বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় (বেরোবি) ক্যাম্পাসে সকল প্রকার সভা, মিটিং, সমাবেশ ও মৌন মিছিল নিষিদ্ধের স্বৈরাচারী নির্দেশনার প্রতিবাদে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
রোববার (৭ ফেব্রুয়ারি) বেলা ১১টায় পার্কের মোড় সংলগ্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ২নং গেটের সামনে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
মানববন্ধনে শিক্ষার্থীরা বলেন, বর্তমান ভিসি কলিমউল্লাহ একজন স্বৈরশাসকের মত আচরণ করছেন। তিনি নিজেই অনিয়মের পাহাড় গড়ে তুলেছেন, আর তার অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে যেন কেউ কথা বা প্রতিবাদ না করতে পারে সে কারণেই এমন উদ্ভট সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। বিশ্ববিদ্যালয় হবে মুক্তাঙ্গন কিন্তু প্রশাসনের এমন নির্দেশনা মূলত স্বৈরতন্ত্রের শামিল। যদি এই স্বৈরাচারী নির্দেশনা দ্রুত প্রত্যাহার না করা হয় তাহলে তীব্র থেকে তীব্রতর আন্দোলন গড়ে তুলবে সাধারণ শিক্ষার্থীরা বলেও হুশিয়ারি উচ্চারণ করেন বক্তারা।
শিক্ষার্থীরা আরো বলেন, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭৫ একরের সব জায়গায় আমাদের অধিকার আছে। যদি বলেন প্রশাসনিক ভবনে প্রবেশ করতে আমাদের পারমিশন নিতে হবে। আমরা কার কাছে পারমিশন নিবো। নির্দেশনায় বলা হয়েছে ঝুঁকিপূর্ণ ব্যাক্তি প্রশাসনিক ভবনে প্রবেশ করতে পারবেনা। কিন্তু আমাদের প্রশ্ন এই ঝুঁকিপূর্ণ ব্যাক্তি আসলে কারা? শিক্ষার্থীদের উত্তর আসবে এই ক্যাম্পাসের সবথেকে ঝুঁকিপূর্ণ ব্যাক্তি ভিসি কলিমউল্লাহ ও তার অনুসারীরা।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃষ্টি আকর্ষণ করে বক্তারা বলেন- মমতাময়ী আপনি দেখেন, উত্তরবঙ্গের সন্তানদের যে উচ্চশিক্ষার আশায় এই বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছেন, তার সম্পূর্ণ ভেস্তে দিচ্ছে ভিসি কলিমউল্লাহ। এই অদক্ষ ভিসি ক্যাম্পাসে অনুপস্থিত থেকে ঢাকার লিয়াজোঁ অফিসে বসে বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মানকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছেন।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে উদ্দেশ্য করে বক্তারা আরো বলেন- শিক্ষার্থীদের পতিতা, হকার ও কুলাঙ্গার বলে কটূক্তিকারী সেই তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারী খোরশেদের বিরুদ্ধে আপনাদের অবস্থান প্রশ্নবিদ্ধ। সমালোচনার পরেও ভিসি সেই কর্মচারির বাড়িতে দাওয়াত খেতে যাওয়াই প্রমাণ করে তিনি কতটা শিক্ষার্থী বান্ধব। শুধু তাই নয়, খোরশেদের সেই ইস্যু ঢাকতেই ভিসি কলিমউল্লাহ মূল ফটকের নকশার নাটক সাজিয়েছেন বলে অভিযোগ বক্তাদের। এ সময় দ্রুত খোরশেদের শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানায় তারা।
মানবন্ধন শেষে এক বিক্ষোভ মিছিল বের করে শিক্ষার্থীরা। মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের মূলফটক থেকে শুরু করে প্রশাসনিকভবনসহ ক্যাম্পাসের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে শেখ রাসেল মিডিয়া চত্বরে এসে এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়।
প্রসঙ্গত, গত ৩১ জানুয়ারি ঢাকার লিয়াজোঁ অফিসে অনুষ্ঠিত হওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতিনির্ধারণী ফোরাম সিন্ডিকেটের ৭৫তম (বিশেষ) সভায় প্রশাসন ভবন, ভিসির বাংলো, অ্যাকাডেমিক ভবন এবং শ্রেণিকক্ষের সামনে মিছিল-মিটিং, অবস্থান ধর্মঘট, বিক্ষোভ প্রদর্শন, স্লোগান, বক্তব্য প্রদান ও মৌন মিছিলসহ প্রতিবাদের অংশ হিসেবে তালা লাগিয়ে প্রতিবাদের কর্মকা-ে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। নির্দেশনা রোববার পর্যন্ত (৭ ফেব্রুয়ারি) প্রত্যাহারের দাবিতে ৭২ ঘন্টার আল্টিমেটাম দিয়েছে বেরোবি শাখা ছাত্রলীগ। এই নির্দেশনার প্রতিবাদ জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মকর্তা ও কর্মচারিদের সর্ববৃহত সংগঠন অধিকার সুরক্ষা পরিষদ, বঙ্গবন্ধু পরিষদ বেরোবি শাখা, ও বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন।