রাজা-বাদশার রাজত্ব শেষ হয়ে গেলেও চারঘাট প্রকৌশলীর কার্যালয়ের অফিস সহকারী আবদুল মান্নানের রাজত্ব এখনো শেষ হয়নি। দীর্ঘ দেড় যুগ (১৮) বছর ধরে চারঘাট এলজিইডি অফিসে নিজের রাজত্ব ধরে রেখেছেন। সেখানে একজন মান্নানের দৌরাত্ম্যের কাছে সবাই অসহায়। নানা কৌশলে ঘুষ আদায় করেন তিনি। চাহিদার কানাকড়ি কম হলেও হয়রানির শিকার হতে হয়। এসব তথ্য জানা গেছে ভুক্তভোগী, সেবাপ্রার্থী ও আবদুল মান্নানের সহকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে।
চারঘাট প্রকৌশলীর কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, এস এম আবদুল মান্নান অফিস সহকারীর পদে চাকুরিতে যোগদান করেন নওগাঁর মান্দা উপজেলায় ১৯৯১ সালে। মান্দা থেকে হবিগন্জ জেলার বাহুবল উপজেলায় বদলি হোন ২০০২ সালে। বাহুবল উপজেলায় মাত্র ৭ মাস চাকুরি করে বদলি হয়ে আসেন রাজশাহীর চারঘাটে।
চারঘাট উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয়ে অফিস সহকরী পদে যোগদান করেই আবদুল মান্নান পেয়ে যান মধু। গড়ে তোলেন একচেটিয়া রাজত্ব। কায়েম করেন ২০০২ সালের অক্টোবর থেকে বর্তমান ২০২১ সাল পর্যন্ত দেড় যুগের(১৮ বছর) রাজত্ব।
আব্দুল মান্নানের এই ১৮ বছরের রাজত্বকালে ১১ জন উপজেলা প্রকৌশলী বদলি হয়েছেন। কেউই টলাতে পারেনা আবদুল মান্নানের এই রাজত্ব। বিভিন্ন সময়ে নানা অনিয়মের কারণে একাধিকবার তার বদলি অর্ডার হয়েছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত অদৃশ্য ক্ষমতায় আবদুল মান্নান বদলি স্থগিত করিয়ে চারঘাটে তার রাজত্ব অক্ষুন্ন রেখেছেন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, চারঘাট উপজেলা প্রকৌশলী, এলজিইডি মকবুল হোসেন ব্যক্তিগত জীবনে অত্যন্ত সৎ। ঠিকাদার ও স্থানীয়দের কাছে তিনি একজন আদর্শস্থানীয় কর্মকর্তা হিসেবে পরিচিত। প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে কানাকড়িও ঘুষ খান না তিনি। তাঁর এ সততাকে পুঁজি করে অফিস সহকারী আবদুল মান্নান ঠিকাদারদের নানাভাবে হয়রানি করে মোটা অঙ্কের টাকা আদায় করছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। তার নিজের পছন্দের ঠিকাদারদের টাকার বিনিময়ে বিভিন্ন অনিয়মে সহযোগিতারও অভিযোগ উঠেছে।
বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, আবদুল মান্নান চারঘাটে যোগদান করেই পেয়ে যান স্বর্ণকাঠি। চারঘাট উপজেলায় চাকুরি করলেও রাজশাহী শহরের বিলাস বহুল বাড়িতে ভাড়া থাকেন তিনি। অফিস সহকারী পদে চাকরি করলেও নিজ উপজেলা মান্দায় জমি কিনে তৈরি করছেন বহুতল ভবন। প্রতিনিয়তই বাড়ছে তার সম্পদের পরিমান।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আবদুল মান্নানের এক সহকর্মী জানান, বিভিন্ন অনিয়মের কারণে আবদুল মান্নান বদলি হয়েও অদৃশ্য কারণে তা বার বার স্থগিত হয়েছে। এতে মান্নান আরো বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন। পুরো এলজিইডি অফিস তার কাছে জিম্মি। তাকে কেউ বদলি করানোর ক্ষমতা রাখেনা বলেও দাম্ভিকতার সাথে সবার কাছে উপস্থাপন করেন তিনি। আর এতে মান্নানের অনিয়ম গুলো নিজ চোখে দেখার পরেও সহকর্মীরা চুপ করে থাকেন।
এ বিষয়ে অফিস সহকারী আবদুল মান্নান বলেন, চারঘাটে ১৮ বছর চাকরি করছি। এসময়ে বদলি অর্ডার হয়েছিল এটা সঠিক। একজন প্রতিমন্ত্রীর ডিও লেটার নিয়ে বদলি স্থগিত করিয়েছি। তবে নিজের বিরুদ্ধে উঠা অভিযোগ গুলো ভিত্তিহীন বলে দাবী করেছেন তিনি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে চারঘাট উপজেলা প্রকৌশলী মকবুল হোসেন বলেন, আবদুল মান্নানের বিষয়ে আমার নিজস্ব কোনো বক্তব্য নেই। তবে তার বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।