আওয়ামীলীগ ও বিএনপি দেশের বড় দুই রাজনৈতিক দল। দল দুটি একাধিকবার ক্ষমতাসীন হয়েছে। দেশের অধিকাংশ নির্বাচনেই ভোট যুদ্ধে এ দুই দলের প্রার্থীদের মধ্যেই প্রতিদ্বন্দিতা দেখা যায়। আর ভোট কেন্দ্র করে সহিংসতার মত ঘটনাও পূর্বে বিভিন্নস্থানের মত ঝিনাইদহ কালীগঞ্জে কম বেশি ঘটেছে। আসন্ন পৌরসভা নির্বাচনে এই ২ দলের প্রার্থীরা দেখালেন অনুকরনীয় এক ঘটনা। যার প্রশংসা আজ সাধারন ভোটারদের মুখে মুখে। আর রাজনৈতিক বর্ষিয়ান নেতারা বলছেন কার জয় আর হার বুঝিনা। এটা রাজনীতির জয় হয়েছে।
শ্রমিক লীগ নেতা মাসুদ পারভেজ জানান,কেন্দ্রীয় মনোনয়ন বোর্ড ঘোষিত নিজ নিজ দলের মনোনয়ন ও প্রতিক পেয়ে আ’লীগ-মেয়র প্রার্থী নৌকার বর্তমান মেয়র আশরাফুল আলম আশরাফ এক মহানুভবতার পরিচয় দিয়েছেন। তিনি ছুটে গেছেন তার প্রতিপক্ষ প্রার্থী ধানের শিষের মেয়র প্রার্থী মাহাবুবার রহমানের অফিসে। তিনিও তার আপ্যায়নে কমতি রাখেননি। এ সময় তারা একই স্থানে বসে কুশল বিনিময়, পরষ্পরে করমর্দন ও হাসিমুখে একজন আরেকজনকে বুকে জড়িয়ে ধরেছেন। তাদের ভাব বিনিময়টা ছিল এমন,আমরা পরষ্পরে নিজ দলের পক্ষে ভোটে যুদ্ধে নেমেছি। কিন্তু ব্যক্তিগত ভাবে কেউ কারও প্রতিদ্বন্দি নয়। ভোটযুদ্ধে হার জিত আছেই। তবে আমরা সকলেই একই স্থান কালীগঞ্জের বাসিন্দা। উন্নয়ন চাই কালীগঞ্জ পৌরসভার। সম্প্রতি ভোটযুদ্ধে নেমে এ পৌরসভার নির্বাচনী চমকে এমন ঘটনা আজ প্রার্থীদের প্রশংসা চারদিকে ছড়িয়ে পড়েছে।
বিগত দিনের উন্নয়ন, রাজনৈতিক মেধা, সাংগাঠনিক তৎপরতাসহ যোগ্যতার ওপর ভিত্তি করে ঝিনাইদহ কালীগঞ্জের আসন্ন পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় মনোনয়ন বোর্ড থেকে আবারও নৌকা প্রতিক বর্তমান মেয়র আশরাফুল আলম আশরাফের হাতে তুলে দেয়া হয়েছে। এর আগেই দলটির বর্ধিতসভায় স্থানীয়ভাবেও সর্বসম্মতি ক্রমে তাকেই মনোনয়ন দেয়া হয়েছিল। তারুণ্যের প্রতিক আশরাফ বর্তমান কালীগঞ্জ পৌর আওয়ামী লীগের সাংগাঠনিক সম্পাদক পদে দায়িত্ব পালন করছেন। আগে দলের জন্য ঘাত প্রতিঘাত ও চড়ায় উৎরায় পার করে এসেছেন আশরাফ। একইভাবে বিএনপি’র দলীয়সূত্রে জানাগেছে, দলের বর্ষিয়ান নেতা আলহাজ¦ মাহাবুবার রহমান। বয়স ৭৫ চলছে। পার্টির প্রতিষ্ঠাতা সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের গড়ে তোলা জাগো দল থেকেই তিনি আছেন। পরে নাম পরিবর্তনে