কুমিল্লার মেঘনা উপজেলায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বর্তামান ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা ফারুক আব্বাসী এবং স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা সিরাজুল ইসলামের মধ্যে সংঘর্ষে নাজমা বেগম (৬০) নামে এক গৃহবধূ নিহত এবং স্বামী ও দেবরসহ আহত হয়েছে অন্তত ৫ জন। সংঘর্ষে গুরতর আহত স্বামী আবদুছ ছালাম সরকারকে (৬৫) আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করা হয়েছে। নিহতের দেবর সিরাজুল ইসলাম (৫০) ও ভাওরখোলা গ্রামের শিউলি বেগম (৫০), মুকাবিল (৩৫) ও ফারুক সিকদারকে (৪৫) প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
শুক্রবার সন্ধ্যায় মেঘনা উপজেলার ভাওরখোলা ইউনিয়নের ভাওয়ারখোলা গ্রামে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় জড়িত দেলোয়ার নামে একজনকে শনিবার দুপুরে গ্রেফতার করা হয়েছে। এদিকে আওয়ামী লীগ নেতা ও চেয়ারম্যান ফারুক আব্বাসীর বাড়িতে পুলিশের অভিযানে বিপুল পরিমাণে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। খুন ও অস্ত্র আইনে দুটি মামলা প্রক্রিয়াধীন।
শনিবার নিহত নাজমা বেগমের লাশের ময়নাতদন্ত এবং জানানা শেষে স্থানীয় কবরস্থানে দাফন সম্পন্ন হয়েছে। চেয়ারম্যান ফারুক আব্বাসীসহ ঘটনায় জড়িতরা পলাতক রয়েছে। উল্লেখ্য, গত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ফারুক আব্বাসী আওয়ামী লীগ থেকে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। সিরাজুল ইসলাম আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে সম্ভাব্য চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী।
ওসি আবদুল মজিদ জানান, সিরাজুল ইসলাম শুক্রবার দিন সপরিবারে একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে এসেছিলেন। সেখানেই বাড়ির পাশে একটি চায়ের স্টলে চা খেতে গিয়ে ফারুক আব্বাসীর ছোট ভাই ইমরান হোসেন টিটুর সঙ্গে কথাকাটি হয়। টিটু বাড়িতে গিয়ে তার ভাইয়ের কাছে তাকে গালমন্দ ও মারপিটের কথা বলে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ফারুক আব্বাসী ক্ষিপ্ত হয়ে দলবলে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে সিরাজুল ইসলামের ওপর আক্রমণ করলে উভয় গ্রুপের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ বাধে। এতে সিরাজুল ইসলামের ভাবী নাজমা বেগম ঘটনাস্থলে নিহত হন। বর্তমান চেয়ারম্যান ফারুক আব্বাসী এবং সিরাজুল ইসলাম সরকারের মধ্যে পূর্ব থেকেই বিরোধ ছিল।
হোমনা-মেঘনা সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) মো. ফজলুল করিম বলেন, ভাওরখোলা ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান ফারুক আব্বাসী ও সিরাজুল ইসলামের মধ্যে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করেই এ সংঘর্ষ হয়। এতে ফারুক আব্বাসী দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে সিরাজুল ইসলামের ওপর অতর্কিতে আক্রমণ করে। এতেই নাজমা বেগম খুন হন। গতরাতে ভাওরখোলা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ফারুক সরকার আব্বাসী এবং তার ভাই খোকন আব্বাসী, ইমরান হোসেন টিটু ও ইয়ার আব্বাসীদের বাড়িতে তাৎক্ষণিক অভিযান পরিচালনা করে দেশীয় অস্ত্রের মধ্যে ৬৭টি কান্তা, ৯টি বড় ছোড়া, ৭টি ছোট ছোড়া, ৪ টি ধামা, ৬টি চায়না চাপাতি ও ২টি কুড়াল উদ্ধার করা হয়। খুনের ঘটনায় জড়িত ভরতপুর নয়াগাঁও গ্রামের দেলোয়ার হোসেনকে (৪২) মুন্সিগঞ্জের গজারিয়া থানার রায়পাড়া থেকে গ্রেপতার করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে একটি খুন ও একটি অস্ত্র মামলা প্রক্রিয়াধীন।
এ ব্যাপারে ফারুক আব্বাসীর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে তার তার ব্যবহৃত মোবাইল নাম্বারটি বন্ধ থাকায় বার বার ফোন করেও কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
ই- মেইলে নিহত নাজমা বেগম এবং উদ্ধার দেশীয় অস্ত্র ও গ্রেপতার দেলোয়ারের ছবি রয়েছে।