দুদকের নির্দেশে লালমনিরহাটের মহিষখোচা বহুমূখী উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজে জাল জালিয়াতির মাধ্যমে অধ্যক্ষ নিয়োগের অভিযোগের তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেছে জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস।
বৃহস্পতিবার(৪ ফেব্রুয়ারী) তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের সত্যতা নিশ্চিত করেন জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ।
দুদকে দাখিল করা অভিযোগে উল্লেখ রয়েছে, মহিষখোচা বহুমূখী উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজে গত ১৯৯৭ সালের ১৮ অক্টোবর ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিষয়ে প্রভাষক পদে যোগদান করেন শরওয়ার আলম। এরপর ২০০১ সালে এপ্রিল মাসে এমপিওভুক্ত হন। যার ইনডেক্স নং-৬১৮৪০৮। এরপর তিনি সনদ জালিয়াতি করে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে উচ্চতর বেতন নিতেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
গত ২০১১ সালের ৫ জুন কলেজ শাখার প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ শহিদুর রহমান অবসর নিলে পরদিন সহকারী অধ্যাপক শরওয়ার আলম প্রতিষ্ঠানটির ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব নেন। ওই সময় গঠিত প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা পর্ষদের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা দায়ের হলে নি¤œ আদালত ও মহামান্য হাইকোর্ট পরিচালনা পর্ষদের কার্যক্রম স্থগিতাদেশ দেন।
আদালতের নির্দেশ অমান্য করে ওই পরিচালনা পর্ষদের স্বাক্ষরে আগের পদে ইস্তফা না দিয়ে জাল জালিয়াতির মাধ্যমে একাধিক পরীক্ষায় তৃতীয় শ্রেণিপ্রাপ্ত শরওয়ার আলম গোপনে গত ২০১২ সালের ২১ জানুয়ারি অধ্যক্ষ হিসেবে যোগদান করেন। অধ্যক্ষ হিসেবে ২০১২ সালের ২১ জানুয়ারি যোগদান দেখালেও একই সালের আগস্ট মাস পর্যন্ত আগের পদের বেতন-ভাতাদি তুলে আত্মসাৎ করতেন তিনি। বিরতিহীনভাবে সহকারী অধ্যাপক ও অধ্যক্ষ পদের বেতন-ভাতাদি নিতেন বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।
অধ্যক্ষ পদে নিয়োগের জন্য ১২ বছরের এমপিওভুক্তের অভিজ্ঞতা থাকা আবশ্যক হলেও তার অভিজ্ঞতা ১১ বছরের নিচে। এ ছাড়া পরিপত্র অনুযায়ী অধ্যক্ষ পদে কোনোভাবেই তৃতীয় শ্রেণি গ্রহণযোগ্য নয়। কিন্তু শরওয়ার আলম এসএসসি ও স্নাতকে তৃতীয় শ্রেণি নিয়েও অধ্যক্ষ পদে নিয়োগ বাগিয়ে নেন। এভাবে সরকারি পরিপত্রকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ নিয়ে সরকারি বেতন-ভাতা আত্মসাৎ করেন তিনি।
অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার পরে যুক্তিবিদ্যা বিষয়ের প্রভাষক সতীশ চন্দ্র দীর্ঘদিন অনুপস্থিত থাকলেও দুই লাখ টাকার বিনিময়ে ওই প্রভাষককে সম্পূর্ণ বেতন দেন অধ্যক্ষ শরওয়ার আলম। একই সঙ্গে মর্জিনা পারভিন নামের একজনের কাছে নয় লাখ টাকা নেওয়ার পরও অফিস সহায়ক পদে নিয়োগ দেননি। রবিউল ইসলাম নামে একজনকে ১২ লাখ টাকায় অফিস সহকারী পদে নিয়োগ দিয়ে আরও দুই লাখ টাকা দাবি করেন অধ্যক্ষ শরওয়ার আলম। দাবিকৃত টাকা না দেওয়ায় তার বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট বন্ধ করেন অধ্যক্ষ। নিয়োগের নামে অধ্যক্ষ শরওয়ার আলমের বিরুদ্ধে অর্থ বাণিজ্য এবং স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ তুলে স্থানীয় ও ভুক্তভোগীরা পরিচয় গোপনের শর্তে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) একাধিক লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
অভিযোগগুলো আমলে নিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রধান কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মাসুদুর রহমান স্বাক্ষরিত ০০.০১.০০০০.১০৯.৩৮.০০১.২০-৩৩ নং স্মারকে ৭ জানুয়ারি একটি চিঠি পাঠিয়ে লালমনিরহাট জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে তদন্তের নির্দেশ দেন। তদন্ত করে আগামী ৭ ফেব্রুয়ারির মধ্যে ই-মেইলে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়।
দুদকের নির্দেশনা পেয়ে দুইটি দলে তদন্ত শুরু করেন জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস। তদন্ত শেষে বুধবার(৩ ফেব্রুয়ারী) ইমেইলের মাধ্যমে দুদক বরাবারে ৩০ পাতার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস। তদন্ত প্রতিবেদনে অভিযুক্ত অধ্যক্ষ ও বর্তমান সভাপতিসহ ৫ জনের লিখিত বক্তব্য এবং ৪টি সুপারীশ সংযুক্ত করা হয়েছে।
তদন্ত কর্মকর্তা জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ বলেন, দুদকের প্রধান কার্যালয়ের চিঠির নির্দেশনা মোতাবেক সনদ জাল ও জালিয়াতির মাধ্যমে অধ্যক্ষ নিয়োগের বিষয়টি দুইটি দলে তদন্ত করা হয়েছে। অধ্যক্ষ শরওয়ার আলমের নিয়োগের কাগজগুলেো ত্রুটিপুর্ন। তৎকালিন যারা তাকে চাকুরী দিয়েছেন তারা এ বিষয়ে জবাব দিবেন। তবে অধ্যক্ষ নিয়োগের অভিজ্ঞতা ১২ বছর প্রয়োজন হলেও এ ক্ষেত্রে তা পুরন হয়নি এবং শরওয়ার আলমের শিক্ষা জীবনে দুইটিতে তৃতীয় বিভাগ নিয়ে ৬ পয়েন্ট রয়েছে। আমরা তদন্ত প্রতিবেদন পাঠিয়েছি কর্তৃপক্ষ তা দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবেন।