রংপুরের পীরগাছায় এক কিশোরীকে ধর্ষণের ফলে সন্তান জন্মদানের ঘটনায় দায়েরকৃত মামলায় অভিযুক্ত ব্যক্তির যাবজ্জীবন কারাদ-ের আদেশ দিয়েছেন বিচারক।
সোমবার (৮ ফেব্রুয়ারি) বেলা দেড়টার দিকে রংপুরের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালত-২ এর বিচারক মো. রোকনুজ্জামান এ রায় দেন। এছাড়াও ওই সন্তানের ভরণপোষণ প্রদানসহ ধর্ষকের ওয়ারিশ হিসেবে ঘোষণা দেন বিচারক। রায় ঘোষণার সময় অভিযুক্ত শফিকুল ইসলাম আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
ভুক্তভোগী, মামলার বিবরণ ও আদালত সূত্রে জানা যায়, পীরগাছার অন্নদানগর ইউনিয়নের অন্নদানগর গ্রামের দিনমজুর হানিফ উদ্দিন অনেক আগে দুই মেয়ে, এক ছেলে ও স্ত্রীকে রেখে অন্যত্র চলে যান এবং আরও একটা বিয়ে করেন। সেই থেকে ছেলে-মেয়েদের নিয়ে ওই ইউনিয়নের সাতদরগাহ হরিচরণ গ্রামে মায়ের বাড়িতে বসবাস করে আসছেন হানিফ উদ্দিনের স্ত্রী।
এদিকে, হানিফের বড় মেয়েকে (তৎকালীন ১৪ বছর বয়স) প্রায়ই উত্ত্যক্ত করতেন প্রতিবেশী মৃত মজিবর রহমানের ছেলে পান ব্যবসায়ী শফিকুল ইসলাম (তৎকালীন ২২ বছর বয়স)।
একপর্যায়ে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ওই কিশোরীর সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক গড়ে তোলেন শফিকুল। ঘটনার দিন ২০০৭ সালের ২৬ অক্টোবর বিকেলে বাড়িতে কেউ না থাকার সুযোগে ওই কিশোরীকে ধর্ষণ করেন শফিকুল। পরে মেয়েটি অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়লে বিষয়টি জানাজানি হয়। ২০০৮ সালের ১ ফেব্রুয়ারি ওই বাড়িতে গিয়ে জোরপূর্বক গর্ভপাত ঘটানোর জন্য চাপ প্রয়োগ করতে থাকেন শফিকুল ও তার স্বজনরা। পরবর্তীতে ধর্ষণের ঘটনা এবং সন্তানের স্বীকৃতি অস্বীকার করলে প্রায় চার মাসের অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় ওই বছরের ১০ ফেব্রুয়ারি পীরগাছা থানায় মামলা করতে গেলে থানা থেকে তাদেরকে আদালতে মামলা দায়েরের পরামর্শ দেয়া হয়। পরে মেয়েটি নিজে বাদী হয়ে ২০০৮ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি আদালতে শফিকুলসহ তার বাবা মজিবর, চাচা মমতাজ উদ্দিন ও ফুফ নজিরনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন। মামলা চলাকালীন অবস্থায় মজিবর মারা যান এবং ২০০৮ সালের ৪ আগস্ট একটি ছেলে সন্তানের জন্ম দেয় ওই কিশোরী।
এদিকে, শফিকুলও অন্যত্র বিয়ে করে সংসার শুরু করেন।
পরবতীীতে আদালতের নির্দেশে ধর্ষণে জন্ম নেয়া শিশুর এবং ধর্ষকের ডিএনএ পরীক্ষা ও ৬ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে দীর্ঘ ১৩ বছর পর সোমবার এ রায় ঘোষণা করা হয়। রায়ে অপর দুই আসামিকে খালাস দিয়েছেন বিচারক।
মামলার রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালত-২ এর পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) জাহাঙ্গীর হোসেন তুহিন বলেন, যাবজ্জীবন কারাদ- ছাড়াও এক লাখ টাকা জরিমানা আদায় এবং ধর্ষকের ওয়ারিশ হিসেবে সম্পত্তির অংশীদারিত্বের রায় দিয়েছেন বিচারক।
যদি ধর্ষকের কোনো সম্পত্তি না থাকে তাহলে ওই শিশুর ব্যয়ভার রাষ্ট্রকে নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
আসামিপক্ষের আইনজীবী ছিলেন অ্যাডভোকেট জহুরুল ইসলাম।