শীত ও করোনার ঝুঁকি উপেক্ষা করে ব্যাপক ভোটার উপস্থিতি, বিএনপির বর্জন ও জবরদস্তির অভিযোগের মধ্য দিয়ে দ্বিতীয় ধাপের পৌর নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। শনিবার সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ভোট চলে। বিচ্ছিন্নভাবে কয়েক জায়গায় সহিংসতা, ভোটার ও এজেন্টদের বের করে দেওয়ার অভিযোগ উঠলেও সার্বিকভাবে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে নির্বাচন শেষ হয়। আনুষ্ঠানিকভাবে ভোট ৪টায় শেষ হলেও কয়েক জায়গায় ভোটারদের লাইন শেষ না হওয়া পর্যন্ত ভোট চলে। নির্বাচন কমিশন সূত্র জানায়, দ্বিতীয় ধাপে ৬১টি পৌরসভায় ভোট অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। তবে নীলফামারীর সৈয়দপুর পৌরসভার একজন প্রার্থী মৃত্যুবরণ করায় ভোট স্থগিত করা হয়। আর ৬০টি পৌরসভার ৫৬টিতে মেয়র পদে ভোট হয়। নারায়ণগঞ্জের তারাব, সিরাজগঞ্জের কাজিপুর, পাবনার ভাঙুরা ও পিরোজপুরে মোট চারটি পৌরসভায় ভোটের আগেই আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী হয়েছেন। তাই বাকি ৫২টিতে মেয়র পদে ভোট হয়। গত ২ ডিসেম্বর দ্বিতীয় ধাপের ভোটের তফসিল ঘোষণা করা হয়। ২৯টি পৌরসভায় ইভিএমে এবং বাকি ৩১টি পৌরসভায় কাগজের ব্যালটে ভোট হয়। এই ধাপের নির্বাচনে মেয়র পদে ২১১ জন, সাধারণ কাউন্সিলর পদে দুই হাজার ২৩২ জন এবং সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ৭২৪ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। সিরাজগঞ্জের বেলকুচি ও নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ ছাড়া বাকি ৫৪টি পৌরসভায় বিএনপির প্রার্থীরা মেয়র পদে দাঁড়ান। তবে ভোট শুরুর পর বিভিন্ন অভিযোগে বেশ কিছু পৌরসভায় বিএনপির প্রার্থীরা নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেন। এর মধ্যে বাগেরহাটের মোংলায় মেয়রসহ ৯টি ওয়ার্ডে বিএনপির কাউন্সিলর প্রার্থীসহ মোট ১৫ জন, রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার ভবানীগঞ্জ পৌরসভায় মেয়র প্রার্থী, কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচর পৌরসভায় বিএনপির মেয়র প্রার্থী নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেন। নির্বাচনের শেষ মুহূর্তে সিরাজগঞ্জের দুইটি পৌরসভায় ভোট বর্জন ও ফলাফল প্রত্যাখানের ঘোষণা দেয় বিএনপি। দলের এজেন্টদের কেন্দ্রে ঢুকতে না দেওয়া ও প্রকাশ্যে জোর করে নৌকা প্রতীকে ভোট দিতে বাধ্য করার অভিযোগ এনে নির্বাচন প্রত্যাখান করেন প্রার্থীরা। এ ছাড়া মাগুরা ও পাবনায় বিএনপির প্রার্থীরা ধানের শীষের এজেন্টদের বের করে দেওয়া, মারধর ও ভোটে বাধা দেওয়ার অভিযোগ করেন। জাল ভোট দিয়ে গিয়ে বগুড়া ও কুষ্টিয়ায় দুইজনকে আটক করা হয়। এ ছাড়া ফেনী ও কুমিল্লায় সহিংসতার খবর পাওয়া যায়। ফেনীর দাগনভূঞা পৌরসভা নির্বাচনে ৮ নম্বর ওয়ার্ডের গনিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ককটেল বিস্ফোরণে তিন জন আহত হন বলে অভিযোগ ওঠে। এদের মধ্যে একজন পুলিশের, একজন আনসার সদস্য ও একজন স্বতন্ত্র কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থক। এ ছাড়া কাউন্সিলর প্রার্থীদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এদিকে কুমিল্লার চান্দিনা পৌরসভার নির্বাচনে দুই কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে চার জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এদের মধ্যে একজনকে কুপিয়ে জখম করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। শনিবার ভোট শুরুর পর সকাল সাড়ে ৯ টার দিকে পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের হারং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রের পাশে এ সংঘর্ষ হয়। এবার সবকটি পৌরসভায় আওয়ামী লীগের প্রার্থী রয়েছেন। অনেকগুলো পৌরসভায় দলটির বিদ্রোহী প্রার্থীরাও মাঠে রয়েছেন। নির্বাচনে বড় দুই দল ছাড়াও জাতীয় পার্টি, ইসলামি আন্দোলন, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এলডিপি, জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন-এনডিএম এবং ন্যাশনাল পিপলস পার্টি-এনপিপি’র প্রার্থীরা অংশ নিয়েছেন। টাঙ্গাইললের ধনবাড়ি, নাটোরের গোপালগঞ্জ, বাগেরহাটের মোংলা, খাগড়াছড়ি, পাবনার বেশ কয়েক জায়গায় আওয়ামী লীগের সমর্থকদের বিরুদ্ধে ভোটারদের ফিঙ্গার প্রিন্ট নিয়ে বের করে দেওয়া, ব্যালট ছিনিয়ে নিয়ে নৌকায় সিল মারা, বিএনপির এজেন্টদের মারধর ও কেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়ার মতো অভিযোগ উঠেছে। এদিকে শীতের মধ্যেও বেশির ভাগ এলাকায় ৪৫ থেকে ৫০ শতাংশ ভোট পড়েছে বলে দাবি করেছেন নির্বাচনের দায়িত্বরত কর্মকর্তারা। দেশের ৩২৯টি পৌরসভার মধ্যে প্রথম ধাপে ২৪টি পৌরসভায় ইভিএমে ভোটগ্রহণ হয় ২৮ ডিসেম্বর। তৃতীয় ধাপে ৬৪টি পৌরসভায় ৩০ জানুয়ারি এবং চতুর্থ ধাপে ৫৬টি পৌরসভায় ১৪ ফেব্রুয়ারি ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।