সম্মেলনের পর দীর্ঘ এক বছরেরও বেশি সময় অতিবাহিত হয়েছে। তবে ৩য় দফায় অনুমোদন দেয়া হয়েছে রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের কমিটি। যদিও দুই দফা কমিটির নাম পাঠানো হয় কেন্দ্রে। তবে পকেট কমিটি গঠন ও কমিটিতে অনুপ্রেবেশকারীদের নাম দেয়ার অভিযোগ এবং পাল্টা অভিযোগে ওই কমিটিগুলো অনুমোদন পায়নি। শেষ পর্যন্ত দলীয় প্রধানের হস্তক্ষেপে বুধবার (৩ ফেব্রুয়ারি) ৭১ সদস্য বিশিষ্ট নতুন কমিটির অনুমোদন হয়েছে। দলের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশক্রমে এ কমিটির অনুমোদন দেন সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। বৃহত্তর দল আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী জেলা কমিটি ৭৫ সদস্য বিশিষ্ট হওয়ার কথা থাকলেও এ কমিটিতে রয়েছে ৭১ জন। আর অনুমোদিত এই তালিকায় সহ-সভাপতি পদে স্থান পেয়েছে সরকারি চাকরিজীবি ছাড়াও মৃত ব্যক্তি। দীর্ঘ সময় পরেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি না হওয়ায় দলের নেতাকর্মীদের অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক এক নেতা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘রাজশাহীতে কি আওয়ামী লীগের নেতার অভাব পড়েছে যে এতদিন পরেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি হলো না?’
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯ সালের ৮ ডিসেম্বর জেলা আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনে সভাপতি হিসেবে মেরাজ উদ্দিন মোল্লা, সাধারণ সম্পাদক হিসেবে আবদুল ওয়াদুদ দারা এবং যুগ্ম সম্পাদক হিসেবে আয়েন উদ্দিন ও লায়েব উদ্দিন লাভলুর নাম ঘোষণা করা হয়। আর পরবর্তী এক মাসের মধ্যে দলের ত্যাগী ও প্রকৃত সদস্যদের নিয়ে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করে কেন্দ্রে তালিকা পাঠানোর জন্য এই চারজনকে দায়িত্ব দেয়া হয়। তবে দলীয় কোন্দল ও নতুন নেতৃত্বের মধ্যে দ্বন্দ্বের কারণে দীর্ঘ সময় পূর্ণাঙ্গ কমিটি অনুমোদন পায়নি। শেষ পর্যন্ত অনুমোদনপ্রাপ্ত ৭১ সদস্যের এ কমিটিতে সহ-সভাপতি হিসেবে নাম থাকা অ্যাডভোকেট সুশান্ত কুমার ঘোষ মারা গেছেন প্রায় এক মাস আগে। আর আরেক সহ-সভাপতি এসএম একরামুল হক রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার বানেশ^র সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে চাকরিরত।
নতুন কমিটির অন্য ৯ জন সহ-সভাপতি হলেন- অনিল কুমার সরকার, আমানুল হাসান দুদু, অ্যাডভোকেট ইব্রাহীম হোসেন, আমজাদ হোসেন, সাইফুল ইসলাম দুলাল, অ্যাডভোকেট শরিফুল ইসলাম শরীফ, জাকিরুল ইসলাম সান্টু, শরীফ খান এবং বীর মুক্তিযোদ্ধা রিয়াজউদ্দিন আহমেদ। নতুন যুগ্ম সম্পাদক হয়েছেন অধ্যক্ষ মোস্তাফিজুর রহমান মানজাল।
