মহান স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের সময় কুখ্যাত রাজাকার নামটি যেমন সকলের নিকট পরিচিত তেমনি জোর জবরদস্তি করে মানুষের গরু, খাসী, মুরগী খাওয়া, লুটতরাজ ও দজ্জাল হানাদার বাহিনীর তোয়াজ, তাবেদারি, চামচা, চাটুকারিতা ও নির্লজ্জ বেহায়া দালাল হিসেবে সমধিক আখ্যায়িত। রাজাকারের নাম শুনলে এখনও অনেকেই আতংকিত ও শিহড়িয়ে ওঠে। হানাদারদের নির্লজ্জ বেহায়া দালাল হিসেবে এমন কোনো গর্হিত কাজ নেই যা রাজাকাররা করেনি। হরহামেশা বাড়ী ঘরে আগুন, লুটতরাজ ও মা বোনদের ওপর নির্যাতন থেকে শুরু করে সব কিছু করেছে ওই কুলাঙ্গার দালাল রাজাকাররা। যারা আজও দেশের মানুষের কাছে শৃগাল, কুকুর ও শকুরের চেয়ে আরও নিকৃষ্ট, নৃশংস, দানব ও হায়েনা হিসেবে আখ্যায়িত ও পরিচিত।
রাজাকাররা অহরহ মানুষের গরু, খাসী, মুরগী ধরে এনে খেত এবং অহরহ পাক হানাদার বাহিনীর ক্যাম্পে লুট করা গরু, খাসী ও মুরগীর রান্না করা খাবার সরবাহ করে যারপরনাই মারহাবা কুড়াত। আর যে দিন মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযোদ্ধাদের পিতামাতা, ভাইবোন, সন্তান ও সন্ততি ও আত্মীয়-স্বজনকে ধরে এনে নিশ্চিত মৃত্যুর দিকে হানাদারদের ক্যাম্পে সোপর্দ করতো, সেদিন তাদের অনাবিল আনন্দ উল্লাসের অন্ত থাকত না। একবার কিশোরগঞ্জের প্যারাভাঙ্গা থেকে যুদ্ধরত বীর মুক্তিযোদ্ধা খাইরুলকে আহত অবস্থায় রাজাকাররা ধরে আনে। তারপর রিক্সা দিয়ে কিশোরগঞ্জ শহর ঘুরিয়ে কিশোরগঞ্জ রেল স্টেশন সংলগ্ন জেলা পরিষদের ডাক বাংলোয় হানাদার বাহিনীর ক্যাম্পে নিয়ে যায়। সেখানে হানাদার বাহিনী ও রাজাকাররা নির্মম নিষ্ঠুরভাবে আহত বীর মুক্তিযোদ্ধা খায়রুলকে নির্মমভাবে নির্যাতন করে হত্যা করে থাকে। জানা যায়, সেই সময় খায়রুল সামান্য পানির জন্য হাহাকার করলে রাজাকাররা তার মুখে প্রশ্রাব করে দেয়। এমনিভাবে কুলাঙ্গার ও দালাল রাজাকারদের অজ¯্র নিগ্রহ ও বেদনা বিদূর দৃশ্যপটের যেন শেষ নেই। এছাড়া মুক্তিযোদ্ধা খায়রুলকে যে রিকসা দিয়ে শহর ঘুরিয়েছিল সেই রিকসার ড্রাইভারকে হত্যা করতেও রাজাকাররা কুন্ঠাবোধ করেনি।
মুক্তিযুদ্ধের সময় রাজাকাররা পাকুন্দিয়া দাতব্য চিকিৎসালয়ের এমবিবিএস ডাক্তার সুধাংশু রায়সহ তার স্ত্রী, পুত্র, কন্যাসহ অন্যান্যদের ধরে এনে প্রথমে তাদের ক্যাম্পে ও পরে পাকবাহিনীর ক্যাম্পে নিয়ে যায়, সেখানে তাদেরকে দুইদিন অবর্ননীয় নির্যাতন করে এবং যুবতী মেয়েদেরকে নারী নির্যাতন করে পরিশেষে হানাদার বাহিনী ও রাজাকাররা তাদেরকে শহর সংলগ্ন মনিপুরঘাট ব্রীজে নিয়ে হত্যা করে লাশ নরসুন্দা নদীতে ভাসিয়ে দেয়। এই কুখ্যাত রাজাকাররা হানাদারদের সহায়ক ও দালাল হিসেবে যা করেছে তা দুকথা লেখে শেষ করার মতো নহে। রাজাকারদের বর্বরতা, অত্যাচার, নির্যাতন ও রক্তগঙ্গা এক বিষাদের দলিল ও ইতিহাস। হানাদার বাহিনী গ্রামগঞ্জের রাস্তাঘাট চিনতনা। ওরাই হানাদার বাহিনীকে সবকিছু চিনিয়েছে। হানাদার বাহিনী যখন দেশের বিভিন্ন শহর, বন্দরসহ বিভিন্ন স্থানে ক্যাম্প করে নিরীহ মানুষ ও মা বোনদের ওপর যখন অমানুষিক নির্যাতন চালায় তখন ওই কুখ্যাত গরু, খাসী, মুরগী খেকো ও লুটতরাজকারী রাজাকার দালালরা তখন হানাদারদের রাস্তাঘাটসহ সব চিনিয়ে মানুষ হত্যার নীলনক্সাসহ যাবতীয় অপকর্মের কুশীলব হিসেবে ওদের ভূমিকা ছিল অপরিসীম ও স্পর্শকাতর। এমনকি যাদের সাথে রাজাকারদের চৌদ্দগেষ্ঠির বিরোধ ও দ্বন্দ্ব ছিল, জায়গা জমি নিয়ে গন্ডগোল ছিল এই সুযোগে কুখ্যাত দালাল রাজাকাররা
তাদের পরিবার পরিজন এমনকি জ্ঞাতি আত্মীয় স্বজনকে ধরে এনে নিশ্চিত মৃত্যুর কোলে ঠেলে দেয়ার মতো অসংখ্যা উপমা, উদাহরণ ও দৃষ্টান্তের যেন শেষ নেই।
কুখ্যাত রাজাকারদের সম্পর্কে একজন ভূক্তভোগী বর্ণনা করতে গিয়ে বলেছেন, ওরা কুলাঙ্গার, অস্পৃশ্য, ঘাতক, লুটপাটকারী, হানাদারদের সহায়তাকারী, সেবাদাস, অপরিনামদর্শী ও দালাল। ওদের কোনো জাত, ধর্ম ছিল না। তিনি আক্ষেপ করে আরও বলেছেন, আমাদের পরিবার ও এলাকার কমপক্ষে ৪০/৪৫ জনকে রাজাকাররা নির্মমভাবে হত্যা, লুটপাট, গরু, খাসী, মুরগী নিয়ে গেলেও জীবদ্দশাতে এই কুলাঙ্গার দালালদের বিচার দেখে যেতে পারলাম না। হয়তো এই আফসোস ও ব্যাথা নিয়ে একদিন পরকালে চলে যেতে হবে। এছাড়া মুক্তিযুদ্ধের সময় রাজাকারদের আরও নৃশংস ও অবর্ননীয় নির্যাতনের কাহিনী ও তথ্যবহুল অনেক মর্মান্তিক ঘটনা রয়েছে।
অনেক প্রথিতযশা লেখকদের অসংখ্য বই রয়েছে। তাতেও রাজাকারের দালালী ও নির্মমতার সুস্পষ্ট কাহিনী রয়েছে। সেদিকে আলোকপাত করলে সংক্ষিপ্ত কলেবরের এ নিবন্ধটি আরও বড় হয়ে যাবে বিধায় সেদিকে না গিয়ে আমার জানামতে গরু, খাসী ও মুরগী খেকো দালাল রাজাকারদের ব্যাপারে একটি নিষ্ঠুরতার কাহিনী উল্লেখ করা হলো। ১৯৭১ সালের এপ্রিলের মাঝামাঝি কিশোরগঞ্জ গুরুদয়াল কলেজের কয়েকজন শিক্ষার্থী, সহকর্মী এবং এলাকার (সুখিয়া, চরপলাশ ও পাকুন্দিয়া) কয়েকজন মুক্তিযুদ্ধের ট্রেনিংয়ের উদ্দেশ্যে ভারতের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হই। ময়মনসিংহ জেলার ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলাধীন আঠারবাড়ী ও রায় বাজার সংলগ্ন কালবলুয়া বাজারে পৌঁছলে আমাদের অগ্রগামী দলের কয়েকজনকে মুক্তিযোদ্ধা মনে করে রাজাকাররা ধরে পাক হানাদার বাহিনীর হাতে সোপর্দ করলে হানাদার বাহিনী তাদেরকে ধুলদিয়া রেলব্রীজে নিয়ে হত্যা করে। লাশগুলো সিংগুয়া নদীতে ভেসে যায়। তাদের মধ্যে কাসেম, আঙ্গুর, সবজালী, আঃ হাই, জব্বারসহ আরও কয়েকজনের নাম উল্লেখযোগ্য। আমাদের সঙ্গীরা রাজাকারদের হাতে ধরা পড়ার সংবাদ পেয়ে আমার সাথে থাকা চরপলাশের নূরু, সুখিয়ার চাঁন মিয়া, আমার চাচাত ভাই আবদুছ ছোবান মাস্টার, জিয়াউদ্দিনসহ আমি অন্য পথে টেঁকের ঘাট হয়ে ভারতের মইষখলায় মুক্তিযুদ্ধের ট্রেনিংয়ের জন্য চলে যাই। দালাল রাজাকার ও পাক হানাদার বাহিনীর এই নৃশংসতার কাহিনী মনে হলে আজও স্থির থাকতে পারি না।