বিএনপি’র তৎকালীন সময়ের জেলা কমিটির সহ-সভাপতি ছিলেন। প্রতিষ্ঠা লগ্ন থেকে তিনি বিভিন্ন সময়ে গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিলেন। বর্তমানে আছেন কালীগঞ্জ উপজেলা বিএনপি’র আহ্বায়ক পদে। এ পর্যন্ত নির্বাচন করেছেন কয়েকটি। সর্বশেষ ২০০৪ সালে দল থেকে মনোনয়ন পেয়ে কালীগঞ্জ পৌরসভার মেয়র নির্বাচিত হন। এখানে কিছুটা হলেও দলের মধ্যে নেতায় নেতায় গ্রুপিং আছে। তিনি আসন্ন পৌরসভা নির্বাচনে দলের সবাই একবাক্যে তার নাম বলেছেন। যোগ্যতার ওপর ভিত্তি করে দলটির কেন্দ্র থেকেও ধানের শীষ প্রতিক তার হাতেই ধরিয়ে দেয়া হয়েছে।
নৌকার প্রার্থী আশরাফুল আলম আশরাফ জানান, প্রতিদ্বন্দি প্রার্থী বিএনপি’র আলহাজ¦ মাহাবুবার রহমান একজন বয়ষ্কো মানুষ। দল ভিন্ন হলেও উনি মুরব্বী। দল করতে গিয়ে সাংগাঠনিক ভাবে আপস নেই। তবে আমার দলের নেত্রীর নির্দেশ বয়ষ্কোদের সম্মান করা। তাই আমি নিজে এগিয়ে গিয়ে এটা করেছি। উনিও আমাকে পেয়ে খুশি হয়েছেন। যথেষ্ট আপ্যায়নও করেছেন। আমি খুশি।
ধানের শিষের প্রার্থী আলহাজ¦ মাহাবুবার রহমান জানান, হঠাৎ আমার অফিসে নৌকার প্রতিক ধারী স্নেহস্পদ আশরাফকে দেখে খুব খুশি হয়েছিলাম। সাধ্যমত আপ্যায়ন করেছি। নির্বাচনে জয় পরাজয় থাকবে এটা সাভাবিক। কিন্তু রাজনৈতিক ভাবে এমন সহাবস্থান থাকা খুবই জরুরী। তাহলেই পরবর্তী প্রজন্ম এটাই শিখবে।
কালীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক শহিদুল ইসলাম জানান, রাজনৈতিক জীবনে বিরোধীদের সাথে পাল্টা আছে ভোটের যুদ্ধে। কিন্তু যে দলের মানুষই হোক না কেন পরষ্পরের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ থাকতে হবে। তাহলে ক্ষমতায় যারাই যাক না কেন দেশটা হবে সুন্দর। আওয়ামীলীগ- বিএনপি’র দলীয় দুই মেয়র প্রার্থী যেটা করেছে অবশ্যই প্রশংসা পাওয়ারযোগ্য। তবে সেটা হতে হবে আন্তরিকতার সাথে। আওয়ামী লীগের বর্ষিয়ান নেতা কালীগঞ্জ উপজেলা আ.লীগের সাবেক সাধারন সম্পাদক ইসরাইল হোসেন জানান, তাদের দুই জনের হাসিমুখের শুভেচ্ছা বিনিময় দেখে মনে হচ্ছে জীবনভর নিজের চিন্তা না করে দলের ভাবনাটা ভেবেছি। এখন দেখছি আমরা ভবিষৎ প্রজন্ম যা রেখে যাচ্ছি তারা অবশ্যই ভালো করবে। নৌকা প্রতিকের স্নেহস্পদ আশরাফের এমন উদারতার কর্মে আমি ব্যক্তিগতভাবে গর্বিত। মনে হচ্ছে পরবর্তী প্রজন্ম ভাল ভাবেই আমরা গড়তে পেরেছি।