খুলনার পাইকগাছা উপজেলার বাণিজ্যিক উপশহর কপিলমুনি। আর এই বাণিজ্যিক উপশহরের কোটি কোটি টাকা মূল্যে সরকারী সম্পত্তি যে যার মতো দখল নিচ্ছে। দখল নিয়ে নির্মাণ করছে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বসতবাড়ী। অথবা পাকা প্রাচীর দিয়ে দখল রাখছে। অদৃশ্য ক্ষমতাধারী এসব প্রভাবশালীরা শুধু সরকারি সম্পত্তি দখল নিচ্ছে না, দখল চূত্য করছে বৈধ কাগজপত্র থাকা শর্তেও দরিদ্র পরিবারকে। তাদের এহেন অবৈধ দখলকে ঘিরে ক্ষমতার উৎস নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে সচেতন মহলে। বিষয়টি ভূমি সংশ্লিষ্ট বিভাগের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন এলাকাবাসী।
সরেজমিনে গিয়ে দেখাযায়, উপজেলার দখলকৃত কপিলমুনি সদরের পুরাতন লঞ্চঘাটের বাইপাস সড়কে যাতায়াতের পথ দখল করে পাকা ঘর নির্মাণ করছেন মোস্তাম মোড়ল নামের এক ব্যাক্তি। সরকারী জায়গা দখল করে ঘর নির্মাণের কারণ জানতে চাইলে বলেন, জায়গাটি আমি কিনেছি। সরকারী অনুমোদনের জন্য আবেদন করা হয়েছে। উপজেলা ভূমি অফিসের সার্ভেয়ার কাওসার সাহেব এর কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে ঘর নির্মাণ করছি। আবেদন বা তার স্বপক্ষে কোনো কাগজপত্র দেখতে চাইলে তিনি জনৈক সৈয়দ সালাম উল্যাহ নামের ব্যক্তিকে মুঠোফোনে ধরিয়ে দেন। তিনি বলেন, উপজেলা সার্ভেয়ার কাওসার সাহেবকে জানিয়ে কাজ করানো হচ্ছে। এ বিষয়ে সার্ভেয়ার কাওসার আলী বলেন এ বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না। কপিলমুনি ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) হাসমত আলী অবহিত হয়ে সরেজমিন গিয়ে কাজ বন্ধ করে দেন। তবে কাজ বন্ধের ঘন্টাখানেক পর ঐদিনই পুনরায় নির্মাণ কাজ শুরু করেন। খবর পেয়ে দ্বিতীয় দফায় তহশিলদার ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পুনঃরায় কাজ বন্ধ করে দেন। একইভাবে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় বিষয়ক মন্ত্রী আ.ক.ম মোজাম্মেল হক (এমপি) গত ৯ ডিসেম্বর কপিলমুনি মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি কমপ্লেক্স নির্মাণ কাজ ভিত্তি প্রস্তর উদ্বোন করেন। সরকারী জায়গায় মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি কমপ্লেক্স নির্মাণ কাজ ভিত্তি প্রস্তর উদ্বোধন করা হয়। সরকারি জায়গায় দখল মুক্ত করে এ ভিত্তি প্রস্তর উদ্বোধন করলেও পরেদিন আবার বেদখল হয়ে যায়। পরবর্তীতে ১৪ জানুয়ারি সাবেক উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মুহাম্মদ আরাফাতুল আলম সরেজমিনে যেয়ে দখল মুক্ত করেন। এ সময় মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি কমপ্লেক্স নির্মাণ স্থান সংলগ্ন এক প্রভাবশালী পাকা প্রাচী ভেঙে দিয়ে দখলে রাখা সরকারি জায়গা দখলমুক্ত করেন। কিন্তু কদিন যেতে না যেতে আবার