১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর দেশ স্বাধীন হলেও এর কয়েকদিন আগ থেকেই দেশের বিভিন্ন জায়গা হানাদার বাহিনীর কবল থেকে মুক্ত হতে থাকে। যা বুঝতে পেরে হানাদার বাহিনী তাদের ক্যাম্প বন্ধ করে দালাল রাজাকার ও অন্যান্য পর্যায়ের দালালদের না জানিয়ে হঠাৎ তল্পিতল্পা নিয়ে ঢাকায় গিয়ে সমবেত হয়। সেই সময় দালাল রাজাকারসহ তাদের অন্যান্য সেবা দাসরা চরম বিপদে পড়ে যায়। তখন দেশের মুক্তিযোদ্ধা ও সাধারণ মানুষ তাদের আস্তানা (ক্যাম্প) দখল করে তাদেরকে যেমনি হত্যা করে তেমনি নাজেহালও করে থাকে। সেই সময় নারী, পুরুষ ও কোলের শিশুরা ঝাড়ু ও জুতা দিয়ে রাজাকারদের পেঠাতে যেমন উৎসাহ বোধ করে, তেমনি তাদের নাক, কান কেটেও শাস্তি দিয়ে থাকে। ১৬ ডিসেম্বরের ৪/৫ দিন আগে পাকুন্দিয়া মুক্ত হয়। তখন অগনিত রাজাকার মুক্তিযোদ্ধাদের নিকট আত্মসমর্পন করে এবং অনেক রাজাকার উভয় পক্ষের যুদ্ধে নিহত হয়। তখন ক্ষোভে দুঃখে এলাকার সর্বস্তরের মানুষ জীবিত ও মৃত রাজাকারদের দেখার জন্য পাকুন্দিয়া স্কুল ও কলেজ চত্বর, রাস্তাঘাট ও বাজার চত্বরে এসে ভীড় জমায়। এ যেন এক অভূতপূর্ব দৃশ্য। যা ঈদ, বিজয় দিবস ও স্বাধীনতা দিবসের আনন্দ, উৎসাহকেও হার মানিয়েছিল।
সেই সময় দেখা গেছে কিছু উৎসাহি মানুষ আহত ও নিহত রাজাকারদেরকে কেরোসিন ও পেট্রোলের আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিতেও কুন্ঠাবোধ করেনি। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য ১৯৭২ সালে রাজাকারদের পৃষ্ঠপোষক নাটের গুরু ৯৩ হাজার হানাদার বাহিনী ও কুখ্যাত ১৯৫ জন নরঘাতকদের ইন্দিরা ভূট্টোর সিমলা চুক্তির মাধ্যমে অক্ষত অবস্থায় এবং কোনো বিচারের সম্মুখীন না হয়ে পাকিস্তানে চলে যাওয়ার সুযোগ ঘটে। প্রায় ১৫ বছর আগে একটি জাতীয় দৈনিকে “প্রবাস থেকে রাজাকারের চিঠি” এই মর্মে চিঠি পত্রের কলামে একটি লেখা প্রকাশিত হয়ে থাকে। তাকে পাকিস্তানে পালিয়ে যাওয়া এক কুখ্যাত রাজাকার যা লেখে ছিল তা সংক্ষিপ্তভাবে বর্ণনা করা হলো। সেই রাজাকার পাকিস্তানে পালিয়ে গেলে এদেশে মুক্তিযুদ্ধের সময় নারী নির্যাতন, হত্যা ও লুটপাটকারী পরিচিত এক ক্যাপ্টেনের সাথে দেখা করতে যায়। তাকে দেখেই উক্ত হানাদার বাহিনীর নরঘাতক ক্যাপ্টেন অগ্নিমূর্তি ধারণ করে রাগত স্বরে বলে থাকে কুত্তাকা বাচ্চা, শকূর কা বাচ্চা, বেঈমান কা বাচ্চা, হারাম কা বাচ্চা, মীরজাফর কা বাচ্চা, দালাল কা বাচ্চা, কেয়াবাত তুম জলদি বাতাও। পাকিস্তানের করাচি থাকা এই রাজাকার ক্যাপ্টেনের হুংকার ও বচন