দিনাজপুরের চিরিরবন্দরে করোনা কালীন সময়ে উদ্বেগজনক হারে বাল্যবিবাহ সংঘটিত হচ্ছে। প্রশাসনের তেমন নজরদারি না থাকায় উপজেলায় অন্তত ৫ শতাধিক বাল্যবিবাহ হয়েছে। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সুত্রে এ তথ্য জানা গেছে। শুধুমাত্র বেলতলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের অন্তত ২০ জনের অধিক ছাত্রীর বিবাহ হয়েছে। বিভিন্ন সরকারী দপ্তর ও এনজিও সুত্রে জানা গেছে ,অসচেতনতা অশিক্ষিত দারিদ্র, কুসংস্কার, সামাজিক সুনাম ক্ষুন্ন, নিরাপদ বাসস্থান ও পরিবেশ এবং অস্বচছলতার কারণে গ্রামসহ মফস্বল শহর এলাকায় ১৩ থেকে ১৭ বছর বয়সের শিশু কিশোরীরা বাল্য বিবাহের শিকার হচেছ। আইন থাকলেও প্রয়োগে ঘাটতি থাকায় এসব শিশু কিশোরীদের জোর করে বিয়েতে রাজী করে বিয়ে দেয়া হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে প্রশাসনের নিষেধ সত্ত্বেও স্থানীয় বাজনৈতিক ও প্রভাবশালীদের পরামর্শে ও সাহসে অন্যত্র নিয়ে গিয়ে রাতের আঁধারে গোপনে আরবি জানা লোকদের দিয়ে বিয়ে পড়ানো হচ্ছে। বয়স কম হওয়ায় কাজীরা বিয়ে রেজিষ্ট্রেশন না করায় ঐ কিশোরীটি আরও বেশি ঝুঁকির মধ্যে পড়ছে। নতুন পরিবেশে খাপ খাওয়াইতে না পারায় কিছুদিন যেতে না যেতেই মানসিক নির্যাতন, শারীরিক নির্যাতন, যৌন নির্যাতন, যৌতুকের চাপের ফলে ছাড়াছড়ি হয়ে যাচ্ছে প্রায় বিয়ে। অনেক ক্ষেত্রে ১টি সন্তান হওয়ার পর শরীর স্বাস্থ্য ভেংগে যাওয়ার স্বামীর বাড়ি থেকে বিতাড়িত হচ্ছে। সামাজিক সুনাম নষ্টের ভয়ে অনেকেই নির্যাতনের কথা গোপন রাখছে। বাল্যবিবাহ ও পারিবারিক সহিংসতা বন্ধে সুনিদ্রিষ্ট আইনি-বিধান থাকলেও অসচেতনতা, মামলার দীর্ঘসুত্রিতা, দোষী ব্যক্তির লঘু শাস্তি, আশ্রয়/ নিরাপদ বাসস্থানের অভাব, প্রাতিষ্ঠানিক অসহযোগিতা থাকায় মামলা নিতে টাকার চাপ, মামলার তদন্ত খরচ মেটানো, ঠিকমত বিচার না পেয়ে হতাশ হয়ে ভাগ্যের উপর ছেড়ে দিচ্ছে।
পারিবরিক সহিংসতা প্রতিরোধ, বাল্যবিবাহ, যৌতুক প্রতিরোধ, যৌন হয়রানী, ধর্ষণ, ধর্ষণসহ হত্যা, জখম, অপহরণ ও উক্ত্যক্তকরন বন্ধে বিভিন্ন সরকারী দপ্তর, এনজিও সংস্থা, বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতি, প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ, দি হাঙ্গার প্রজেক্ট, বহুব্রীহি, এসইউপিকে, পল্লীশ্রী, উদ্দ্যোগ, বেলতলী সংগীত একাডেমি ও বেলতলী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়সহ বিভিন্ন সংগঠন উঠান বৈঠক, র্যালী, মানববন্ধন, পথ নাটক, মঞ্চনাটক, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, জারি গান, সেমিনার, আলোচনা ও মতবিনিময় সভা, প্রশিক্ষন কর্মশালা, বিতর্ক প্রতিযোগিতা, মা সমাবেশ, ভিডিত্ত প্রদর্শন, গোলটেবিল বৈঠক, ক্রীড়া প্রতিযোগিতা, চিত্রাংকন প্রতিযোগিতা, সংবাদ সম্মেলন করে জনগনের সচেতন করে তুলতে চেষ্টা করলেও দারিদ্রতা, অশিক্ষা, মোবাইলের অপ-ব্যবহার, বাল্যপ্রেমে জড়িয়ে পড়া, পিতা-মাতার বোঝা মনে করা, পরিক্ষায় ফেল করা, অনৈতিক সম্পর্ক ও কুসংস্কারের কারণে বাল্যবিবাহ কৌশল পাল্টে হচ্ছেই এবং নির্যাতন বন্ধ হচ্ছে না। করোনা কালীন সময়ে সকল ধরনের সচেতনতামূলক কার্যক্রম বন্ধ থাকায় ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ থাকায় বাল্যবিবাহের হিড়িক পড়েছে। এ অবস্থা থেকে উত্তোরণের জন্য দ্রুত প্রশাসনের কঠোর ভূমিকা প্রয়োজন।
এটি প্রতিরোধ করতে চাই সমন্বিত উদ্দ্যোগ, সচেতনতার পাশাপাশি নৈতিক শিক্ষা, আইনের কঠোরতম প্রয়োগ, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকপাঠ্যবইয়ে অধ্যায় অর্ন্তভূক্ত, কুফল সম্পর্কে ব্যাপক প্রচারনা, পারিবারিক বন্ধনে বিশ্বাস, শ্রদ্ধাবোধ, আদব-কায়দা, নৈতিক শিক্ষা, সমালোচনা না করা, শিশুদের সামনে সহিংসতা এড়িয়ে যাওয়া ও গণ-মাধ্যমের দায়িত্বশীল ভূমিকা।