দখল নিয়েছে এ প্রভাবশালী। এভাবে চলছে সরকারি সম্পত্তি নিয়ে শাপ লুডু খেলা। এ বাণিজ্যিক উপশহর কফিলমুনি বিভিন্ন স্পটে কোটি কোটি টাকা মূল্যের সরকারী জায়গা ভূমিগ্রাসীরা দখল করে বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ করেই চলেছে। প্রায় প্রতিদিনই শহরের কোথাও না কোথাও সরকারী জায়গা দখল হচ্ছে। সরকারি এসব মূল্যবান জায়গা জবরদখলের মহোৎসব দীর্ঘদিন যাবৎ চললেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের চরম উদাসীনতায় ভূমিগ্রাসীদের মধ্যে ভূমি দখলের প্রবণতা বেড়েই চলেছে। তবে গত মঙ্গলবার জনৈকা মনজিলা খাতুনের একটা স্থাপনা ভেঙে দেওয়ায় কিছুটা সন্তোষ প্রকাশ করেন এলাকাবাসী। যদিও ঐ স্থাপনা নিয়ে বৈধতার দাবিতে মনজিলার অভিযোগ রয়েছে। তবে শুধু ঐ একটি স্থাপনা নয়। শহরের এই বাইপাস সড়কের পূর্ব পাশ দিয়ে কালিবাড়ী খেয়া ঘাঠ থেকে শ্রীরামপুর মালোপাড়া পর্যন্ত প্রায় আধাকিলোমিটার জুড়ে অসংখ্য অবৈধ স্থাপনা গড়ে উঠেছে। সরকারী জায়গা দখল করে সংকুচিত করা হচ্ছে কপিলমুনি ঐতিহ্যবাহী ধান্যচত্বর (বিনোদচত্বর), বালিরমাঠ (সাবেক নুন্দর পুকুর), সিনেমা হলের সম্মুখভাগের সম্পূর্ণ জায়গা। দখল হয়েছে কপিলমুনি পাবলিক স্টেডিয়ামের প্রায় দেড় একরের অধিক কোটি কোটি টাকা মূল্যের সরকারী জায়গা। সংশ্লিষ্ট বিভাগের কিছু অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজশে এসব জায়গা করায়াত্ব করে সেখানে গড়ে তোলা হয়েছে নানা স্থাপনা এমন অভিযোগ রয়েছে। শহরের প্রাণ কেন্দ্রের সরকারী সিংহভাগ এসব জায়গা দখল হওয়ার পর অবশিষ্ট কিছু জায়গা ইতোমধ্যে দখলের পথে রয়েছে। যদিও স্থানীয় তহশিলদারের হস্তক্ষেপে নির্মাণ কাজ তাৎক্ষণিক বন্ধ হলেও পরবর্তীতে তা আবার দখল হচ্ছে। জানা গেছে, এসব অবৈধ দখলদারদের পেছনে রয়েছে একটি শক্তিশালী চক্র। মূলত এরাই সংশ্লিষ্ট অফিসসহ দখলদারদের নিয়ন্ত্রণ করছে।
কপিলমুনি ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) হাসমত আলী জানান, ঊর্ধ্বতন স্যার এসে পরিমাপ করে লাল নিশানা দিয়ে সরকারি সম্পত্তি চিহ্নিত করে দেন। পরবর্তী বেদখল বিষয় আরো জানান, সরকারী জায়গা রক্ষায় আমাদের আন্তরিকতার কোনো ঘাটতি নেই। সদ্য যোগদান কারী স্যার সাথে কথা বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। সদ্য যোগদানকারী উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোঃ শাহারিয়ার হক জানান, আমি যোগদান করে ্ওখন কাজ বুঝে নেইনি। তাই এ ব্যাপারে কিছু বলা এই মুহুর্তে সম্ভব না। শুধু মনজিলা খাতুন নয়, সব দখলবাজদের অবৈধ স্থাপনা গুড়িয়ে দিয়ে কপিলমুনি শহরের প্রতিষ্ঠাতা রায় সাহেবের ত্যাগের প্রতি শ্রদ্ধা, বাজার সম্প্রসারণসহ কপিলমুনি শহরের শ্রীবৃদ্ধির জন্য স্থানীয় এমপি, জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন এলাকাবাসী।