অনেক আগেই বুড়িমারী স্থলবন্দর-লালমনিরহাট আঞ্চলিক মহাসড়কটি চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। প্রায় একশত কিলোমিটার এ সড়কের বেশিভাগ অংশের কার্পোটিং উঠে গেছে। বিভিন্ন স্থানে তৈরি হয়েছে বড় বড় গর্ত। সেই গর্তগুলো ইট ও বালু দিয়ে ভরাট করা হলেও কয়েক দিন পর আবারও গর্ত হয়ে যাচ্ছে। ফলে প্রতিনিয়তই ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা।
দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম স্থলবন্দর বুড়িমারীর সঙ্গে ব্যবসায়ীক যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম এ সড়কটি। দুর্ঘটনা আর জীবনের ঝুঁকি নিয়েই এই মহাসড়ক দিয়ে প্রতিদিন কয়েক হাজার যানবাহন চলাচল করে। দুর্ঘটনা এই মহাসড়কের প্রায় নিত্যদিনের সঙ্গী।
পুলিশ কন্ট্রোল রুম সূত্রে জানা যায়, গত এক বছরে এই মহাসড়কে অনেক দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে প্রাণ হারিয়েছেন ২৬ জন। সর্বশেষ গত ৩১ জানুয়ারি জেলার হাতীবান্ধায় স্বামীর পেনশনের টাকা তুলতে গিয়ে এক নারীর মৃত্যু হয়।
গত ১৮ জানুয়ারি বিকালে ওই উপজেলার খানের বাজার নামক স্থানে বুড়িমারী স্থলবন্দর থেকে আসা পাথরবোঝাই ট্রাকের চাপায় প্রাণ হারান লালমনিরহাট জেলা পুলিশের ডিএসবি'র দুই পুলিশ সদস্য।
ট্রাকচালক আশরাফ আলী জানান, তিনি দেশের প্রায় সব মহাসড়কে ট্রাক চালিয়েছেন। ১৮ বছর ধরে ট্রাক চালানোর অভিজ্ঞতায় তার কাছে সবচেয়ে বেশি খারাপ অবস্থায় থাকা মহাসড়ক মনে হয়েছে লালমনিরহাট-বুড়িমারী মহাসড়কটিকে। এই রুটে মাল পরিবহন করা তাদের কাছে অত্যান্ত কষ্টকর বলে জানান তিনি।
এই মহাসড়কে সবসময় দুর্ঘটনার দুশ্চিন্তা নিয়ে ট্রাক চলতে হয় জানিয়ে তিনি আরও বলেন, আমি এমন রাস্তায় ট্রাক চালাতে চাই না। কিন্তু স্থলবন্দর থেকে আমদানি-রপ্তানির মালামাল পরিবহনের জন্য বাধ্য হয়েই এই মহাসড়কে আসতে হয়।
পথচারী সফিকুল ইসলাম জানান, পাথরসহ অন্যান্য মালবোঝাই ট্রাকগুলো এই মহাসড়ক দিয়ে যেভাবে চলাচল করে, তাতে পথচারীদের চলাচল খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। মহাসড়কটির কার্পেটিং উঠে বিভিন্ন জায়গায় গর্ত তৈরি হওয়ায় দুর্ঘটনার ঝুঁকি আরও বেড়ে গেছে।
বুড়িমারী স্থলবন্দরের আমদানি-রপ্তানিকারক ব্যবসায়ী ও বুড়িমারী ইউপি চেয়ারম্যান নওয়াজ নিশাত জানান, এই রাস্তাটির বেহাল দশা হওয়ায় অনেক ট্রাকচালক স্থলবন্দর থেকে মালামাল আনা-নেয়া করতে চান না। ট্রাক চালকদের বেশি ভাড়া দিয়ে মালামাল পরিবহন করতে গিয়ে তাদের ব্যয় বেড়ে গেছে। দীর্ঘদিন ধরে মহাসড়কটির এমন অবস্থা থাকলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছেন না।
লালমনিরহাট সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ মাহবুব আলম বলেন, মহাসড়কটির ৪০ কিলোমিটার ভাঙা অংশ মেরামত করতে ৪০ কোটি টাকার বরাদ্দ পাওয়া গেছে। ঠিকাদার নিয়োগ প্রক্রিয়াও সম্পন্ন হয়েছে। খুব শিগগিরই কাজ শুরু হবে। তবে ট্রাকগুলো অতিরিক্ত মালামাল পরিবহন করায় অল্প সময়ের মধ্যেই মহাসড়কটি ক্ষতিগ্রস্ত হয় বলেও াান তিনি।