আসন্ন পৌর নির্বাচনে রাঙ্গামাটির পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডের মধ্যে তিনটি ওয়ার্ড মিলে সংরক্ষিত আসনে মহিলা কাউন্সিলর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সকল সম্প্রদায়ের সম্প্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে বসবাস করে রাঙ্গামাটি শহরের ১, ২ ও ৩নং ওয়ার্ডের বাসিন্দারা। আর যেখান থেকে আসন্ন পৌর নির্বাচনে সংরক্ষিত মহিলা আসনে নির্বাচন করবেন ৫ প্রার্থী।
এরা হলেন, পুলিশ লাইন এলাকা থেকে ছালেহা আক্তার, মাঝেরবস্তি এলাকা থেকে জয়শ্রী দে, জেটি ঘাট এলাকা থেকে জায়তুন নুর বেগম, মহিলা কলেজ এলাকা থেকে জোসনা বেগম ও পুরাতন হাসপাতাল এলাকা থেকে রূপসী দাশ গুপ্ত।
এই আসনে পাহাড়ি-বাঙালির সমানভাবে বসবাস করায় নির্বাচন মাঠে এটি বড় ফ্যাক্টর হিসেবে প্রতিবারই দাঁড়ায়। তবে এবার বাঙ্গালী প্রার্থী ৩জন ও হিন্দু সম্প্রদায়ের ২জন প্রাথী হওয়ায় ভোটের মাঠে বেশ লড়াই জমবে বলে ধারণা করছে এলাকার মানুষ।
তবে এদের মধ্যে রূপসী দাশ গুপ্ত গতবারের পৌর নির্বাচনে সবাইকে হারিয়ে নির্বাচিত হয়েছিলেন। তাই বর্তমানেও মানুষের কাছে তার গ্রহনযোগ্য রয়েছে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা। বিশেষ করে করোনার সময় মানুষ যখন ঘর থেকে বেড় হতে পারছিলেন না তখন নিজের মৃত্যুর কথা চিন্তা না করে মানুষের দ্বারে দ্বারে গিয়ে নিরলস ভাবে খাদ্য সহায়তাসহ বিভিন্ন ধরনের সাহায্য সহযোগিতা করে গেছেন। আর বিশেষ করে করোনার সময় কেউ কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে রূপসীর স্বামী দীপন দাশ গুপ্ত ও দেবর রূপন দাশ গুপ্ত মৃত্যুকে উপেক্ষা করে মানুষের ঘরে ঘরে গিয়ে পেশার ও ডায়বেটিস পরীক্ষাসহ বিভিন্ন সহযোগতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন।
বিশেষ করে গত ৫ বছরের তিনি রাঙ্গামাটিতে ঘটে যাওয়া ভয়াবহ পাহাড় ধস ও মহামারি করোনা ভাইরাসে যিনি মাঠ ময়দানে থেকে মানুষের জন্য কাজ করে গেছেন বলে এলাকা জুড়ে যার সুনাম রয়েছে ব্যাপক। স্বচ্ছ ও পরিচ্ছন্ন নেতৃত্ব ও ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত এবং তিনি ছিলেন, ১, ২ ও ৩নং ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের সবচেয়ে কাছের মানুষ হিসেবে।
এই ব্যাপারে রূপসী দাশ গুপ্ত বলেন, আমি গতবছর নির্বাচিত হওয়ার পর পরই রাঙ্গামাটিতে ভয়াবহ পাহাড় ধ্বসের দুর্ঘটনা ঘটে। আমি সে সময় রাত দিন মানুষের সেবার কাজ করে গেছি। বিশেষ করে ঘর বাড়ি ভেঙে গেছে তাদের আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়ার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা। এরপর আশ্রয় কেন্দ্রে থেকে আশ্রয়কারী সকল মানুষের নিরাপত্তা ও প্রয়োজনীয় খাবার ও বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা ব্যবস্থা করে দিয়েছি। প্রশাসন ও পৌরসভার পক্ষ থেকে যাবতীয় সকল প্রকার কাজ করেছি।
পাহাড় ধসের পরেই সারা বিশে^ করোনা ভাইরাসের আক্রমণ। এ সময় তিন মাস লকডাউন দেওয়া হয়। এতে আমার এলাকার মানুষ ব্যাপক সমস্যার মধ্যে পড়ে যায়। আমি এই লকডাউনে সরকারি ও পৌরসভার যে সকল সহযোগিতা এসেছে তা এলাকায় এলাকায় গিয়ে প্রতিটি বাড়িতে বাড়িতে পৌঁছে দিয়েছি। সরকারি ছাড়াও আমি আমার ব্যাক্তিগত ভাবে যখনই শুনেছি কোন অসহায় পরিবারের কথা তখনই তাদের জন্য সহযোগিতা পৌঁছে দিয়েছি। এ ছাড়া প্রশাসন থেকে আমাকে যে সকল দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে আমার এলাকার জন্য আমি প্রতিটি কাজ সঠিকভাবে করার চেষ্টা করেছি। করোনায় মৃত্যুর ভয় না পেয়ে আমি আমার এলাকাবাসীর জন্য কাজ করে গিয়েছি। আমার কাজের কথা বিবেচনা করে এলাকাবাসী যদি আমাকে আবারও ভোটের মাধ্যমে ভালোবাসা দিয়ে পুনরায় নির্বাচিত করে তবে আমার যে অসম্পূর্ণ কাজ রয়ে গেছে তা আমি সম্পূর্ণ করবো।
এদিকে, নির্বাচনকে ঘিরে ইতোমধ্যে মনোনয়ন জমা ও বাচাই পর্ব শেষে সবাই প্রস্তুতি গ্রহন করছেন প্রচার-প্রচারণার। মেয়র, সাধারণ কাউন্সিলর’র পাশাপাশি নির্বাচন মাঠ গুছিয়ে নিচ্ছে মহিলা সংরক্ষিত কাউন্সলির পদপ্রার্থীরা। সবাই এখন নির্বাচন মাঠকে ঘিরে ব্যস্ত সময় পার করছে। আর আগামী ১৪ জানুয়ারী রাঙ্গামাটিতে ইভিএমের মাধ্যমে পৌরসভা নির্বাচনে কে হাসবেন বিজয়ের হাসি দেখার অপেক্ষায় এলাকার মানুষ।