কমিটির তিনজন সাংগঠনিক সম্পাদক হলেন- একেএম আসাদুজ্জামান, অ্যাডভোকেট আবদুস সামাদ এবং আলফোর রহমান। এ ছাড়া আইন বিষয়ক সম্পাদক হিসেবে অ্যাডভোকেট এজাজুল হক মানু, কুষি ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক কুমার প্রতীক দাস রানা, তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক মেহেবুব হাসান রাসেল, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক আখতারুজ্জামান আখতার, দপ্তর সম্পাদক প্রদ্যুৎ কুমার সরকার, ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক রেজাওয়ানুল হক পিনু মোল্লা, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক অধ্যক্ষ মোজাম্মেল হক, বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক কামরুল ইসলাম, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক শহিদুল করিম শিবলী, মহিলা বিষয়ক সম্পাদক পূণিমা ভট্টাচার্য, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক গিয়াস উদ্দিন, যুব ও ক্রীড়া সম্পাদক মোস্তাক আহমেদ, শিক্ষা ও মানব সম্পদ বিষয়ক সম্পাদক মামুনুর রশিদ সরকার মাসুদ, শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক মাহবুব উল আলম মুক্তি, শ্রম সম্পাদক মাহাবুবুর রহমান, সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক সোহরাব হোসেন, স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক সম্পাদক অধ্যাপক ডা. চিন্ময় কান্তি দাস, উপ-দপ্তর সম্পাদক আবদুল মান্নান, উপ-প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক মাসুদ রানা এবং কোষাধ্যক্ষ হিসেবে আজিজুল আলমের নাম অনুমোদন পেয়েছে।
গঠনতন্ত্র অনুযায়ী জেলা কমিটিতে সদস্য থাকেন ৩৬ জন। তবে ৩২ জনের নাম অনুমোদন দেয়া হয়েছে। তারা হলেন- ওমর ফারুক চৌধুরী এমপি, আসাদুজ্জামান আসাদ, জিন্নাতুন্নেসা তালুকদার, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হক এমপি, ডা. মনসুর রহমান এমপি, সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি অ্যাডভোকেট আদিবা আনজুম মিতা, রায়হানুল হক রায়হান, নাহিদুল ইসলাম নাবাব, আ.ন.ম মনিরুল ইসলাম তাজুল, সাইফুল ইসলাম বাদশা, আক্কাস আলী, অধ্যক্ষ গোলাম ফারুক, ফারুক হোসেন ডাবলু, জিএম হীরা বাচ্চু, শরীফুল ইসলাম, রোকোনুজ্জামান রিন্টু, আবু বক্কর, আবদুর রাজ্জাক, আব্বাস আলী, আবুল কালাম আজাদ, শহিদুজ্জামান শহীদ, রবিউল ইসলাম রবি, সরদার জান মোহাম্মদ, খাদেমুন নবী চৌধুরী, একেএম শামসুল হক, প্রভাষক রোকসানা মেহবুব চপলা, মর্জিনা বেগম, তৌহিদ হাসান তুহিন, নিলিমা বেগম, সুরঞ্জিৎ কুমার সরকার এবং ডা. অনিকা ফারিহা জামান অর্ণা, কাটাখালী পৌরসভার মেয়র আব্বাস আলী।
কমিটি অপূর্ণ থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে দলটির রাজশাহী বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম কামাল হোসেন বলেন, অনেক সময় ত্যাগী নেতারা কমিটি থেকে বাদ পড়ে যান। সে কারণে চারটি সদস্যপদ ফাকা রাখা হয়েছে। এসব পদের বিপরীতে ইতোমধ্যে দুটি নাম আমি পেয়েছি। জেলা আওয়ামী লীগের প্রথম সভায় পদ চারটি পূরণ হয়ে যাবে।
তিনি বলেন, কমিটির তালিকা পাঠানোর পর অ্যাডভোকেট সুশান্ত কুমার ঘোষ মারা গেছেন। কিন্তু তার নামটি কমিটিতে থেকে গেছে। তবে প্রথম সভায় এটিও সংশোধন করা হবে। আর কমিটি হলে দু’একটি নাম ঘিরে বিতর্ক থাকবে, এটাই স্বাভাবিক। তবে কমিটিতে সাবেক ছাত্রনেতাদের মূল্যায়ন করার চেষ্টা করা হয়েছে। শহীদ জাতীয় নেতা এএইচএম কামারুজ্জামানের দৌহিত্র হিসেবে ডা. অর্ণাকেও সদস্য পদে রাখা হয়েছে।