খুলনার পাইকগাছা পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে লড়াই হবে আওয়ামী লীগ ও সিপিবি মনোনিত প্রার্থীর মধ্যে। পৌরসভা গঠনের পর এই প্রথম বিএনপি ছাড়াই ৫ম পৌরসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে ৩০ জানুয়ারি শনিবার। ইতোমধ্যে ৩ ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে বাড়তি নিরাপত্তাসহ সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচান অনুষ্ঠানের লক্ষে সব ধরনের ব্যবস্তা করেছে নির্বাচন কমিশন। শুক্রবার মধ্যরাত থেকে নির্বাচনের সব ধরনের প্রচার-প্রচারনা ও নির্বাচনী এলাকায় মোটরসাইেকল চলাচলের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। শুক্রবার মধ্যরাত থেকে নির্বাচনের দিন শনিবার মধ্যরাত পর্যন্ত পৌরসভা অভ্যন্তরে সকল প্রকারের ইঞ্জিন চালিত যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকবে। নির্বাচনে ৯ কেন্দ্রের মধ্যে ৩, ৬ ও ৯ নং ওয়ার্ডের কেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে প্রশাসন। তবে নির্বাচেন যেকোনো ধরনের অপ্রীতকর ঘটনার আশংকার কথা উড়িয়ে দিয়ে উপেজলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবিএম খালিদ হোসেন সিদ্দিকী জানিয়েছেন, নির্বাচন অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে। নির্বাচনে মেয়র পদে তিনজন প্রার্থী মনোনয়ন পত্র জমা দিলেও প্রত্যাহারের শেষ দিন বিএনপি মনোনীত প্রার্থী শারীরিক অসুস্থতা দেখিয়ে মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নেন। নির্বাচনে ৯ ভোট কেন্দ্রের মধ্যে প্রশাসনের পক্ষে ৩নং ওয়ার্ডের সরল দীঘীরপাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৬নং ওয়ার্ডের পাইকগাছা সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয় ও ৯নং ওয়ার্ডের শিববাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে ঝুঁিকপূর্ণ কেন্দ্র হিসিবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
মেয়র প্রার্থী আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী বর্তমান মেয়র সেলিম জাহাঙ্গীর জানান, তিনি এবারও নির্বাচিত হলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখবেন। পাশাপাশি পৌরসভাকে মডেল পৌরসভায় রূপান্তর করবেন। এ ছাড়া সুপেয় পানি ও জলাবদ্ধতা নিরসনসহ এলাকার রাস্তা-ঘাটের ব্যাপক উন্নয়নও করা হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে মানুষ তাকেই টানা তৃতীয়বারের মত ভোট দিয়ে বিজয়ী করবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। অপর প্রতিদ্বন্দ্বী সিপিবি মনোনীত কাস্তে প্রতীকের প্রার্থী অ্যাড. প্রশান্ত কুমার মন্ডল জানিয়েছেন, তিনি নির্বাচিত হলে দুর্নীতি, লুটপাট মুক্ত ও পরিবেশ বান্ধব সকলের বাসযোগ্য পৌরসভা গড়ার লক্ষে কাজ করবেন। নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষতা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে তিনি বলেন, নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে জয়ের ব্যাপারে তিনি আশাবাদী। এদিকে নাম প্রকাশে অনেক ভোটাররা জানিয়েছেন, তারা প্রার্থীদের প্রতিশ্রুতিতে বিশ্বাসী নন। যিনি সৎ, যোগ্য, এলাকার উন্নয়ন করতে পারবেন এবং যে প্রার্থী মানুষের বিপদে-আপদে তাদের পাশে থাকবেন এমন প্রার্থীকে তারা নির্বাচিত করবেন। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও পাইকগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবিএম খালিদ হোসেন সিদ্দিকী জানান, আইন-শৃঙ্খলার অবস্থা খুবই ভালো রয়েছে। বৃহস্পতিবার থেকে পৌরসভা অভ্যন্তরে এক প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন আছে। এ ছাড়া ৯ জন ম্যাজিস্ট্রেট ও ভোটের দিন র্যাবের ২টি টিম নির্বাচনে আইন-শৃঙ্খলার দায়িত্বে নিয়োজিত থাকবে প্রতিটি কেন্দ্রে পর্যাপ্ত পরিমাণে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্যরা দায়িত্ব পালন করবেন। নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষতা প্রসঙ্গে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও খুলনা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হেলাল হোসেন এর উদ্ধৃতি দিয়ে জানান, নির্বাচন শতভাগ নিরপেক্ষ হবে। যদি কোনো প্রার্থী ভাবেন, যে তিনি ভোট কেটে কিংবা অন্য কোনো উপায়ে বিজয়ী হবেন, তাহলে সেই প্রার্থী তার সেই আশা ভুলে যান। ভোটাররা যাকে বেশী ভোট দিবে সেই প্রার্থীয় বিজয়ী হবেন। কেউ নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গ করার চেষ্টাই করবেন না। যদি কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গ করার কিংবা ভোটের দিন নির্বাচনে কোনো প্রভাব খাটিয়ে নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চান তাহলে তার বিরুদ্ধে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ও উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা কামাল উদ্দিন আহম্মেদ জানান, নির্বাচনের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডে ৯টি ভোট কেন্দ্রে মোট ভোটার সংখ্যা ১৪ হাজার ৪শ’ ৩১ জন। পুরুষ ৭ হাজার ৭৩ জন ও মহিলা ভোটার ৭ হাজার ৩ শত ৫৮ জন। থানার কর্মকর্তা ইনচার্জ মোঃ এজাজ শফী জানান, পুলিশ ভোট পূর্ববর্তী ওয়ার্ড ভিত্তিক দৈনন্দিন রুটিন ওয়ার্ক করছে। এ দিকে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (দক্ষিণ) জিএম আবুল কালাম আজাদ বলেছেন ৩০ জানুয়ারি শনিবার অনুষ্ঠিতব্য পৌর নির্বাচনে আচরণবিধি লঙ্ঘন ও দায়িত্ব-কর্তব্যে অবহেলা করলেও তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। শুক্রবার দুপুরে পাইকগাছা থানা বঙ্গবন্ধু চত্বরে আয়োজিত নির্বাচনী ব্রিফিং সভায় দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ সদস্য ও কর্মকর্তাদের উদেশ্যে এ কথা বলেন। ব্রিফিং কালে উপস্থিত ছিলেন পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডি) সার্কেল মোঃ হুমায়ুন কবির, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এ) সার্কেল এসএম রাজু আহম্মেদ, ওসি মো. এজাজ শফী ও ইন্সপেক্টর (তদন্ত) আশরাফুল আলম।