আপন শাশুড়ীকে নিয়ে জামাই উধাও হওয়ার ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। এ ঘটনায় স্ত্রীকে ফিরে পেতে জামাইয়ের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ করেছেন তার আপন শ্বশুর।
মঙ্গলবার (২ ফেব্রুয়ারী) দুপুরে হাতীবান্ধা থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন শ্বশুর নাছির উদ্দিন (৫০)। নাছির উদ্দিন (৫০) নীলফামারী জেলার ডিমলা উপজেলার উত্তর সানাখুলি গ্রামের মৃত আঃ আজিজ এর ছেলে।
ঘটনাটি ঘটেছে লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার ফকিরপাড়া ইউনিয়নের রমনীগঞ্জ গ্রামে। অভিযুক্ত জামাই এমদাদুল ইসলাম (এনদা) (৩৫), উপজেলার ফকিরপাড়া ইউনিয়নের রমনীগঞ্জ গ্রামের তরিফ উদ্দিনের ছেলে। সে বড়খাতা বাজারের হাজী জামে মসজিদ এলাকার অটোরিক্সার পার্স ব্যবসায়ী।
এদিকে এমদাদুল ইসলাম (এনদা)র স্ত্রী নাজনী বেগম তার নিযার্তনে আহত হয়ে হাতীবান্ধা স্বাস্থ্যকমপ্লক্সে ভর্তি হয়ে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
জানা গেছে, দেড় বছর পুর্বে নীলফামারী জেলার ডিমলা উপজেলার উত্তর সোনাখুলি গ্রামের নাছির উদ্দিনের মেয়ে নাজনী বেগম (২২) কে বিয়ে করেন লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার ফকিরপাড়া ইউনিয়নের রমনীগঞ্জ গ্রামের তরিফ উদ্দিনের ছেলে এমদাদুল ইসলাম (এনদা)। নাজনী বেগমকে বিয়ের পর থেকে জামাই-শাশুড়ী সম্পর্ক গড়ে ওঠে। প্রায় সময় মেয়ের বাড়ি আসতো শাশুড়ী। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে দীর্ঘ সময় পাড় করেন জামাই-শাশুড়ী। স্ত্রীকে ছেড়ে শাশুড়ির প্রতি আসক্ত হয়ে পড়েছেন জামাই এমদাদুল ইসলাম (এনদা) তা কেউ ঘুণাক্ষরেও টের পায়নি। এর মধ্যে স্ত্রী নাজলী বেগম মায়ের সাথে এমন সম্পর্ক দেখে প্রায়ই স্বামীর সাথে ঝাগড়া বিবাদ চলে আসছিল।
কয়েকদিন আগে নিজ বাড়িতে স্বামীর সাথে মায়ের মেলামেশা দেখে ফেলায় স্ত্রী নাজলী বেগমকে ৫ দিন ধরে ঘরে আটকে রেখে মারধর করে স্বামী এমদাদুল ইসলাম (এনদা)। এরপর স্ত্রী নাজলী বেগম রাতে দরজা ভেঙ্গে খালার বাড়ি উপজেলা হাতীবান্ধার ধুবনী এলাকায় পালিয়ে এসে আশ্রয় নেয় এবং আহত অবস্থায় হাতীবান্ধা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে ভর্তি হয়। পরে সেখান স্ত্রীকে এনে মারধর করে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেয়। ঘটনাটি মুহুর্তের মধ্যে জানাজানি হলে এলাকায় সমালোচনার ঝড় উঠে।
স্ত্রী নাজলী বেগম (২২) জানান, বিয়ের পর সংসার ভালই চলছিল তাদের। পরে কি থেকে কি হলো? নিজেও জানি না। আমার মা আমার স্বামীর বাড়িতেই বেশী সময় থাকত। আমার চেয়ে আমার মায়ের সাথে বেশী সম্পর্ক গড়ে উঠে। এরপর কয়েক দিন মায়ের সাথে মেলামেশা দেখে ফেলায়। আমার স্বামী আমাকে মারধর করে ৭ দিন ঘরে তালা দিয়ে আটকে রাখেন। এরপর রাতে অসুস্থ অবস্থায় দরজা ভেঙ্গে পালিয়ে এসে খালা বাড়িতে আশ্রয় নিয়ে হাতীবান্ধা হাসপাতালে ভর্তি হই। এ ঘটনায় আমি হাতীবান্ধা থানায় একটি নির্যাতনের অভিযোগ দিয়েছি।
নাজলী বেগমের খালা শাহিনা বগম (৩৫) জানান, গত ১০ দিন আগে আমার বাড়িতে জামাই এমদাদুল ইসলাম (এনদা) ও আমার বড়বান আছিতান নেছা (৪০) আসেন। এরপর একদিন আমার বাড়িতে অবস্থান করেই বড়বোনকে জামাই এমদাদুল ইসলাম (এনদা) ভাগিয়ে নিয়ে যায়। সেই থেকে আজ পর্যন্ত
বোনের কোন খোঁজ পাচ্ছিনা।। শুনতে পাচ্ছি সে নাকি আমার বোনক বিয়ে করেছেন।
শ্বশুর নাছির উদ্দিন জানান, আমি দিনমজুরীর কাজে নোয়াখালীতে গেলে সেই সুযোগ আমার স্ত্রী আছিতান নেছা (৪০) জামাই এমদাদুল ইসলাম (এনদা) বাড়িতে থাকত। এরপর নোয়াখালী থেকে ফিরে এসে দেখি জামাই বাড়িতে আমার স্ত্রী নেই। জামাইকে আমার স্ত্রীর কথা বললে সে বিভিন্ন কথা বলে এড়িয়ে যায়। তাই আমি স্ত্রীকে ফিরে পেতে জামাইয়ের বিরুদ্ধে থানায় একটি অভিযোগ করি।
অভিযুক্ত জামাই এমদাদুল ইসলাম (এনদা) জানান, আমার স্ত্রী রাতে বাড়ি থেকে পালিয়ে গেছে শুনে বিষয়টি আমি এলাকার সবাইকে জানিয়েছি। তবে শাশুড়ীকে পালিয়ে নিয়ে গিয়ে বিয়ে করার বিষয়টি তিনি অস্বীকার করেন।
উপজেলার সিন্দুর্না ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান নুরুল আমিন জানান, আমি বিষয়টি শুনে থানায় অভিযোগ করতে বলেছি। অভিযুক্ত জামাই এর উপযুক্ত শাস্তি হওয়া উচিত বলে মনে করেন তিনি।
এ বিষয়ে হাতীবান্ধা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এরশাদুল আলম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, এ ঘটনায় একটি অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।