একটি দূর্ঘটনা পথে বসিয়েছে কাজলের পরিবারকে। অর্ধেক শরীর প্যারালাইজড। বরণ করেছেন পঙ্গুত্ব। চলেন হুইল চেয়ারে। উপার্জন নেই। ছেলে সন্তানও নেই। বসত ভিটে বিক্রি করে মিটিয়েছেন চিকিৎসার ব্যয়। এখনো সুস্থ্য হতে পারেননি। অর্থাভাবে ঠিকমত খেতে পারছেন না ঔষধ। খাদ্য সংকটে কাঁদছে পরিবার। দুই মেয়ের পড়ালেখা বন্ধ। সন্তানদের আহার ঠিকমত যোগাড় করতে না পারার যন্ত্রণায় হরদম কাঁদছে কাজল। চারিদিকে দেখছেন অন্ধকার। অত্যন্ত কষ্ট ও বেদনার দিনক্ষণ পার করছেন কাজল। সামান্য আয় রোজগার ছাড়া কিভাবে বেঁচে থাকবে কাজলের পরিবারের ৪ সদস্য? তাই সমাজের বিত্তবান ও সরকারের কাছে দু’মুঠো ভাত খেয়ে বাঁচার আকুতি কাজলের। কাজল ও তার পারিবারিক সূত্র জানায়, দরিদ্র পরিবারে জন্ম কাজল মিয়ার। পড়া লেখা করতে পারেননি। বয়স ৪৪ বছর। ছোট কাল থেকেই রিকশা চালিয়ে অর্থ উপার্জন করছিলেন। গত ৭ বছর ধরে ভ্যান গাড়ি চালাচ্ছেন। সারা দিনে যা আয় হয় তা দিয়েই চলত কাজলের পরিবার। মাত্র আধা শতক জায়গার মালিক কাজল। সেখানে ছোট একটি দু’চালা টিনের ঘরে গিজাগিজি করে থাকতেন পরিবারের ৬ সদস্য। ৪ কন্যা সন্তানের জনক কাজলের সংসার চলছিল কষ্টেশিষ্টে। ২ মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। তৃতীয় মেয়ে জেসমিন (১১) সরাইল পাইলট বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের ৬ষ্ট শ্রেণির ছাত্রী। চতুর্থ মেয়ে স্বপ্না (০৮) নিজসরাইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেণির ছাত্রী। কাজলের রোজগার দিয়েই চলছিল গোটা পরিবার। কিন্তু কে জান্ত? হঠাৎ করে অন্ধকার নেমে আসবে কাজলের জীবনে। একটি সড়ক দূর্ঘটনা কেড়ে নিল কাজলের জীবনের সকল সুখ ও স্বপ্ন। ২০২০ সালের ২৫ জুলাই কাজল মাল বোঝাই গাড়ি নিয়ে যাচ্ছে চুন্টা। দুপুর ঠিক ১২টা। রসুলপুর উত্তর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কাছে যাওয়ার পরই ঘটে দূর্ঘটনা। আচমকা একটি ফুটবল মাথায় আঘাত করে কাজলকে। প্রথমে চোখে অন্ধকার দেখেন। পরে কিছু আর বলতে পারেন না। জ্ঞান ফেরার পর দেখেন ভ্যান গাড়িটি কাজলের কোমরের উপর। লোকজন টেনে গাড়ি সরাচ্ছেন। কয়েকজন লোক কাজলকে চাকার নীচ থেকে তুলার চেষ্টা করছেন। ততক্ষণে কাজলের জীবনের ১২টা বেজে গেছে। শতবার ওঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেও পারছিলেন না। ব্যাথায় চিৎকার করছিলেন কাজল। তরতাজা সচল কাজলকে চোখের পলকে বরণ করতে হল পঙ্গুত্ব। মেরূদন্ড ভেঙ্গে কোমরের নীচ থেকে দুই পা একেবারে অবশ। আকাশ ভেঙ্গে মাথায় পড়ে কাজলের স্ত্রী ও দুই মেয়ের। পরিবারে আহারের ব্যবস্থাই নেই। তার উপর কাজলের ব্যয়বহুল চিকিৎসা। ঢাকা মেডিকেল ও পঙ্গু হাসপাতালে দীর্ঘ দিন চিকিৎসার পরও পঙ্গুত্ব ঘুছেনি তার। সরাইলে এসে একজন পল্লী চিকিৎসকের কাছে ২০-২২ দিন থেকে চিকিৎসা করে খুঁইয়েছেন ২২ হাজার টাকা। পরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হয়ে ২ মাস চিকিৎসা নিয়েছেন। চিকিৎসায় এ পর্যন্ত চলে গেছে ২ লাখ ৬৫ হাজার টাকা। নিরূপায় হয়ে শেষ আশ্রয়স্থল বসত ভিটেটি বিক্রি করে দিয়েছেন। ওদিকে অর্থাভাবে অর্ধাহারে অনাহারে চলছে তার সংসার। সপ্তাহে ৯ শত টাকার ওষুধ ক্রয় কাজলের জন্য বড়ই দু:সাধ্য ব্যাপার। বন্ধ হয়ে গেছে কাজলের দুই মেয়ের পড়ালেখা। খেয়ে বাঁচার সকল অবলম্বনই শেষ তার। সন্তানদের মুখে আহার দিতে কাজলের স্ত্রী এখন অন্যের বাড়িতে কাজ করছেন। আর হুইল চেয়ারে ঘুরে কাজল মানুষের সহযোগিতা চাইছেন। আর স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে খেয়ে বাঁচার আকুতি করছেন দ্বারে দ্বারে। সারাক্ষণ চোখের জল ফেলে মানুষের সাহায্য চাইছেন। কাজলের ৪ সদস্যের পরিবারকে বাঁচিয়ে রাখতে এখন ভরসা শুধু আল্লাহ। কাজল কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, কখনো কল্পনা করিনি আমি এভাবে অচল হয়ে যাব। বেঁচে থাকার জন্য কঠোর পরিশ্রম করেছি। সন্তানদের মুখে খাবার দিতে পেরে পরিশ্রম ভুলে গেছি। তাদের হাঁসিতে কষ্ট চলে গেছে। এখন তারা এক বেলা খেলে দুই বেলা খেতে পারছে না। এই কষ্ট বুকে চেপে বাঁচার ইচ্ছে করছে না। বাবা হয়ে সহ্য করতে পারছি না। দু:খে কলিজা ছিঁড়ে যাচ্ছে। সরকার ও সমাজের বিত্তবানরা সাহায্য না করলে আমার দুই কন্যাশিশু উপোস থাকবে। তাদের পরিণতি কি হবে আল্লাহই জানেন। আমি তো কোন উপায় দেখছি না। খোদা কি আমার দিকে ফিরে তাকাবেন? কাজল সরাইল সদর ইউনিয়নের দক্ষিণ আরিফাইল গ্রামের ছায়েব আলীর ছেলে। ছয় মাস আগে সড়ক দূর্ঘটনায় পঙ্গু হয়ে যান ভ্যান চালক কাজল। একেবারে বন্ধ হয়ে যায় রোজগারের পথ। অর্থাভাবে গত ৬ মাস ধরে অত্যন্ত কষ্টে চলছে কাজলের স্ত্রী সন্তান। দুই কন্যা শিশুর ভবিষ্যৎ ও এখন অনিশ্চিত। দিশেহারা এখন অসুস্থ কাজল।