সন্দ্বীপে ঠিকানা জালিয়াতি করে তিন লক্ষ টাকা ঘুষের বিনিময়ে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষিকা নিয়োগের ঘটনায় তোলপাড় শুরু হয়েছে। নিয়োগকৃত ওই শিক্ষিকা হচ্ছেন জান্নাতুর নুর। আর এই চাঞ্চল্যকর ঘটনাটি ঘটেছে চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ উপজেলার উত্তর কালাপানিয়া দ্বীপবন্ধু মোস্তাফিজুর রহমান সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। বিষয়টি সাম্প্রতিক সময়ে এলাকায় জানাজানি হয়। বর্তমানে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মাঈন উদ্দিন অভিযুক্ত শিক্ষিকা জান্নাতুর নুরের সরকারি এই চাকুরী রক্ষার জন্য ওপরের মহলে দৌড়ঝাঁপ করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এই বিষয়ে স্থানীয় লোকজন গণমাধ্যম কর্মীসহ প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করে ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত এবং দোষীদের শাস্তি দাবি করেছেন।
স্থানীয় এলাকাবাসী জানায়, অভিযুক্ত শিক্ষিকা জান্নাতুর নুর, পিতা: আবু তাহের, মাতা: মোমেনা বেগম; সন্দ্বীপে স্থায়ী ঠিকানা দেখিয়েছেন- জমির ভূঁইয়াবাড়ী, কালাপানিয়া, সন্দ্বীপ। প্রকৃতপক্ষে জমির ভূঁইয়া বাড়ীতে তাদের কখনো বসবাস ছিলনা। তাদেরকে এলাকায় কেউ চিনতেও পারছেন না। খোঁজ নিয়ে জানাগেছে ওই শিক্ষিকার আসল বাড়ী চাঁদপুরে। তিনি সরকারি চাকুরীতে যোগদানের আগেও চট্টগ্রামের হালিশহর বিহারী কবরস্থানের কাছে খাল পাড়ে আয়েশা ভবনে থাকতেন। শুধুমাত্র প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সরকারি চাকুরীতে উপজেলা পর্যায়ে কৌটা ভিত্তিক নিয়োগ পাওয়ার জন্য অভিযুক্ত শিক্ষিকা স্থায়ী ঠিকানা জাল জালিয়াতি করেছেন। এজন্য সন্দ্বীপ উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মাঈন উদ্দিন এবং জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা শহিদুল ইসলামকে তিন লক্ষ টাকা ঘুষ দিয়ে এই চাকুরী ভাগিয়ে নিয়েছেন এই শিক্ষিকা। শিক্ষক নেতা রতন মানিক বসুর মাধ্যমে এই ঘুষের টাকা লেনদেন হয়েছে বলে এলাকায় জোরালো গুঞ্জন রয়েছে।
স্থানীয় লোকজনের মধ্যে অনেকেই জানান, সুচতুর শিক্ষিকা জান্নাতুর নুর বিগত ০৪/০৮/২০১১ইং স্থায়ী ঠিকানার ক্ষেত্রে মিথ্যা তথ্য দিয়ে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষিকা পদে আবেদন করেন। এরপর গত ১৬/০২/২০১৭ইং তারিখে ওই বিদ্যালয়ে শিক্ষিকা হিসেবে যোগদানও করেন তিনি। শিক্ষিকার স্বামী ১৬/০৪/২০২০ইং তাঁর ফেইসবুকে ঘুষ লেনদেনের তথ্যটি প্রকাশ করেন। এতে সবাই হতবাক হয়ে যান। এরপর ঘটনাটি জানাজানি হয়। কিন্তু ঝামেলার কারণে কেউ তখন মুখ খোলেননি। উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মাঈন উদ্দিন জৈষ্ঠতা লঙ্গন করে তড়িঘড়ি করে ২০১৯সালে ডিপিএড ট্রেনিংয়েও পাঠান অভিযুক্ত শিক্ষিকাকে। এরপর স্কুলের প্রধান শিক্ষককে দিয়ে শিক্ষিকার এসিআর রিপোর্ট সম্পন্ন করে তাকে স্থায়ী নিয়োগ দিতে রীতিমত আদাজল খেয়ে মাঠে নেমেছেন ওই উপজেলা শিক্ষা অফিসার। শিক্ষিকার জাতীয় পরিচয়পত্রে স্থায়ী ঠিকানার তথ্যও সঠিক নয় বলে উপজেলার অন্যান্য শিক্ষকরা সাংবাদিকদের জানিয়েছেন। শিক্ষিকা জান্নাতুর নুর চাকুরীটি ধরে রাখার জন্য প্রশাসনের ওপরের মহলের নানা জায়গায় তদবির করছেন। বিষয়টি সাম্প্রতিক সময়ে এলাকায় জানাজানি হলে তোলপাড় শুরু হয়। সবার প্রশ্ন কিভাবে এই ধরণের প্রতারনা করে শিক্ষিকা চাকুরী নিয়েছেন? সরকারি চাকুরীতে পুলিশি প্রতিবেদনে এই জালিয়াতি ধরা পড়ার কথা। নাকি পুলিশি প্রতিবেদন ছাড়াই এই চাকুরী স্থায়ী হয়ে যাচ্ছে; এমন প্রশ্ন করেন কেউ কেউ। ওদিকে সন্দ্বীপের অনেকেই মনে করেন শিক্ষিকা জান্নাতুর নুরের এই ধরণের ঠিকানা জালিয়াতি করে চাকুরী নেওয়ার ফলে সন্দ্বীপের একজন যোগ্য নাগরিক কোটা ভিত্তিক নিয়োগ থেকে বঞ্চিত হয়েছেন।
সচেতন মহল মনে করেন-শিক্ষিকার স্থায়ী ঠিকানা প্রমাণের জন্য তাঁর পিতা-মাতার বিয়ের কাবিন খোঁজ করা উচিত। এছাড়াও শিক্ষিকার চাকুরীতে স্থায়ী ঠিকানা মতে, তাঁর পিতা-মাতা এবং পূর্ব পুরুষদের সন্দ্বীপে সম্পত্তির দলিল/খতিয়ানের বিষয়েও খবর নিলে সকল তথ্য বের হয়ে আসবে। স্থানীয় এলাকাবাসী প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে ওই শিক্ষিকার জাল জালিয়াতির বিষয়ে লিখিত অভিযোগ করেছেন। গতকাল চট্টগ্রাম জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা শহিদুল ইসলামকে বার বার মোবাইলে কল করলেও তিনি রিসিভ করেননি। তবে সন্দ্বীপ উপজেলা শিক্ষা অভিসার মাঈন উদ্দিন বলেন, বিষয়টি দুদক কর্মকর্তারা তদন্ত করছেন। তবে তিনি ঘুষ লেনদেনের বিষয়ে প্রশ্ন করলে এড়িয়ে যান। বিস্তারিত এখন জানাতে পারবেন না বলে এই প্রতিনিধিকে জানিয়েছেন।