পৃথিবীতে ভাল কাজ করতে কিছুই লাগে না। ভাল কাজ করা কঠিনও নয়। শুধু প্রয়োজন ভাল চিন্তা ও মানসিকতা। প্রয়োজন মানবতা ও মানবিক চেতনা। প্রয়োজন স্বপ্ন। আর স্বপ্ন বাস্তবায়নে কাজ করার প্রত্যয়। তবে এটা শতভাগ সত্য যে, এই ভাল চিন্তা ও মানবিক চেতনা লালন করাই সবচেয়ে কঠিন কাজ। সকলের মধ্যে আসে না, আসবেও না। পৃথিবীর সকল মানুষ মানবিক মানুষ না। মানবিক মানুষ হলে সমাজে অপরাধ, সংঘর্ষ, নির্যাতিত, অসহায় ্েকউ থাকত না। অসহায় মানুষদের নিয়ে অনেকে ভাবেও না। কিন্তু বাংলাদেশের সেই সকল মানুষের নিয়ে স্বপ্ন দেখছেন মানবতার মা শেখ হাসিনা। স্বপ্ন দেখছেন তাদের চোখে স্বপ্নের বাংলাদেশের। মানবতার এই কর্মকান্ডগুলো তাঁর আজ প্রথম নয়। থেমেও নেই মানবতার স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথে।
১৯৯৬ সালে প্রথম ক্ষমতায় এসে পার্বত্য শান্তি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে যোগ্যতার বর্হিপ্রকাশ ঘটান। দীর্ঘ দুই দশকের অস্থিরতার অবসান ঘটিয়ে শান্তি ফিরিয়ে আনার জন্য ইউনেস্কো তাকে ‘হুপে-বোয়ানি’ শান্তি পুরস্কার দেয়। মিয়ানমার থেকে নির্যাতিত হয়ে আসা ১০ লাখের মতো রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়ে আন্তর্জাতিকভাবে ব্যাপক প্রশংসিত হন শেখ হাসিনা। অসহায় মানুষগুলোর প্রতি মানবতার হাত বাড়িয়ে দেওয়ায় তিনি ‘মাদার অব হিউম্যানিটি’ (মানবতার মা) উপাধিতে ভূষিত হন। রোহিঙ্গা ইস্যুতে দূরদর্শী নেতৃত্ব এবং রোহিঙ্গাদের আশ্রয়দানে দায়িত্বশীল নীতি ও তার মানবিকতার জন্য প্রধানমন্ত্রী আইপিএস ইন্টারন্যাশনাল এচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড এবং ২০১৮ স্পেশাল ডিসটিংশন অ্যাওয়ার্ড ফর লিডারশিপ পদক পান। বিশ্বের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় নিউজ এজেন্সি ‘দি ইন্টার প্রেস সার্ভিস (আইপিএস) এবং নিউইয়র্ক, জুরিখ ও হংকং ভিত্তিক তিনটি অলাভজনক ফাউন্ডেশনের নেটওয়ার্ক গ্লোবাল হোপ কোয়ালিশন ২০১৮ সালে শেখ হাসিনাকে এ দুটি অ্যাওয়ার্ড প্রদান করে। এছাড়াও পার্ল এস বাক এওয়ার্ড (১৯৯৯) সিইআরইএস পদক, মাদার তেরেসা পদক, এমকে গান্ধী পদক, ইন্দিরা গান্ধী শান্তি পুরস্কার (২০০৯), ইন্দিরা গান্ধী স্বর্ণ পদক, হেড অব স্টেট পদক, গ্লোবাল ডাইভারসিটি অ্যাওয়ার্ড (২০১১, ২০১২) ও নেতাজী স্মৃতি পুরস্কার (১৯৯৭) পেয়েছেন শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনার সকল প্রাপ্ত পরিচয়ের চেয়ে আমার কাছে সবচেয়ে গর্বের পরিচয় মনে হয় তিনি শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা। এই গৌরবে তিনি আরও গৌরবান্বিত বোধ করবেন সারা বিশ্বে এটি আমি মনে প্রাণে বিশ্বাস করি। কারণ তিনি যে দেশের জন্য স্বপ্ন দেখছেন তার রূপকার শেখ মুজিবুর রহমান।
