রাত পোহালেই ১৪ ফেব্রয়ারী রাজশাহীর তানোর পৌরসভা নির্বাচন। সেই সুবাদে শুক্রবার মধ্যরাতে শেষ হয় প্রর্থীদের প্রচার-প্রচারণা। এই নির্বাচনে বিশেষ করে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও সমর্থদের চতুরমুখি প্রচারণা ছিল বেশ চমকপ্রদ। ফলে তাদের কৌঁসুলি প্রচারণায় ভোটারা অভিভূত। এবারের নির্বাচনে ধানের শীষের ভোট ব্যাংক ভেঙ্গে নৌকার পালে হাল ধরেছেন ভোটারা। এমনতি বলছেন সাধারণ ভোটার ও দলের নেতাকর্মী ও সমর্থকরা। ফলে বিএনপির দুইযুগের আধিপত্যের অবসান ঘটানোর অপেক্ষায় পৌরবাসি।
নির্বাচনী পর্যবেক্ষণ সূত্র বলছে, বিশেষ করে পৌরসভার ৭ ও ৮ নম্বর ওয়ার্ডে বিপুল ভোটের ব্যবধানে আ.লীগ প্রার্থীর পরাজয় ঘটে। এতে হারিয়ে যায় মেয়রপদ। এভাবে হারানো জালে দুইযুগেও বেশি সময় কেটে গেছে। ফলে তানোর পৌর নির্বাচনে ২৭ বছর ধরে বিজয়ের স্বাদ পায়নি আ’লীগ। সম্প্রতি আ.লীগের মধ্যে বিভেদ মিটিয়ে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও যুবলীগের সংগ্রামী সভাপতি লুৎফর হায়দার রশিদ ময়নার নেতৃত্বে ঐক্যের ডাকে সারা জানিয়েছে সর্বস্তরের মানুষ।
উপজেলা নির্বাচন অফিসে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তানোর পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনীত নৌকার মেয়রপ্রার্থী ইমরুল হক, বিএনপি মনোনীত ধানের শীষের প্রার্থী জেলা বিএনপির অন্যতম সদস্য বর্তমান মেয়র মিজানুর রহমান মিজান ও বিএনপির বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থী আবদুল মালেক মন্ডল। তার প্রতীক নারিকেল গাছ। ভোটাররা বলছেন, নির্বাচনে মূলত নৌকা ও ধানের শীষ প্রার্থীর মধ্যে চুড়ান্ত লড়াই হবে।
এদিকে, নির্বাচন সুষ্ঠ ও স্বাভাবিক রাখতে প্রশাসন রয়েছে তৎপর। ভোটগ্রহণের পূর্ববর্তী দুইদিন হতে পরবর্তী ৫ দিনের মধ্যে অস্ত্রের লইন্সেসধারীগণের অস্ত্রসহ চলাচল করার উপর গত ১১ ফেব্রুয়ারী নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে গণবিজ্ঞপ্তি জারি করেন জেলা প্রশাসক ও ম্যাজিষ্ট্রেট আবদুল জলিল।
এব্যাপারে জিওল মহল্লার বিশিষ্ট ব্যবসায়ী দুলাল হোসাইন জানান, পৌরসভার ৭ ও ৮ নম্বর ওয়ার্ডে বেশ কয়েকদিন ধরে ময়না চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে চলে ওঠান বৈঠক, নারী সমাবেশ ও গণসংযোগ। পাশাপাশি নৌকায় ভোট ভিক্ষার ভিন্ন উদ্যোগ। এতে ভোটারদের মধ্যে নতুন করে আশার জাগরণ সৃষ্টি হয়। ফলে ওইসব এলাকায় বিএনপির ভোট ব্যাংক ভেঙ্গে জনগণের হাওয়ায় দোলছে নৌকা। আশাকরি, এবারে বিপুল ভোটের ব্যবধানে নৌকার বিজয় হবে ইনশাল্লাহ।
নৌকার বিজয় নিশ্চিত ব্যাপারে তানোর পৌর আ.লীগের সাধরণ সম্পাদক প্রভাষক আবুল কালাম আজাদ বলেন, সাবেক ছাত্রদল নেতা আবদুল মালেক মন্ডল বিদ্রোহী (স্বতন্ত্র) প্রার্থী হিসেবে মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। একারণে বিএনপির বেশিরভাগ কর্মী-সমর্থক নিজ দল ধানের শীষের পক্ষে কাজ না করে নীরব ভূমিকা পালন করছেন। বিএনপির ভোট দু’ভাগে বিভক্ত হয়ে বেশি ভোট আ.লীগের নৌকা প্রতীকে পড়বে বলেই ধারণা করছেন সাধারণ ভোটাররা বলে জানান এই নেতা।
উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) সুষ্মিতা রায় জানান, পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডে মোট ভোটার সংখ্যা ২৪ হাজার ৬৬৭ জন। এরমধ্যে পুরুষ ১২ হাজার ৩৮ জন এবং নারী ১২ হাজার ৬২৯ জন। ১৩টি ভোট কেন্দ্রে ৬৮টি বুথ-এ ভোটাররা তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। নির্বাচনে মেয়রপদে ৩ জন ও নারী কাউন্সিলর পদে ১৪ জন ছাড়া সাধারণ কাউন্সিলর পদে ৩৫ জন প্রার্থী ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন। নির্বাচন অবাধ সুষ্ঠ ও নিরপেক্ষ করতে সকল প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে।
এব্যাপারে মেয়র মিজানুর রহমান মিজান বলেন, গণসংযোগে অভাবনীয় মানুষের সাড়া পাচ্ছেন। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে তিনি এবারও মেয়র নির্বাচিত হবেন। তবে, বিএনপির বিদ্রোহী (স্বতন্ত্র) প্রার্থী আবদুল মালেক মন্ডলের সঙ্গে যোগাযোগের চেস্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
তানোর পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও মেয়রপ্রার্থী ইমরুল হক বলেন, এবার ব্যক্তিকে নয়, মানুষ ভোট দেবেন জননেত্রী শেখ হাসিনার নৌকা প্রতীকে। এতে করে বিএনপির দূর্গে আঘাত করে আওয়ামী লীগের নৌকার বিজয় নিশ্চিত করবে জনগণ বলে জানান ইমরুল হক।