গ্রামবাংলায় নি¤œমধ্যবিত্ত মানুষের কাছে শীত মৌসুমে হোগলা চাটাই বহুল পরিচিত। পল্লীর প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী শিল্প এটি। একটা সময় এ পাটি ব্যবহার হতো মক্তব, মসজিদ, মাদ্রাসা, বিভিন্ন সমাজিক অনুষ্ঠান কিংবা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অথবা ঘুমানের বিছানায় এ পণ্যটি অন্যতম মাধ্যম এছাড়াও পূজা- অর্চনা, ঘরের বেড়া, ফসল রাখার টুরকী, ক্ষেতের বেড়াসহ নানান কাজে এ হোগলার পাটি ব্যবহার হতো। তবে এ অঞ্চলে হোগলা পাতার চাষাবাদ না হলেও একটি সম্প্রদায় দেশের উপক’লীয় অঞ্চলসহ বিত্তশালী বাড়ির পাশে বা নদীর পাড়ে ও চরাঞ্চলে প্রাকৃতিকভাবে বেড়ে ওঠ হোগলা বেতি কার্তিক থেকে ফাগ্লুন পর্যন্ত কেটে শুকানো হয়। ত্রিকোণাকার বেতিপাতার এক পিটে তিন-চার ইঞ্চি মাপের একটি বাঁশের কঞ্চি দিয়ে বেতি ফাঁড়ানোর দাগ কাটে হোগলা বা মাদুর বুনননের উপযোগী চ্যাপ্টা আশবেতি তৈরি করা হয়। এরপর শুকনো চ্যাপ্টা বেতিপাতার মুড়ি বেধে দুই একদিন রেখে দেয়ার পর দক্ষ হাতে ১০ বাই ১২ ফুট বড় একটি হোগলা পাতার মাদুর তৈরি করতে ঘন্টাখানেক সময় লাগে। হোগলা পাতা সংগ্রহ করে বিছানার চটিপাটি বানিয়ে হাট-বাজারে বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহসহ বাড়তি আয় করছেন স্বরুপকাঠির নারীরা। অথচ অধুনিক সভ্যতা ও প্লাস্টিক পণ্যের দাপটে গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী হোগলা শিল্প যেন হারিয়ে যাচ্ছে। তবে এখনো কিছু কিছু পল্লী অঞ্চলে নি¤œবিত্ত মানুষের ঘরের বিছানা, খাদ্যশস্য রোদে শুকানো খাদ্যপণ্য, মিলাদ-মাহফিলে একসাথে অনেক মানুষকে বসতে দেওয়াসহ পারিবারিক অনেক কাজে হোগলাপাটির ব্যবহার লক্ষনীয়। নেছারাবাদের পল্লী নারীরা তাদের বাপ-দাদর আধিপেশা হোগলা শিল্পকে এখনো টিকিয়ে রেখেছেন। নেছারাবাদে পুরুষদের পাশাপাশি বাড়তি উপর্জন করছে এ শিল্পের কারিগর নারীরা। নেছারাবাদের চিনাবুনিয়া, চামি,জিলবাড়ি, আমতলা,ভরতকাঠি, সোনারঘোপ, দুর্গাকাঠি, রামচন্দ্রপুর, চিলতলা, লেবুবাড়ি,ঝিলবাড়ি,চাদকাঠি,সমুদয়কাঠি, শ্রীপতিকাঠি, খাড়াবাক ও গুয়ারেখা এ ১৬টি গ্রামের প্রায় ১৪ হাজার শ্রমজীবী নারী সাবলম্বী হয়ে উঠলেও আধুনিক প্রযুক্তি প্লাষ্টিক ও রেকসিন পণ্যের দাপটে এসব হস্তশিল্পের নারী কারিগররা ঝিমিয়ে পড়েছেন। এছাড়াও সময়ে হোগলা পাতার সঙ্কট, শ্রমিক না পাওয়া, বাজার মূল্যের চাইতে বিছনা বানাতে ব্যয় বৃদ্ধি ও পরিবহন ব্যয় বেশীসহ নারী শ্রমিকরা ওইকাজে অনীহা প্রকাশ করায় গ্রামীণ এ ক্ষুদ্র শিপ্লটি ক্রমেই বিলুপ্তি হতে যাচ্ছে। নারী কারিগর আমেনা বেগন(৫৫) জানান, ৮০ থেকে ১৩০ টাকা মূল্যের এক মুঠি হোগলা বা আঁশ বেতিতে ১২০ থেকে ২১০ টাকা দামের দুইটি গোগলা পাটি তৈরি হয়।
আর এতে সময় লাগতে পারে দুই থেকে আড়াই ঘন্টা। চিলতলার কুলছুম বেবী আক্ষেপ করে বলেন, মোরা, মাহজনের কাছ থেকে দাদন আনা টাকা দিতে না পারায়, মোগো হোগলাগুলো পানির দামে ওদের কাছে বিক্রি করতে হয়। সঠিক দাম ওরা দেয় না। সরকার যদি কিছু ঋণদিত, হেলে মোরা আড়তদার ও মজুদদারের টাকা আনতাম না, আর ওরা মোগো ঠকাইতে পাতো না।
সব বয়সের হস্তশিল্প নারী কারিগররা এ শিল্পের ছোট-বড় বিছানা, নামাজের মাদুর, কুসন, ঝুড়ি, টুপি, নানাহ ব্যাগ, টুকরী, সাংসারিক আসবাবপত্র, হাতপাখাসহ হরেক রকম জিনিস তৈরি করে এলাকার চাহিদা মিটিয়ে দেশের অন্যান্য স্থান কিংবা বিদেশে রফতানি করে রাজস্ব আয় ব্যাপক সাফল্য আসতে পারে বলে অভিমত স্থানীয় পরিবেশ বিদদের। তাই এ শিল্পকে