নওগাঁর পত্নীতলায় শনিবার নজিপুর পৌরসভা নির্বাচনে অনুষ্ঠিত হয়েছে। নির্বাচন কেন্দ্রের বাহিরের পরিবেশ শান্তিপূর্ণ হলেও ভোটাধিকার প্রয়োগের ক্ষেত্রে প্রার্থী, পোলিং এজেন্ট ও সাধারণ ভোটাররা নানা রকম অনিয়মের অভিযোগ করেছেন। বিশেষ করে নারী ভোটারদের অভিযোগের পরিমাণ ছিলো বেশী। ভোট প্রদান শেষে বুথের বাহিরে এসে তাঁরা পছন্দের প্রার্থিকে ভোট দিতে না দেওয়ার অভিযোগ করেছেন। অনেক নারী ভোটারকে এ সময় চেচাঁমেচি করতে দেখা গেছে। তবে নির্বাচনে ভোট কেন্দ্রে ভোটারদের উপস্থিতি ছিলো চোখে পড়ার মতো। নতুন পদ্ধতিতে ভোট হওয়ায় ভোটারদের আকর্ষণের কেন্দ্র বিন্দু ছিলো ইলেকট্রিক ভোটিং পদ্ধতি। কিন্তু কোন কোন ভোট কেন্দ্রে প্রার্থী, পোলিং এজেন্ট ও সাধারণ ভোটারদের অভিযোগ তাদের উৎসাহে ভাঁটা ফেলে।
সরেজমিনে শনিবার সকাল সাড়ে ৯টায় ৩নং ওয়ার্ডের ভোট কেন্দ্র নজিপুর সিদ্দিকীয় সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসা কেন্দ্রে গিয়ে দেখা গেছে, ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী আনোয়ার হোসেন ও তাঁর মনোনীত এজেন্টরা রিটানিং কর্মকর্তা, সহকারী রিটানিং কর্মকর্তা ও নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার কাজে নিয়োজিত প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের নিকট নির্বাচনের অনিয়মের তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছেন। এ সময় মেয়র প্রার্থী আনোয়ার হোসেন তাঁর পোলিং এজেন্ট না রাখা এবং অধিকাংশ নারী ভোটারদের আঙ্গুলের ছাপ নেওয়ার পর তাদের ভোট প্রদান না করতে দেওয়ার অভিযোগ করেন। এ সময় কয়েকজন নারী ভোটারকে পছন্দের প্রার্থীকে ভোট প্রদান করতে না দেওয়ার কেন্দ্রের সামনে উচ্চৈঃস্বরে চেঁচামেচি করতে দেখা গেছে। এ সময় নির্বাচনের আইন শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে থাকা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের নীরব ভুমিকা পালন করতে দেখা গেছে। ৩নং ওয়ার্ড ছাড়াও ২, ৪ ও ৭নং ওয়ার্ডে ভোটারদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট প্রদান না করতে দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
নজিপুর পৌরসভা নির্বাচনের ভোট গ্রহণ শেষে রিটানিং কর্মকর্তা আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকার প্রতীকের প্রার্থী মো. রেজাউল কবির চৌধুরীকে বেসরকারি ভাবে বিজয়ী ঘোষণা করেন। তিনি ৭ হাজার ৬৮৫ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি বিএনপি মনোনীত ধানের শীষ প্রতিকের মেয়র প্রার্থী পেয়েছেন ৫হাজার ১৫০ ভোট। এদিকে নজিপুর পৌর নির্বাচনে বেসরকারি ভাবে কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছেন ১নং ওয়ার্ডে মুজাহিদুল ইসলাম, ২নং ওয়ার্ডে অরুন কুমার পাল, ৩নং ওয়ার্ডে আবদুল মজিদ, ৪নং ওয়ার্ডে যুগল কুমার দেবনাথ, ৫নং ওয়ার্ডে সুদর্শন সাহা, ৬নং ওয়ার্ডে আপেল মাহমুদ, ৭নং ওয়ার্ডে মোস্তফা কিবরিয়া, ৮নং ওয়ার্ডে সূর্যকান্ত ও ৯নং ওয়ার্ডে মিজানুর রহমান মিতু। অন্যদিকে সংরক্ষিত ১নং মহিলা আসনে ফারহানা মমিন, ২নং আসনে শাহনাজ বেগম এবং ৩ নং আসনে ফারজানা বেসরকারিভাবে কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছেন।
ধানের শীষের মেয়র প্রার্থীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে সহকারী রিটানিং কর্মকর্তা জানান, সঠিক সময়ে পোলিং এজেন্টদের তালিকা প্রার্থী জমা দিতে না পারায় প্রিজাইডিং কর্মকর্তা তাঁর এজেন্ট নিতে পারেনি। ভোটারদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে না দেওয়ার কোন ধরণের অভিযোগ সাধারণ ভোটারদের কাছ থেকে পাওয়া যায়নি।
নির্বাচনের পরিবেশ সুষ্ঠ ও শান্তিপূর্ণ রাখার জন্য প্রশাসনকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য নজিপুর পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে ২জন, সাধারণ কাউন্সিলর পদে ৩৬জন এবং সংরক্ষিত আসনের নারী কাউন্সিলর পদে ১২জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। পৌরসভার মোট ভোটার সংখ্যা ১৬ হাজার ৯৯৭জন। নির্বাচনে ১২ হাজার ৮৫৯ ভোটার ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন। এর মধ্যে বৈধ ভোটের সংখ্যা ১২ হাজার ৮৩৫টি এবং বাতিলকৃত ভোট ২৪টি। নির্বাচনে শতকরা ৭৫.৬৫ ভাগ মানুষ ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন। শনিবার সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত একটানা ভোট গ্রহণ করা হয়।