ভঙ্গি শুনে কালবিলম্ব না করে পাকিস্তানের লায়াল পুরে চলে যায় এবং টেক্সটাইল মিলে শ্রমিকের কাজ নেয়। সেখান থেকে সে ইরানে চলে যায়। সেই চিঠিপত্রের কলামে আরও লেখেছিল, আমি রাজাকার হয়ে যে সর্বনাশ করেছি দেশ, জাতি ও জনগণের বিরুদ্ধে এমন দালালী যেন কেউ আর না করে। কবরে আমার এ পাপ ও দালালীর কী শাস্তি অপেক্ষা করছে জানি না। যদি আল্লাহ রাব্বুল আল আমিন ক্ষমা না করেন তবে অনাদি অনন্তকাল হয়তো এ পাপের প্রায়শ্চিত্ত ও কঠিন শাস্তিভোগ করতে হবে। পরিশেষে প্রবাস থেকে লেখা চিঠির দুটি কথা ছিল, যদি এখনও কোনো রাজাকার অন্যায়, অপকর্ম ও দালালীল জন্য আল্লাহ রাব্বুল আল আমীনের দরবারে তওবা না করে থাকে, তবে যেন চিঠিপত্র কলামের এ লেখাটি পড়ে অতিসত্ত্বর যেন সীমাহীন ক্ষমার মালিক আল্লাহ রাব্বুল আমীনের কাছে তওবা পড়ে ক্ষমা প্রার্থনা করে থাকে। অর্থাৎ এই রাজাকার যাদের জন্য মুক্তিযুদ্ধের নয় মাসে দালালী করেছে তাদের একজন পাকিস্তান ফেরৎ কুখ্যাত ক্যাপ্টেন যে হুংকার দিয়েছে এতদিন পর সেই দালাল রাজাকার হয়তো বুঝতে পেরেছিল। যার জন্য করলাম চুরি সেয়েই বলে আমি চোর।
২৩ জানুয়ারি শনিবার বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত একটি সংবাদ দেশের অনেককে হতচকিত করে দেয়। অনেককে ভাবতে ও বলতে শুনা যায়, এতদিন পর কেন এবং কি উদ্দেশ্যে তা করা হয়েছে যা বুঝা খুবই মুশকিল বা উরভভরপঁষঃ। ওইদিন যুগান্তরের শিরোনাম ছিল আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের রাজাকার পরিবারের সদস্য- এমপি একরামুল হক চৌধুরী (২৩/০১/২০২১ দৈনিক যুগান্তর)। দেশ রূপান্তরের শিরোনাম ছিল কাদের মির্জা রাজাকার পরিবারের সদস্য- এমপি একরামুল হক চৌধুরী (দেশ রূপান্তর ২৩/০১/২০২১ ইং)।
এমপি একরামুল হক চৌধুরীর ফেসবুক ভিডিও বার্তায় ভাইরাল হওয়া সংবাদ থেকে জানা যায়, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ও তার ভাই কাদের মির্জা রাজাকার পরিবারের সদস্য। তবে ওবায়দুল কাদের মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধের কমান্ডার ছিলেন। ফেসবুক লাইভে দেয়া সংক্ষিপ্ত একটি ভিডিও বার্তায় ২১/০১/২০২১ ইং বৃহস্পতিবার রাতে তিনি (এমপি একরামুল হক চৌধুরী) এ মন্তব্য করেন (যুগান্তর ২৩/০১/২০২১ ইং)। এমপি একরামুল হক চৌধুরী নোয়াখালী ৪ আসনের আওয়ামী লীগ দলীয় এমপি ও নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলে জানা যায়। অপর দিকে ২২/০১/২০২১ ইং শুক্রবার ওবায়দুল কাদেরের ছোট ভাই ও বসুরহাট পৌরসভার মেয়র আবদুল কাদের মির্জা এবং সভায় নোয়াখালী ৪ আসনের এমপি একরামুল হক চৌধুরীকে মাতাল বলে আখ্যায়িত করেন এবং তাকে দল থেকে বহিষ্কারের জন্য হরতালসহ লাগাতার আন্দোলনের ডাক দেন। যদিও পরবর্তী সময় তিনি ২৮ জানুয়ারি পর্যন্ত কর্মসূচী স্থগিত করেন এবং ৩১ ডিসেম্বর পুনরায় নোয়াখালীতে আধা ঘন্টা হরতালের ডাক দেন।
