আমতলীতে দুই সন্তানের জননী রাবেয়াকে (২৪) যৌতুকের জন্য পিটিয়ে হত্যা করে তার ভাইকে লাশ নিয়ে যাওয়ার জন্য ঘাতক স্বামী দেয়ায় আমতলীতে ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। সোমবার সকাল ৮ টায় এ ঘটনা ঘটেছে আমতলী পৌর শহরের ১ নং ওয়ার্ডের সিকদার বাড়ী সড়কের নিজ বাড়িতে। শিশু কন্যার সামনেই স্ত্রীকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করে ঘাতক স্বামী মো. অলি উল্লাহ হাওলাদার।
জানা গেছে, ২০০৮ সালে উপজেলার গুলিশাখালী ইউনিয়নের ডালাচারা গ্রামের আবদুস ছত্তার হাওলাদারের ছেলে মো. অলি উল্লাহ সাথে চাওড়া ইউনিয়নের চন্দ্রা গ্রামের আবদুল আজিজ মোল্লার কন্যা রায়েরা আক্তারের বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকেই রাবেয়াকে যৌতুকের জন্য বিভিন্ন সময়ে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করে আসছে স্বামী অলি উল্লাহ। এ নিয়ে একাবিকবার মামলা ও সালিশ বৈঠক হয়। সন্তানের দিকে তাকিয়ে রাবেয়া সবকিছু সহ্য করে স্বামীর সংসার করে আসছিল। কিন্তু গত কয়েক দিন ধরে স্ত্রীকে ২ লক্ষ টাকা যৌতাক দাবী করতে থাকে। ঘটনার দিন সকালে রাবেয়া যৌতুক প্রদানে অস্বীকৃতি জানালে অলিউল্লাহর মায়ের প্ররোচনায় লোহার রড ও ইট দিয়ে রাবেয়াকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হতা করে। এ সময় সন্তানদের ডাক চিৎকারে প্রতিবেশীরা এগিয়ে এসে ঘাতক স্বামী অলি উল্লাহকে আটকে রাখে এবং পুলিশকে সংবাদ দেয়। পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে লাশ উদ্ধার করে এবং ঘাতক স্বামী অীলউল্লাহকে আটক করে। ঘাতক স্বামী নিহত রাবেয়ার ভাইকে হত্যার পর মোবাইল ফোনে তার বোনের লাশ নিয়ে যাওয়ার জন্য বলে। ঘাতক স্বামী অলি উল্লাহ একটি বে-সরকারী সংস্থায় বরগুনার পুরাকাটা শাখার ম্যানেজার পদে কর্মরত ছিল। তাদের এক কন্যা সানজিদা (১০) ও পুত্র সাজিদ (৫) রয়েছে।
এ ঘটনায় নিহতের ভাই মো. বশির উদ্দিন বাদী হয়ে সোমবার বিকা ৪টায় আমতলী থানায় ঘাতক স্বামী অলি উল্লাহ ও তার মা রাবেয়া বেগমকে (৫৮) আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছে। পুলিশ মরদেহ ময়না তদন্তের জন্য বরগুনার মর্গে প্রেরণ করে।
কয়েকজন প্রতিবেশী বলেন, দীর্ঘদিন ধরেই অলি উল্লাহ ও তার মা রাবেয়া বেগম পুত্রবধু রাবেয়াকে নির্যাতন করে আসছে। এ নিয়ে কয়েক দফায় সালিশ বৈঠকও হয়েছে। তারা আরো বলেন, প্রায়ই স্বামী অলি উল্লাহ স্ত্রীকে মারধর করতো।
নিহতের শিশু কন্যা সানজিদা (১০) জানায়, বাবার অত্যাচারে মা সকালের খাবার খেতে পারেনি। বাবা দাদীর সহযোগিতায় মাকে রড দিয়ে পিটিয়ে মেরে ফেলছে। সানজিদা চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্রী।
নিহত রাবেয়া আক্তারের ভাই একটি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. বশির উদ্দিন বলেন, সকাল সাড়ে নয়টার দিকে আমার বোনের স্বামী ঘাতক অলি উল্লাহ আমাকে মুঠোফোনে বলেন, তোর বোনকে আমি পিটিয়ে হত্যা করেছি। তুই এসে তোর বোনের লাশ নিয়ে যা।
আমতলী থানার ওসি মো. শাহ আলম হাওলাদার বলেন, ঘাতক স্বামী অলি উল্লাহকে গ্রেফতার করা হয়েছে। নিহতের মরদেহ ময়না তদন্তের জন্য বরগুনা মর্গে প্রেরন করা হয়। তিনি আরো বলেন, অন্য আসামীকে দ্রুত গ্রেফতার করা হবে।