ভোজ্য তেলের দাম এখনও নির্ধারণ করা হয়নি বলে জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। তিনি জানিয়েছেন, আন্তর্জাতিক বাজার দরের সঙ্গে সমন্বয় করে দেশীয় বাজারে ভোজ্য তেলের দাম ঠিক করা হবে। এজন্য ট্যারিফ কমিশনের নেতৃত্বে ব্যবসয়ীদের সঙ্গে নিয়ে একটি কমিটি করা হয়েছে। কমিটি অবিলম্বে একটি প্রতিবেদন দেবে। রোববার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আন্তঃমন্ত্রণালয়ের বৈঠক শেষে তিনি সাংবাদিকদের একথা বলেন। ভোজ্য তেলের উর্ধ্বমূল্য বিষয়ে এ বৈঠক হয়। এ সময় বাণিজ্য সচিব ড. জাফর উদ্দিনসহ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা ও ব্যবসায়ীরা উপস্থিত ছিলেন। টিপু মুনশি জানান, তেল আমদানিতে সরকারের রাজস্ব না কমিয়ে চার স্থানের ডিউটির পরিবর্তে এক স্থানে নেয়ার জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে আবার চিঠি দেবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ভোজ্যতেল নিয়ে সারাদেশে ক্রাইসিস তৈরি হয়েছে। আমাদের তেলের বাজার ৯০ শতাংশ আন্তর্জাতিক বাজারের ওপর নির্ভর করে। যখন সেখানে দাম বাড়ে তখন দেশের বাজারেও তার প্রভাব পড়ে। ছয় মাস আগে ৭০০ ডলারের তেল বর্তমানে ১১৫০ ডলারে দাঁড়িয়েছে। এতে দেখা যায়, ৭৫ শতাংশ দাম বেড়েছে। আমাদের দেশে কিন্তু এত বাড়েনি। এটাকে কিভাবে সমন্বয় করা যায়, সেজন্য দাম নির্ধারণের যে কমিটি আছে তাদেরকে বলা হয়েছে তারা চুলচেরা বিশ্লেষণ করে একটা মানসম্মত দামের তালিকা করে দেবে। কারণ আজকে যে দাম নির্ধারণ করে দেবো দুইদিন পর সে দাম কমে গেলে তখন আবার সবাই লেখালেখি করবে। সেজন্য প্রতিমাসে একটি সভা করে একটি যৌক্তিক মূল্য নির্ধারণের আইডিয়া দেবে আমরা সেটা নিয়ে কাজ করছি। তবে এই বিষয়টি সহজ নয়। ব্যবসায়ীদের দাবি অনুযায়ী ভোজ্যতেলে ডিউটি চার স্থানের পরিবর্তে এক স্থানে আনার প্রস্তাবের বিষয়ে জানতে চাইলে টিপু মুনশি বলেন, সবচেয়ে বড় বিষয় হলো ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে দাবি তোলা হয়েছে ভোজ্যতেলে তিন বা চার স্তরে যে ডিউটি, ভ্যাট, ট্যাক্স নেয়া হয় সেটা সরকারের রাজস্ব না কমিয়ে এক জায়গা থেকে নেয়ার ব্যবস্থা করা। এতে করে ব্যবসায়ীদের সময় বাঁচবে, হয়রানি কমবে। পাশাপাশি সরকারেরও রাজস্ব কমবে না। ভোজ্যতেলে আগে ১৫ শতাংশ ডিউটি নেয়া হতো একটা স্থানে। এখন চার জায়গায়। ব্যবসায়ীরা চাচ্ছে সরকারের রাজস্ব না কমিয়ে সেটা আবার এক জায়গায় নিয়ে আসতে। তিনি বলেন, সে বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য আমরা আগেই এনবিআরকে চিঠি দিয়েছি। কিন্তু কোনো সাড়া পাইনি। আজকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, আমরা আবার চিঠি দেবো। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে মনে করে এটা এক জায়গায় হওয়া উচিত। সেটা করার জন্য আমরা আরও তৎপর হবো। মধ্যসত্বভোগীদের দৌড়াত্ব কমানোর জন্য ব্যবসায়ীদের অনুরোধ করা হয়েছে জানিয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, পণ্যের হাত বদলের কারণে যেন বাজারে প্রভাব না পড়ে। বিশেষ করে, খোলা তেলের বিষয়ে। আমাদের বাজারে ৭০ থেকে ৭২ শতাংশ খোলা তেল, বাকিটা বোতলজাত তেল। আরও বেশি বোতলজাত করা গেলে দামের হেরফের কম হবে। উৎপাদন পর্যায়ে ২ শতাংশ, তারপরের ধাপে ৩ শতাংশ এবং খুচরা পর্যায়ে ৭ শতাংশ লভ্যাংশের কথা আগে থেকেই ঠিক করা আছে। সেটা যদি তারা পায় তাহলে তাদের আপত্তি নেই। কমিটি বসে ঠিক করে দেবে। বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, শুধু দামের জন্য না, কোয়ালিটির জন্যও বোতলজাত হওয়া জরুরি। শিল্প মন্ত্রণালয় এ ব্যাপারে চেষ্টা করছে। এক থেকে দেড় বছরের মধ্যে এটা একটা পর্যায়ে নিয়ে আসা হবে। ৭০ শতাংশ যেন বোতলজাত করা যায়। নকল মাল থেকেও মানুষ রেহাই পাবে। এ ছাড়া বোতলের গায়ে দাম লেখা থাকে তাই হাত বদলের ফলে দাম বৃদ্ধির সুযোগ কম থাকে। এতে করে সুযোগ সন্ধানী ব্যবসায়ীদের সরিয়ে রাখা যাবে। তবে সুযোগ সন্ধানীদের তো আর একদিনে বন্ধ করা যাবে না। একটু সময় লাগবে। ব্যবসায়ীরাও কথা দিয়েছে তারা সক্রিয়ভাবে কাজ করবে। আমরা দাম বাড়াটা মেনে নেবো। কিন্তু সেটা মধ্যস্বত্বভোগীদের একটা প্রফিট দিয়ে নয়। সেজন্যেই কাজ করতে হবে। আইন কার্যকর নেই। ভবিষ্যৎ মিটিংগুলোতে তাদের দৌরাত্ম কমাতে চেষ্টা করা হচ্ছে। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম সাতদিন পরে কমে গেছে। এজন্য প্রতিনিয়ত ফলোআপ রাখতে হবে। আর একটা বিষয় আজকে যে পণ্যটা বুক করেন সেটা আমাদের দেশে আসতে তিন মাস লাগে। আজকের আমাদের বাজারে কী দাম, সেখানে কী দাম সেটার একটা প্রভাবে বাজারে পড়ে। এসব বিষয়ে নজর রাখার জন্য আমাদের কমিটি, ট্যারিফ কমিশন, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদের নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ করে একটা পথ বের করবো। টিপু মুনশি বলেন, একইসঙ্গে রমজান মাসকে সামনে রেখে শুধু তেল বলে নয় সব পণ্য নিয়ে চিন্তা করছি। প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, রমজানে যাতে মানুষের কষ্ট না হয়। রমজানে যাতে মানুষ সাশ্রয়ী দামে পণ্য পায় সে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। বর্তমানের দেশের বাজারের সঙ্গে আন্তর্জাতিক বাজারের সমন্বয়টা আছে কিনা? বাজারের এখনকার মূল্য যৌক্তিক মূল্য কিনা জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, গত বছরের জুলাই মাসের ১ তারিখে দাম ছিল ৭০০ ডলার। চলতি ২০ জানুয়ারি ১১৫০ ডলার। ৭০০ হলে দেশে কী হবে আর ১১০০ হলে কী হবে এগুলো চুলচেরা বিশ্লেষণের জন্য এই কমিটিটা করে দিয়েছি আমরা। ৭০ শতাংশ হয়তো বাড়বে না। কারণ শুধু তেলের দাম বেড়েছে। অন্যান্য খরচ বাড়েনি। সেইসব বিশ্লেষণের জন্যই কমিটি করে দেয়া হয়েছে। সেই বিশ্লেষণ এক ঘণ্টায় করা সম্ভব না। আজকের মিটিংয়ের ফলাফল কী হলো জানতে চাইলে টিপু মুনশি বলেন, রেজাল্টটা হলো এই যে, আমরা শিগগির ট্যারিফ কমিশন, ব্যবসায়ীদের নিয়ে এই পথ বের করবো যে কী দাম থাকলে সেটা যৌক্তিক হয়। আজকে আন্তর্জাতিক বাজারের মূল্য ১২০০ ডলার ধরে আমরা ঠিক করে দিলাম যে এই দামে তেল বিক্রি হবে। কিন্তু কালকে আবার ১২০০ ডলার ৭০০ তে নেমে আসলো। আবার সারাদেশে জুড়ে শুরু হয়ে যাবে কথাবার্তা। তাই কথাটা হচ্ছে- কোনো দাম ঠিক করাটা খুব কঠিন। কারণ, আমদানিনির্ভর পণ্য। তবে একটা উপায় বের করতে হবে।