আগামী ১৪ই ফেব্রুয়ারী রাজশাহীর তানোর পৌরসভা নির্বাচন। এ নির্বাচনকে ঘিরে আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়রপ্রার্থী ইমরুল হক বিদ্রোহী বেড়াকলে পড়েছেন। এতে দলের নিবেদিতরা কোণঠাসা হয়ে হায়হুতাশ করছেন। ফলে সম্প্রতি নৌকা বিভক্তির আভাস শুরু হয়েছে। গত (৮ ফেব্রুয়ারী) বিকেলে অনুষ্ঠিত হয় নৌকার সমাবেশ। ওই সমাবেশে দেখা গেছে বিপুল পরিমান নৌকা বিদ্রোহী মুখ।
তথ্যানুন্ধানে জানা গেছে, গেলো ৩০ জানুয়ারী তৃতীয় ধাপে মুন্ডুমালা পৌরসভা নির্বাচন শেষ হয়। ওই নির্বাচনে মেয়রপদে আ.লীগের বহিস্কৃত বিদ্রোহী প্রার্থী সাইদুর রহমান মাত্র ৬১ ভোটে নির্বাচিত হন। এতে উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি গোলাম রাব্বানী ও সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মামুন ছাড়াও হাতুড়লীগ নামে পরিচিত নেতা রাব্বানীর ভাই শরিফুল ইসলামসহ তাদের কর্মী সমর্থকরা নেচে গেয়ে আনন্দ উল্লাসে আর রঙ্গে ভঙ্গে ফেটে পড়েন। নেতাকর্মীরা বলছেন, ওপারে (মুন্ডুমালা) জগের জলে যারা নৌকা ডুবিয়েছেন তারাই দল বেধেঁ এপারে (তানোর) নৌকা ভাসানো নাটকের মূল হোতা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বিগত ২০১৯ সালের ১০ মার্চ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ওর্য়াকার্স পার্টির সমর্থনে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন ওই শরিফুল। কিন্তু আ.লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী লুৎফর হায়দার রশিদ ময়নার কাছে বিপুল ভোটে পরাজিত হন তিনি। এরআগে কৃষক লীগ ও পরে যুবলীগের নেতার পরিচয়ে এলাকায় বিভিন্ন অপকর্ম ছিলো তার। তিনি আ.লীগ সভাপতি গোলাম রাব্বানীর ভাই হবার সুবাদে দাপট দেখিয়ে বিএমডিএর সহকারী প্রকৌশলীকে লাঞ্ছিত করে মারধর করেনও তিনি। বর্তমানে আ.লীগের বিদ্রোহীদের নেতৃত্বে রয়েছেন শরিফুল।
ওই নির্বাচনে আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মামুন শরফিুলের পক্ষে ছাপট দেন। এতে কামারগাঁ ইউপির কচুয়া তার ভোটকেন্দ্রে দুর্বল ওর্য়াকার্স পার্টির হাতুড়ি প্রতীকের কাছে নৌকা বিপুল ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হয়। অথচ ওই কচুয়া কেন্দ্রেই মামুন ভোটার।
স্থানীয়রা বলছেন, যেখানে আওয়ামী লীগের দূর্গ। দেশ স্বাধীনের পর যেকোনো নির্বাচনে ওই কেন্দ্রে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়। কিন্তু আ.লীগের সাধারণ সম্পাদকের ঈশারায় ও ইন্ধনে তার কেন্দ্রেই নৌকাকে ডুবিয়েছেন মামুন। ফলে ইতিহাসে ওই কেন্দ্রে এটাই প্রথম পরাজয় ঘটেছে আ’লীগের। তারপরও আ.লীগ মনোনীত প্রার্থী লুৎফর হায়দার রশিদ ময়না চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।
এরআগে ২০০৯ সালের দিকে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আ.লীগের দলীয় মনোনয়নে নির্বাচন করেন সভাপতি গোলাম রাব্বানী। এতে বিদ্রোহী হিসেবে নির্বাচনে দাঁড়িয়ে ছিলেন সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মামুন। ফলে সভাপতি ও সম্পাদক উভয়ের পরাজয় হটে। জয় হয় বিএনপির।
অপরদিকে, গেলো ৩০ জানুয়ারী মুন্ডুমালা পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের চুনিয়াপাড়া কেন্দ্রে ভোট দেন তানোর উপজেলা আ.লীগ সভাপতি গোলাম রাব্বানী। ওই কেন্দ্রই বিপুল ভোটে পরাজয় ঘটেছে নৌকার। বিশ্লেষনে দেখা গেছে, বিগত ১০ বছরের ইতিহাসে রাব্বানী-মামুনের বেড়াকলে তানোর আ.লীগ ক্ষমতার দ্বন্দ্বে সর্বশান্ত হচ্ছে। সেই উপজেলা পরিষদ নির্বাচন থেকে মুন্ডুমালা পৌর পরিষদ নির্বাচনে আ.লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের ঈশারায়, ইন্ধনে ও খেদমতে কেবল তাদের ভোট কেন্দ্রেই আ.লীগের ভরাডুবি ঘটেছে।
