ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলার ২৩৯টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বেতন ইএফটি করতে শিক্ষকদের নিকট থেকে পৌনে তিন লাখ টাকা ঘুষ আদায়ের অভিযোগ উঠেছে শিক্ষা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) সালমা আক্তারের বিরুদ্ধে। এছাড়াও বিদ্যালয় উন্নয়নের বরাদ্দ থেকে অন্তত ১০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এ বিষয়ে শিক্ষকের সাথে কথা বলে ঘুষ ও অনিয়মের বিষয়য়ে সত্যতাও মিলেছে।
জানা যায়, দেশের সব পর্যায়ে ডিজিটাল পদ্ধতি চালু করার অংশ হিসেবে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কর্মরত শিক্ষকদের বেতনও ডিজিটাল পদ্ধতি করতে ইলেক্টনিক ফান্ড ট্রান্সফার (ইএফটি) চালু করার নির্দেশ দেয় সরকার। ইএফটির কাজ সম্পন্ন হলে শিক্ষকদের বেতন-ভাতা কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে সরাসরি তাদের হিসাব নম্বরে জমা হবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশকিছু শিক্ষক এ বিষয়ে গণমাধ্যম কর্মীদের কাছে অভিযোগ করে বলেন, উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ইএফটি পূরন বাবদ প্রত্যক শিক্ষকের কাছ থেকে ২শ টাকা করে উৎকোচ দাবি করেন। কোন শিক্ষক দিতে অস্বীকার করলে ওই শিক্ষকের ইএফটি পূরন বন্ধ করে দেন। ফলে উপজেলার সকল শিক্ষকেই বাধ্য হয়ে শিক্ষা কর্মকর্তাকে ২শ টাকা করে ঘুষ দিয়ে ইএফটি পূরন করেন।
এদিকে বিদ্যালয়ের উন্নয়নে স্লিপের বরাদ্দ থেকে আত্মসাৎ করেছেন অন্তত তিন লাখ টাকা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক প্রধান শিক্ষক বলেন, ২০২০ সালে গফরগাঁওয়ে ২৩৯টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে স্লিপ প্রকল্পের আওতায় প্রতিটি বিদ্যালয়ে আসবাব সংস্কার ও আনুষঙ্গিক খরচের জন্য ৪০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। পরে ভ্যাটের টাকা জমাদানের জন্য সকল বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের নিকট থেকে ১২ শতাংশ হারে টাকা আদায় করেন শিক্ষা কর্মকর্তা সালমা আক্তার। পরে সাড়ে ৯ শতাংশ হারে চালানের মাধ্যমে টাকা জমা দিয়ে বাকি তিন লাখ ১০ হাজার টাকা আত্মসাৎ করেন তিনি।
এছাড়াও উপজেলার ২৩৯টি বিদ্যালয়ের ২০২০ সালে বিজয় ফুল ও ইন্টারনেক বরাদ্দের ৩১শ ৫০ টাকা টাকা থেকে নিয়মের তোয়াক্কা না করে মাষ্টার রোল করে প্রধান শিক্ষকদের ২০০০ টাকা করে নিতে বাধ্য করেন। এখান থেকেও তিনি দুই লক্ষাধিক টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। এ বিষয়ে বেশ কয়েকজন প্রধান শিক্ষক অপকটে স্বীকার করে বলেন, এ নিয়ে কথা বললে পরবর্তী সময়ে নানাভাবে হয়রানি করেন শিক্ষা কর্মকর্তা সালমা আক্তার। আরো জানা যায়, ২০১৯-২০ অর্থবছরের আন্তঃপ্রাথমিক ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতার বরাদ্দের পুরো টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে এ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে।
এদিকে ভ্যাটের নামে স্লিপ বরাদ্দের টাকা, বিজয় ফুল, ইন্টারনেট ও প্রাথমিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার টাকা আত্মসাৎ করায় গত বছরের ডিসেম্বরে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা নাজমুল হুদা।
তাছাড়াও প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে আসা ক্ষুদ্র মেরামত, ওয়াশ ব্লক, রুটিন মেরামত ইত্যাদি বরাদ্দ হতে প্রধান শিক্ষকদের ভয়-ভীতি দেখিয়ে ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত ঘুষ আদায় করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক প্রধান শিক্ষক বলেন, গত বছর ক্ষুদ্র মেরামতে টাকা থেকে ভয় দেখিয়ে ৫ হাজার টাকা ঘুষ নিয়েছেন শিক্ষা কর্মকর্তা। ঘুষ না দিলে তিনি চেক দেন না।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সালমা আক্তার ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ব্যাক্তিগত আক্রোশের জেরেই তার বিরুদ্ধে কতিপয় শিক্ষক এবং সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা তার বিরুদ্ধে ভুয়া অভিযোগ দিয়েছেন। অর্থিক লেনদেন সম্পর্কে তিনি বলেন, ইএফটি ও বিদ্যালয়ের নাম সংশোধনের জন্য শিক্ষকরা কম্পিউটারের জন্য ইন্টারনেট, প্রিন্টারের কালি ও কাগজ কিনে দিয়েছেন কিন্তু তাদের কাছ থেকে কোন টাকা নেননি তিনি। তার দাবী অন্যান্য খাতেও স্বচ্ছতার সাথে আর্থিক লেনদেন হয়েছে, কোন দুর্নীতি হয়নি। সব কিছুই আমার বিরুদ্ধে একটি ষড়যন্ত্র।
এসব বিষয়ে ডিজি অফিসের ওয়ব সাইটের অভিযোগ বিষয়ক তদন্তের দায়িত্বে থাকা শিক্ষা কর্মকর্তা তাপস কুমার সরকার (অর্থ) বলেন, ওঁর বিষয়ে তদন্ত হচ্ছে। তদন্ত প্রতিবেদন পেলে নিশ্চয় ডিজি মহোদয় ব্যবস্থা নিবেন।