রাজশাহীর পুঠিয়ায় মহামান্য হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখায়ে ফসলী জমিতে পুকুর খনন করাা হচ্ছে। এদিকে উপজেলা প্রশাসন সভা সমাবেশ করে পুকুর খনন করা বন্ধ করতে পাড়চ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। উপজেলা বলছে, চলতি বছরে পুকুর খননকারীরা হাইকোর্ট হতে এমনভানে পুকুর খননের আদের্শ নিয়ে আসছে। যেখানে নিদিষ্ট করে জমির দাগ নম্বার দেয়া থাকছে না। এখানে আমরা পুকুর খননের বাধা সৃষ্টি করলে কোর্ট অবমাননা হবে।
জানা গেছে, কৃষি জমিতে পুকুর খনন বন্ধ করতে গত দু’বছর আগে জনস্বার্থে মহামান্য হাইকোর্টে ২৪৭৬/২০১৯ নম্বরে একটি রীট আবেদন করা হয়। ওই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত গত ২০১৯ সালে কৃষি জমির শ্রেণী পরিবর্তন বা পুকুর খনন না করতে আদেশ দেন। পাশাপাশি কোথাও পুকুর খনন করলে,উপজেলা প্রশাসনকে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করার নির্দেশ দেয়া হয়। কিন্তু আদালতের নিষেধাজ্ঞাকে অমান্য করে মৎস্য ব্যবসায়িরা উপজেলার একাধিক স্থানে পুকুর খনন কাজ শুরু করছেন। উপজেলা মাসিক আইনশৃংখলা সভায় একাধিকবার যেখানে সেখানে নতুন পুকুর খনন না করার বিষয়ে আলোচনা সভা হয়েছে। গত ২৪ ডিসেম্বর উপজেলা পরিষদের উদ্যোগে উপজেলা জুড়ে নতুন পুকুর খননকারীদের নিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার হল রুমে নতুন পুকুর খনন বন্ধ জন্য সমাবেশ করা হয়েছে। তারপরও কোনো ভাবেই পুকুর খনন করা বন্ধ করা যাচ্ছে না। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শামসুন নাহার ভুইয়া বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ আছে দ্বি-ফসলী জমিতে পুকুর খনন করা যাবে না। অথচ এখানে কেউ সে আইন বা নির্দেশনা মানছেন না। যার যেখানে ইচ্ছে অপরিকল্পিত ভাবে পুকুর খননের কাজ করছে। এতে করে বর্ষা মৌসুমে মাত্রাতিরিক্ত জলাবদ্ধতায় ফসলহানী ঘটছে। আর ফসলী জমিতে পুকুর খননের আগে আমাদের নিকট কেউ কোনো অনুমতিপত্র নেয়ার প্রয়োজন মনে করছে না। স্থানীয়দের কথা, যাদের রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক শক্তি আছে। শুধু তাড়াই পুকুর খনন করছে। অবশ্য উপজেলা প্রশাসন পুকুর খনন বন্ধ করা জন্য ভ্রাম্যমাণ আদালত নিয়ে ঘটনা স্থলে যেতে দেখা যাচ্ছে। কিন্তু অজ্ঞাত যাদু কাঠির ছোঁয়ায় বন্ধ থাকছে না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এলাকাবাসীদের অভিযোগ, উপজেলা প্রশাসন ও থানা পুলিশ পুকুর খননের কাজ বন্ধ করে দিচ্ছেন। তারপর কয়েক দিন বন্ধ থাকার পর পূর্ণরায় আবার খনন কাজ শুরু হচ্ছে। পুকুর খননকারীরা রাতের আঁধারে গোপনে খনন করে ফেলছে। এলাকার এক শ্রেণীর মৎস্য ব্যবসায়ীরা বেশী টাকার লোভ দেখায়ে ফসলী জমিতে কয়েকটি স্কেভেটার মাধ্যমে দ্রুতগতিতে পুকুর খনন করতে দেখা যাচ্ছে। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, উপজেলার কোনো পুকুর খনন দীর্ঘ দিন যাবত ধরে বন্ধ হয়ে থাকছে না। পুকুর খননকারীরা রাজনৈতিক নেতাদের দ্বারায় উপজেলা প্রশাসনকে চাপ দিলে তারা ঢিলেঢালা ভাবে পুকুর খননের ওপর পদক্ষেপ নিতে দেখা যাচ্ছে। কয়েকটি পুকুর আবার বিলে বৃষ্টির পানি প্রবাহের স্থলে খনন করার অভিযোগ উঠেছে। এতে করে এলাকার বেশীর ভাগ সাধারন কৃষক বিলে পানি বন্দি থেকে প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ টাকার ফসলহানী হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। দেখা গেছে, বেশীর ভাগ খননকৃত পুকুর গুলো ধান চাষের উপযোগী কিংবা বিভিন্ন বিলের নিচু জমি। অনেক স্থানে বর্ষা মৌসুমে বিলের পানি প্রবাহের গতিপথে পুকুরের বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে। পুকুর খননকারীরা প্রথমে কৌঁশলে ফসলী জমিতে এলাকার শ্রমিক দিয়ে পুকুর খননের পাড় বেঁধে নিচ্ছেন। তারপর পুকুর সংস্কার করার নামে বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে আবেদন করে পুকুর খননের কাজ সম্পন্ন করছে। পুকুর খননকারীরা প্রতিনিয়ত মাটি সড়কে ফেলে মানুষের যাতায়াতের দুর্ভোগ সৃষ্টি করছে। কিন্তু প্রশাসনের খননকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহন করা হচ্ছে না। এতে করে এলাকার সড়কগুলো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ৮৭৯ শিলমাড়িয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সাজ্জাদ হোসেন মুকুল বলেন, অবৈধ পুকুর খননের বিষয়টি উপজেলা প্রশাসন, থানা পুলিশসহ একাধিক আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর লোকদের আমি নিজ উদ্যোগে কয়েক বার জানিয়েছি। কিন্তু কোনো লাভ হয়নি।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নুরুল হাই মোহাম্মদ আনাছ বলেন,চলতি বছরে পুকুর খননকারীরা হাইকোর্ট হতে এমনভানে পুকুর খননের আদের্শ নিয়ে আসছে। যেখানে নিদিষ্ট করে জমির দাগ নম্বার দেয়া থাকছে না। এখানে আমরা পুকুর খননের বাধা সৃষ্টি করলে কোর্ট অবমাননা হবে। যে এলাকায় ফসলী জমিতে পুকুর খনন হচ্ছে। সেই এলাকার মানুষদের প্রতিবাদ করতে হবে।