নাজপুরের চিরিরবন্দরে ভেলামতি নদীর উপর ভেঙ্গে পড়া সেতুটি দীর্ঘদিন পর মানুষের স্বপ্ন পুরণে পুননির্মাণ হলেও আজো দুর্ভোগ দূরীভূত হলো না নদীর দু’পাড়ের অন্তত ২৫ গ্রামের মানুষের। সেতুটি এখন চলাচলের প্রায় অনুপোযোগী ও ঝুকিঁপূর্ণ হয়ে পড়েছে। জোড়া সেতুর মাঝখানে বাঁশের সাঁকো দিয়ে চলাচল করছে মানুষ।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ অধিদপ্তরের আওতায় উপজেলার অমরপুর-পুনট্টি ইউনিয়নের গমিরাহাটের সংযোগ সড়কে ভেলামতি নদীর ওপর ২০১৫-১৬ অর্থ বছরে নির্মাণ করা হয় জোড়া সেতুটি। দুই পাড়ের মানুষের মধ্যে সেতুবন্ধের পাশাপাশি এ ব্রিজ কষ্ট লাঘবসহ ব্যবসা-বাণিজ্যে নতুন আশার সঞ্চার করে। নির্মাণের কিছুদিন যেতেই জোড়া ব্রিজের মাঝখান পূর্ব পাশের সেতুটি দেবে যায়। পরে স্থানীয়রা দু’ব্রিজের মাঝে বাঁশের সাঁকো তৈরি করে দেয়। আবার সংযোগ সড়কের মাটি সরে গর্তের সৃষ্টি হয়। ফলে নদীর দু’পাড়ের হাজার হাজার মানুষের ভোগান্তির শেষ নেই। ব্রিজের ওপর দিয়ে কোনো যানবাহন চলাচল করতে পারে না। স্থানীয়রা মোটরসাইকেল ও রিকশাভ্যান ঝুঁকি নিয়ে পারাপার করেছেন।
স্থানীয়রা আরো জানান, একসময় ভেলামতি নদীতে ব্রিজ না থাকায় গোবিন্দপুর, বিশ্বনাথপুর, দোয়াপুর, তুলশীপুর, পুনট্টি, মথুরাপুর, করঞ্জি, পাটাইকুড়ি, কালীগঞ্জ, ভবানীপুর, কেশবপুর, সিন্দুরা, হরানন্দপুরসহ আশেপাশের ২৫ গ্রামের প্রায় লক্ষাধিক মানুষের চলাচলের অসুবিধাসহ স্কুল কলেজ মাদ্রাসাগামী শিক্ষার্থীদের চরম দুর্ভোগে পড়ে। এসব গ্রামে অন্তত ২০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৫টি দাখিল মাদ্রাসা, ছোট-বড় ৭টি হাটবাজারসহ পোষ্ট অফিস রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের সাথে সম্পৃক্তদেরও কষ্ট করতে হয়েছে।
কৃষক সাহাবুদ্দিন জানান, এলাকাটি কৃষিপ্রধান অঞ্চল হওয়ায় মৌসুমী ফসলসহ ধান উৎপাদনও হয় বেশি। যোগাযোগ ব্যবস্থা না থাকায় কৃষকরা তাদের উৎপাদিত কৃষিপণ্য ভারী যানবাহনে করে সবচেয়ে বড় আমবাড়িহাট ও অন্যান্য বাজারগুলোতে নিয়ে যেতে না পারায় পানির দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। ফলে তারা আর্থিকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে।
রিকশাভ্যান চালক আবদুল ওহাব ও নুর ইসলাম জানান, রিকশাভ্যানে করে মালামাল আনা-নেয়ায় এবং ব্রিজের উপরে উঠতে আমাদের খুব কষ্ট হয়। ব্রিজের অভাবে এপাড়ের মানুষের সাথে ওপাড়ের মানুষ আত্মীয়তা করতেও অনীহা প্রকাশ করে। কিন্তু নতুন সেতু নির্মাণের পর পূর্বপাশের সেতুটি দেবে যাওয়ায় মানুষের আগের মতোই দূর্ভোগে পড়েছে। সাবেক চেয়ারম্যান বাবু চন্দ্র কান্ত রায় বলেন, অত্রাঞ্চলে এমন নাটকীয় ব্রিজের আমাদের প্রয়োজন নাই।
পুনট্টি ইউপির সদস্য লোকমান হাকিম জানান, ব্রিজটি নির্মাণে গুণগত মান ঠিক ছিল না। ফলে গত বছর মাঝখানে দেবে যায়। পরে সাঁকো দেয়া হয়। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। তিনি আরো জানান, ১৯৬২ সালে উপজেলার গমিরাহাটে নদীর উপরে একটি ব্রিজটি নির্মিত হয়। ব্রিজটি ২৭ বছর পর ১৯৮৯ সালের বন্যায় সম্পূর্ণরুপে ভেঙ্গে নদীতে পড়ে যায়। এরপর দীর্ঘদিন ভেঙ্গে পড়ে থাকা ব্রিজটির সংস্কারের দাবী জানাতে থাকে মানুষ। তিনি আরো জানান, গত ২০১৫-১৬ অর্থ বছরে পুনর্নির্মিত হয় এ ব্রিজ। নির্মাণের কিছুদিন পর মাঝখানে দেবে যাওয়ায় যান চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়ে।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মনোয়ারুল ইসলাম জানান, ব্রিজটি নির্মাণের পর মাঝখানে দেবে যাওয়ায় ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। বিষয়টি আমি নিজে দেখেছি। ব্রিজটির ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।