রেললাইন পরিচালন প্রক্রিয়া নির্ধারণ করা হচ্ছে। তাছাড়া প্রাথমিক পরিবেশ পরীক্ষা প্রতিবেদন তৈরি, প্রকল্পের পরিবেশগত প্রভাব মূল্যায়ন, পরিবেশ ব্যবস্থাপনা ও মনিটরিং, ভূমি অধিগ্রহণ ও পুনর্বাসন পরিকল্পনাও তৈরি করে দেয়া হবে। কয়েকদিনের মধ্যেই ঢাকা-চট্টগ্রাম পর্যন্ত প্রকল্পের চূড়ান্ত নকশা জমা দেয়া হবে।
সূত্র জানায়, বুলেট ট্রেন প্রকল্পে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, কুমিল্লা, ফেনী ও চট্টগ্রামের পাহাড়তলীতে ইউরোপের আদলে ৫টি স্টেশন নির্মাণ হবে। প্রতিটি স্টেশন ঘিরেই থাকবে একেকটি মাল্টি মোডাল ট্রানজিট হাব। পাহাড়তলী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত মাঝপথে কোনো স্টেশন থাকবে না। ওই প্রকল্পের সবচেয়ে অত্যাধুনিক স্টেশনটি কক্সবাজারে নির্মাণ হবে।
সূত্র আরো জানায়, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে বুলেট ট্রেন প্রকল্পে প্রায় ১৫০ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হতে পারে। তবে চূড়ান্ত নকশা শেষে প্রকৃত ব্যয় বেরিয়ে আসবে। সেক্ষেত্রে ব্যয় বাড়তেও পারে। ওই রেলপথ নির্মাণ শেষে উন্নত প্রযুক্তির পাশাপাশি চীন-জাপানের সংস্কৃতিও চলে আসবে। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষকে নির্ধারিত সময়ের চেয়ে সামান্য দেরি হলেও যাত্রীদের কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। এটাও হবে নতুন সংযোজন। যথাসময়ে ট্রেন চালানোর জন্য স্টেশন ও সিগন্যালিং ব্যবস্থার সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের বিশেষ প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। বর্তমানে চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত দ্রুতগতিতে ১২০ থেকে ১৩০ কিলোমিটার গতির সম্পূর্ণ ডুয়েলগেজ ডাবল লাইন নির্মাণ চলছে। আগামী ২০২২ সালের মধ্যে এ প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন হবে।
এদিকে এ প্রসঙ্গে প্রকল্প পরিচালক মো. কামরুল আহসান জানান, অতিসম্প্রতি রেলপথমন্ত্রীর উপস্থিতিতে এ প্রকল্পের বিশদ ডিজাইন নিয়ে সংশ্লিষ্টদের মধ্যে আলোচনা হয়েছে। দ্রুতগতির এ রেলপথ নির্মাণের মধ্য দিয়ে ঢাকা থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত বুলেট ট্রেন চলাচলে সময় লাগবে ১ ঘণ্টা ১০ থেকে ১৫ মিনিট। এটি হবে দেশের সবচেয়ে ব্যয়বহুল প্রকল্প। ইতিমধ্যে এ প্রকল্পে আর্থিক সহায়তা দেয়ার জন্য বিভিন্ন দেশ আগ্রহ দেখাচ্ছে। বাংলাদেশে এই প্রথম ইলেকট্রিক ট্র্যাকশনের মাধ্যমে হাইস্পিড রেলওয়ে পরিচালিত হবে। তাতে যাত্রীদের ভ্রমণ হবে দ্রততর, অধিক নিরাপদ, আরামদায়ক ও আকর্ষণীয়।
অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে রেলপথমন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম সুজন জানান, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত বুলেট ট্রেন চলবে। সেজন্য সম্ভাব্যতা সমীক্ষা এবং বিশদ ডিজাইন তৈরি শেষ পর্যায়ে রয়েছে। ওই পথে মাত্র ১ ঘণ্টায় যাত্রীরা চলাচল করতে পারবেন। অত্যাধুনিক এ রেলপথের সঙ্গে ইউরোপের আদলে ৫টি রেলওয়ে স্টেশন নির্মাণ হবে। প্রকল্পটি সামাজিক, অর্থনৈতিক, কারিগরি তথা সার্বিকভাবে লাভজনক হবে। বর্তমান সরকার রেলের উন্নয়নে ৩০ বছরব্যাপী একটি মাস্টারপ্ল্যান তৈরি করেছে। তাতে প্রায় সাড়ে ৫ লাখ হাজার কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। একাধিক রুটে বুলেট ট্রেনসহ দ্রুতগতির ইলেকট্রিক ট্রেন চালানো হবে।