জগতের সকল সন্তানই পিতা-মাতার পরিচয়ে গৌরবান্বিত হবেন এটাই স্বাভাবিক। তবে বঙ্গবন্ধুর ত্যাগ, দেশপ্রেম আর সংগ্রাম যেন অনুকরণীয়। শেখ হাসিনার চোখেও আমরা সে স্বপ্ন দেখতে পাচ্ছি। বঙ্গবন্ধু দেখা সোনার বাংলার অপূর্ণ অংশ শেখ হাসিনা পূর্ণ করবেন এমনটাই মনে হচ্ছে। নিজের টাকায় বানানো পদ্মা সেতু নির্মাণ করে ইতিমধ্যে নজির স্থাপন করছে। তারপর পৃথিবীতে এক অনন্য নজির স্থাপন করলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একযোগে প্রায় ৭০ হাজার গৃহহীন পরিবারকে বাড়ি করে দিয়ে তাদের নতুন জীবনের স্বপ্ন দেখিয়েছেন তিনি। দিয়েছেন বেঁচে থাকার অবলম্বন। এটি পৃথিবীর ইতিহাসে মানবতা ও অধিকার প্রতিষ্ঠায় দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় সারাদেশে প্রায় নয় লাখ মানুষকে জমিসহ পাকা ঘর করে দেয়ার প্রক্রিয়া চলমান। ইতিমধ্যে প্রথম পর্যায়ে প্রায় ৭০ হাজার বাড়ি নির্মাণ হয়েছে। শনিবার (২৩ জানুয়ারি) গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ কর্মসূচি উদ্বোধন করেছেন। আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ এর পরিচালক মো. মাহবুব হোসেন বলেন, পৃথিবীতে এটিই প্রথম এবং একমাত্র ঘটনা; একসঙ্গে এতো মানুষকে জমির মালিকানা দিয়ে পাকা ঘর করে দেয়া। এটি মূলত মুজিববর্ষে গরীব ও অসহায় মানুষের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার। একটি ঘর শুধু একটি আশ্রয়স্থল নয়, যার কিছুই ছিল না এই ঘরটি তার জন্য আত্মমর্যাদার। এই ঘরের মালিকরা সপরিবারে বিভিন্ন সেবা পাবে; শিক্ষা-স্বাস্থ্য, সুপেয় পানিসহ সকল নাগরিক সুবিধা দেয়া হবে। প্রশিক্ষণের আওতায় এনে স্বনির্ভর করা হবে। এতে দারিদ্র্যতা বিমোচন হবে। অর্থনৈতিক নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে।
ঘর পাওয়ার পর থেকেই আমরা খবরের পাতায় পেয়েছি বিভিন্ন বয়সী মানুষের বিভিন্ন অভিব্যক্তি। এই যে আবেগ-ভালবাসা এটাই জীবন। এই প্রাপ্তিটাই প্রয়োজন মানুষ হিসেবে। এভাবে সারাদেশের নয় লাখ পরিবারকে স্বপ্ন দেখাচ্ছেন শেখ হাসিনা। বেঁচে থাকার স্বপ্ন। টিকে থাকার স্বপ্ন। স্বাবলম্বী ও সমৃদ্ধ হওয়ার স্বপ্ন। নিশ্চিত করছেন তাদের অধিকার।
একজন নেতা হতে প্রয়োজন রাজনৈতিক প্রজ্ঞা, দূরদুর্শিতা, ত্যাগ, মানবতা, ক্ষমতা কোনটা নেই তাঁর? রাজনৈতিক প্রজ্ঞায় ও দূরদর্শিতায় তিনবার ক্ষমতায়, ত্যাগের কারণেই তিনি আজকের মানবতার মা। মানবতার কারনেই তিনি বিশ্বে প্রশংসিত। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সাময়িক ফোর্বসের বিশ্বের ক্ষমতাধর ১০০ নারীর তালিকায় শেখ হাসিনার অবস্থান- ৩০তম। ২০১৮ সালে টাইম ম্যগাজিনের প্রভাবশালী ১০০ ব্যক্তির তালিকায় নাম এসেছে- শেখ হাসিনার (লিডার্স ক্যাটাগরিতে ২৭ জন ব্যক্তির মধ্যে তিনি- ২১তম)। নারী ক্ষমতায়নে ১৫৫ দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান- ৭ম।