এছাড়া উপজেলার কলমা ইউনিয়নে আ.লীগের মনোনীত প্রার্থীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহী হিসেবে বেশ কয়েক বার চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করে পরাজিত হন রাব্বানী অনুসারী নেতা রেজাউল করিম। তিনিও ছিলেন গতকাল সোমবারের বিদ্রোহী মঞ্চে। সম্প্রতি পৌর নির্বাচনে ওইসব বিদ্রোহীদেরকেই দেখা গেছে একত্রে। তবে, এ ব্যাপারে শরিফুল ইসলাম ও রেজাউল করিম জানান, আ.লীগের সুবিধা বঞ্চিত নেতা তারা ও তাদের লিডার রাব্বানী-মামুন। তাদের অনুসারী নেতাকর্মীদের নিয়ে এবার চমক দেখাবেন অপেক্ষা করুন বলে জানান তারা।
নাম প্রকাশে এক আ.লীগ নেতা জানান, মূলত জেলা আ.লীগের বর্তমান সভাপতি মেরাজ উদ্দিন মোল্লা তিনিই হচ্ছেন বিদ্রোহীদের ইন্ধনদাতা ও মূল হোতা। ২০০৮ সালে রাজশাহী-৩ (পবা মোহনপুর) আসনে এমপি নির্বাচিত হন মেরাজ মোল্লা। এ সুবাদে তার পুত্র মাদকের গডফাদার হয়ে উঠেন। পরে ট্রাকসহ তার পুত্র পুলিশের হাতে ধরা পড়েন। ফলে দলীয় মনোনয়ন তার হারিয়ে যায়। এরপরও নৌকার বিরুদ্ধে ২০১৪ সালে নির্বাচন করে বিপুল ভোটে পরাজিত হন মেরাজ মোল্লা।
সম্প্রতি গত জাতীয় নির্বাচনে এমপি প্রার্থী ঘোষনা দেন রাব্বানী। কিন্তু তিনি জনবিছিন্ন নেতা হবার কারণে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা বা আ.লীগের মনোনয়ন ও সমর্থন পাননি। এতে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে তার অনুসারী নেতাকর্মীকে উসঁকে দিয়ে কৌশলে দলের ভিতরে ও বাইরে বিভক্তির সৃষ্টি করে চলেছেন। বর্তমানে তানোর পৌর নির্বাচনেও আ.লীগের মেয়র প্রার্থী ইমরুল হকের ভোট প্রার্থনায় তারা উদাসিন।
এব্যাপারে মুন্ডুমালা পৌরসভার নাগরিক জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি শরিফ খাঁন বলেন, তানোরে বিদ্রোহীর বেড়াকলে নৌকার সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। ওই সমাবেশে তাকে ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান যুবলীগের সংগ্রামী সভাপতি লুৎফর হায়দার রশিদসহ দলের একটি বড় অংশের নেতাকর্র্মী ও সমর্থকদের জানানো হয়নি। বর্তমানে আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়রপ্রার্থী ইমরুল হক বিদ্রোহী বেড়াকলে পড়েছেন। এতে দলের নিবেদিতরা কোণঠাসা হয়ে হায়হুতাশ করছেন। ফলে সম্প্রতি নৌকা বিভক্তির আভাস শুরু হয়েছে। ওই সমাবেশে দেখা গেছে বিপুল পরিমান নৌকা বিদ্রোহী মুখ।
তিনি আরও বলেন, মুন্ডুমালা পৌর নির্বাচনে তানোর আ.লীগ সভাপতির ঈশারায়, ইন্ধনে ও খেদমতে তীরে এসে তার কেন্দ্রেই নৌকাকে ডুবিয়েছেন রাব্বানী। আর এপারে (তানোর) নৌকাকে ভাসাতে রাব্বানী-মামুন নাটকের সৃষ্টি করে চলেছেন। এতে নেতাকর্মী ও সমর্থকদের মাঝে মিশ্রপ্রক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। তিনি দলের ভিতরে আন্ত:দ্বন্দ্ব ভুলে সবাইকে আগামীতে প্রধানমন্ত্রী ও সাংসদ ফারুক চৌধুরীর হাতকে শক্তিশালী করার আহবান জানান।
মুন্ডুুমালায় নৌকা ডুবিয়ে তানোরে উদাসীন ব্যাপারে জানতে চাইলে এড়িয়ে গিয়ে উপজেলা আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, দলে অন্ত:দ্বন্দ্ব থাকবেই। ভোট পরে সব ঠিক হয়ে যাবে। পৌর মেয়র নেবার পর আগামীতে সভাপতি গোলাম রাব্বানীকে এমপি নির্বাচিত করেই আরও একটি চমক দেখাবেন বলে জানান মামুন। তবে, এনিয়ে তানোর আ.লীগ সভাপতি গোলাম রাব্বানীর মোবাইলে একাধিকবার ফোন দেয়া হলেও রিসিভ হয়নি।