অপরদিকে ২৩/০১/২১ ইং শনিবার দৈনিক দেশ রূপান্তর এ প্রকাশিত সংবাদ থেকে জানা যায়, একরামুল হক চৌধুরী এমপি কাদের মির্জাকে রাজাকার পরিবারের সদস্য দাবী করে ২১ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার রাতে ফেস বুক লাইভে দেয়া সংক্ষিপ্ত একটি ভিডিও বার্তায় এমন দাবী করেন। তিনি ভিডিও লাইভে আরও দাবী করেছেন কাদের মির্জার চাচা রাজাকার কমান্ডার ছিলেন। তাকে কাদের ভাইয়ের বাহিনী গুলি করে মেরেছে। তার বাবা ছিলেন মুসলীম লীগার, কাদের মির্জার নানা ছিলেন শান্তিবাহিনীর কমান্ডার। মামা ছিলেন রাজাকার। তাদের পুরো বংশই ছিল রাজাকার। এমপি একরামুল হক চৌধুরী ভিডিও বার্তায় বলেন, একটা রাজাকার বংশের লোক নিয়মিত ৩০০ সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে যা বলে যাচ্ছে তার বিরুদ্ধে কোনো ভূমিকা নেই দলের ভিতর (দৈনিক দেশ রূপান্তর ২৩/০১/২০২১ ইং শনিবার)।
কোনো ব্যক্তি, গোষ্ঠি ও কোনো পরিবারের সদস্যকে ভয়ানক, কুখ্যাত, গণধিকৃত ও হানাদার বাহিনীর দালাল রাজাকারের সাথে সংযুক্ত, সংশ্লিষ্ট করে কিছু বলা কওয়ার আগে যথেষ্ট ভাবা, চিন্তার দরকার রয়েছে। কারণ রাজাকার উপাখ্যানটি লুটপাট, গরু, খাসী, মুরগী খেকো ও হানাদার বাহিনীর দালাল হিসেবে স্বীকৃত, চিহ্নিত ও আখ্যায়িত। যদিও এমপি একরামুল হক চৌধুরী ২৫/০১/২০২১ ইং সোমবার একটি বেসরকারি টেলিভিশনের টকশোতে বলেছেন, আমি আমার নেতা ওবায়দুল কাদেরকে নিয়ে যে মন্তব্য করেছিলাম তার জন্য ক্ষমা চাইছি। পুরো নেয়াখালী বাসীর নিকট ক্ষমা চাই (দৈনিক দেশ রূপান্তর ২৬/০১/২০২১ ইং)। এ প্রসঙ্গে একজন বলেছেন, যা গলায় ছুরি চালিয়ে ক্ষমতা চাওয়ারই নামান্তর।
মুক্তিযুদ্ধের সময় হানাদার বাহিনীর কুখ্যাত দালাল রাজাকার যা করেছে এ অপকর্মের সীমা পরিসীমা নেই। রাজাকারদের কুকীর্তি, লুটতরাজ, মানুষ হত্যা, নারী নির্যাতন, আগুন দিয়ে বাড়ীঘর জ্বালানো, গরু, খাসী, মুরগী লুটসহ অসংখ্য যাতনা কখনও ভুলে যাওয়ার নহে। হানাদার বাহিনীর দালাল, সহায়ক ও প্রেতাত্মা হিসেবে রাজাকাররা যুগ যুগ ধরে ঘৃনিত, চিহ্নিত ও ধিকৃত হবে। ইতিহাসও ওদেরকে ক্ষমা করবে না।
পরিশেষে নিবন্ধটির সমাপ্তি টেনে বলব, একবার এক ব্যক্তি পেটের ক্ষুধায় প্রতিবেশীর গাছ থেকে কাকে খাওয়া পাকা কাঁঠাল খাওয়ার কারণে লাঠিপেটা করে থানায় সোপর্দ করা হলে সে বলেছিল, ক্ষুধার জ্বালায় কাকে খাওয়া অন্যের গাছের পাকা কাঁঠাল খাওয়ার জন্য আমাকে থানায় সোপর্দ করা হল। তবে সংগ্রামের সময় (মুক্তিযুদ্ধ) আশুতিয়ার মুছার বাড়ী থেকে মদ খেয়ে আমার সম্বল খাসী, মুরগী নিয়ে গেলেও দালাল রাজাকারদের কোনো বিচার পেলাম না। স্বার্থ সিদ্ধির কারণে যা হচ্ছে সব যেন উল্টা পাল্টা।
এ.কে.এম শামছুল হক রেনু
লেখক কলামিষ্ট