বাংলাদেশ একটি গণতান্ত্রিক দেশ। জনগণই সকল ক্ষমতার অধিকারী। কিন্তু অনেক শাসনকর্তাই সেই সত্যটি মনে করে না। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিরন্তর ভোটার যাদের কোন রাজনৈতিক প্রাপ্তি নেই তাদের দিকেই নজর দিয়েছেন। তাদের বাঁচার প্রেরণা যোগাচ্ছেন। আমরা দেখেছি তাঁকে সরাসরি চিঠি লিখেছে অনেক ছোট্ট থেকে শুরু করে বৃদ্ধ বাঙালী। তাৎক্ষণিক ব্যবস্থাও নিয়েছেন তিনি। তাঁর সাথে কথা বলেছে তৃণমূলের মানুষও। যা পূর্বের ইতিহাস নেই। একটি মানুষ যখন জীবনমৃত্যুর সন্ধিক্ষণে থাকেন তখন তার মত অসহায় কেউ হয় না। তাদের পাশে বেঁচে থাকার প্রেরণা যুগিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
জাতীয় মহিলা ক্রিকেট দলের সাবেক খেলোয়াড় অসুস্থ চামেলি খাতুনের চিকিৎসার দায়িত্ব নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ‘গোলাপী এখন ট্রেনে’ খ্যাত ঢাকাই চলচ্চিত্রের প্রভাবশালী নির্মাতা আমজাদ হোসেনের চিকিৎসার সমস্ত দায়িত্ব নিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গণমাধ্যমে আমজাদ হোসেনকে নিয়ে সংবাদ হয় দেশের সব সংবাদ মাধ্যমে। যা চোখ এড়ায়নি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। আর তাইতো তিনি নিজ থেকে আমজাদ হোসেনের ছেলেদের ডেকে পাঠিয়েছিলেন তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে। করোনায় আক্রান্ত স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের সদস্য নওশেরুজ্জামান নওশেরের চিকিৎসার দায়িত্ব নিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। ৭২ বছর বয়সী সাবেক তারকা স্ট্রাইকার নওশের স্বাধীন বাংলা দল ছাড়াও দীর্ঘদিন খেলেছেন মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবে। সত্তরের দশকের ফুটবলার ছিলেন তিনি। ফুটবলের পাশাপাশি ক্রিকেটেও ছিল তার দাপট। মোহামেডানের হয়ে নিয়মিত খেলেছেন সাবেক এই ওপেনার। ক্যানসারে আক্রান্ত কিংবদন্তি সংগীতশিল্পী এন্ড্রুকিশোরের চিকিৎসায় পূর্ণ সহায়তা দেয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এভাবেই সকল শ্রেণির মানুষের পাশে থেকে বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখিয়েছেন তিনি।
পাঠ্যপুস্তকে পড়ি কর্মই জীবন। কর্মগুণে বিখ্যাত হয়েছে জগতের গুণী মানুষগুলো। তারা চলে গিয়েও আমাদের জোগাচ্ছে অনুপ্রেরণা। শেখ হাসিনার এই মানবিক চিন্তায় শুধু বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ নয়, আস্তার প্রতীক হিসেবে ঠাঁই নিচ্ছে বাংলাদেশের সর্বস্তরের মানুষের নিকট। দীর্ঘায়ু কামনা করি এই মানবিক মানুষটির। কারণ তিনি বেঁচে থাকলে আমরা দেখতে পাব আরও মানবিক বাংলাদেশ। স্বপ্ন পূরণ হবে সকল মানুষের। স্বপ্ন দেখবে ছিন্নমূল মানুষগুলো। শেখ হাসিনার সকল স্বপ্ন বাস্তবায়ন হোক সেই প্রত্যাশায় কৃতজ্ঞ মমতাময় মা।
লেখকঃ সাংবাদিক ও কলামিস্ট।