নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং -৪ আসনের এমপি একরামুল করিম চৌধুরীকে দল থেকে বহিস্কার দাবিতে দলীয় নেতাকর্মীদের ডাকা হরতাল অবশেষে স্থগিত করা হয়েছে। শনিবার রাতে সড়ক ও সেতুমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের অনুরোধে ওই হরতাল স্থগিতের ঘোষণা দেন বসুরহাট পৌর মেয়র আবদুল কাদের মির্জা। এরআগে শনিবার সকালে বসুরহাট বঙ্গবন্ধু চত্বরে দলীয় এক সভায় কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দরা আগামীকাল রোববার সকাল ৬টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত হরতালের ডাক দেন। এ সময় বসুরহাট পৌর সভার আলোচিত মেয়র আবদুল কাদের মির্জাসহ দলীয় নেতৃবৃন্দরা বক্তব্য রাখেন। এর আগে শুক্রবার থেকে সেখানে মেয়র আবদুল কাদের মির্জার নেতৃত্বে দলীয় গণঅনশন কর্মসূচীও পালন করা হয়। ওই সভায় মেয়র আবদুল কাদের মির্জা বলেন, নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এমপি একরাম আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে নিয়ে যে কটূক্তি করেছেন- তা ক্ষমার অযোগ্য। আমরা এই ঘটনার তীব্রনিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
মেয়র আবদুল কাদের মির্জা তীব্র কন্ঠে বলেন, তাঁর এই মিথ্যাচারের জবাব জনগণ একদিন দিবেন। তিনি তাঁর বক্তব্যে জাতিকে হতাশ করেছেন। আমি একরামের দুর্নীতি নিয়ে বার বার সোচ্চার হয়েছি। প্রতিবাদ করেছি। ভোটের অধিকার দাবি করেছি। সাদাকে সাদা বলবো; কালোকে কালো বলবো। সাহস নিয়ে চলি। এতে মানুষের ভালবাসাও পেয়েছি। সমর্থনও পাচ্ছি। জেল-জুলুমকে ভয় পাইনা। অন্যায়ের সাথে কখনো আপস করবোনা। নোয়াখালীর মানুষ একরামের দুর্নীতির খবর ভালভাবেই জানেন। ওদিকে সারাদেশের জনপ্রিয় একজন নেতা হচ্ছেন ওবায়দুল কাদের। তাঁকেসহ পরিবারের সবাইকে নিয়ে একরাম জগন্য মিথ্যাচার করেছেন। প্রকৃতপক্ষে তাঁর অপরাধ আড়াল করার জন্য আবোল-তাবোল কত কিছুই বলছেন। যার কোন ভিত্তিই নেই। এজন্য দল থেকে একরামকে দ্রুত বহিস্কার করতে হবে। দলীয় প্রধান জননেত্রী শেখ হাসিনার কাছে আমরা তাঁর বহিস্কার দাবি করছি। অন্যথায় ওই ঘটনার প্রতিবাদে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। পরে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের নেতৃবৃন্দরা এই হরতালের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন। এতে এক সাংবাদিক সম্মেলনে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা খিজির হায়াত খান ও বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু নাছেরসহ অন্যান্য মুক্তিযোদ্ধারা বক্তব্য রাখেন। ওই দলীয় সভায় উপস্থিত ছিলেন-পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. জামাল উদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক আজম পাশা রুমেল, উপজেলা যুবলীগের সভাপতি প্রফেসর গোলাম ছারওয়ার ও সাধারণ সম্পাদক মিন্টুসহ অঙ্গসংগঠনের নেতৃবৃন্দরা।
প্রসঙ্গত, বসুরহাট পৌর মেয়র আবদুল কাদের মির্জা দলীয় একাধিক সভায় এমপি একরামুল করিম চৌধুরীকে দুর্নীতিবাজ হিসেবে আখ্যায়িত করেন। একই সাথে বসুরহাট পৌর নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার জন্য সংশ্লিষ্ট প্রশাসন এবং দলীয় হাইকমান্ডের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন তিনি। এরইমধ্যে গত ১৬ জানুয়ারি বসুরহাট পৌর নির্বাচনে বিপুলভোটে বিজয়ী হন আওয়ামী লীগের দলীয় মেয়র প্রার্থী আবদুল কাদের মির্জা। এরপরেই দলীয় হাইকমান্ডের কাছে তাঁর গ্রহণ যোগ্যতা আরো বেড়ে যায়। পরবতীতে আরো বেশ কয়েকটি সভায় সরকার দলীয় এই এমপি একরামের বিভিন্ন অনিয়ম তুলে ধরেন মেয়র আবদুল কাদের মির্জা। একইভাবে উপজেলার প্রত্যেক ইউনিয়নে শান্তিপুর্ণ এবং গ্রহণযোগ্য চেয়ারম্যান প্রার্থী উপহার দেওয়ার ঘোষণা দেন তিনি। এতে অনেকেই তাঁর সাম্প্রতিক কর্মকান্ডের ওপর সন্তোষ প্রকাশ করেন। অনুপ্রেরণাও দিতে থাকেন। যেসব খবর ইতোমধ্যে বহু গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলে সারা দেশেই তোলপাড় শুরু হয়। তবে এতে তেলে-বেগুণে জ¦লে উঠেন এমপি একরাম। একপর্যায়ে ২১জুন রাতে নিজের ফেইসবুকে একটি ভিডিও আপলোড করেন এমপি একরাম। সেখানে তিনি দলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে ‘রাজাকারের সন্তান’ বলে অপবাদ দেন। যা মুহুর্তেই বিভিন্ন সামাজিক ও গণমাধ্যমে ভাইরাল হয়ে পড়ে। আর এই খবর দ্রুত কোম্পানীগঞ্জে ছড়িয়ে পড়লে দলীয় নেতৃবৃন্দরা দফায় দফায় বসুরহাটে বিক্ষোভ মিছিল এবং এমপি একরামের কুশপুত্তলিকা দাহ করে তার কঠোর বিচার দাবি করেন।