কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় গুলিবিদ্ধ অনলাইন পোস্টাল বার্তা ডট কমের সাংবাদিক বুরহান উদ্দিন মুজাক্কির শনিবার সাড়ে ১০টায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। এলাকায় শোকের ছায়া, রাতে লাশ দাফন করা হবে।
শুক্রবার বিকেলে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার চরফকিরা ইউনিয়নের চাপরাশিরহাট বাজারে আওয়ামী লীগের দু গ্রুপের গোলাগুলি হয়। মুজাক্কির সংবাদ সংগ্রহ করতে ঘটনাস্থলে গেলে ছবি তোলার সময় সে গুলিবিদ্ধ হয়। আশংকাজনক অবস্থায় তাকে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হলে অবস্থার অবনতি ঘটলে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। হাসপাতালের আইসিইউতে দীর্ঘ ২৪ঘন্টা নিবিড় পর্যবেক্ষনে থাকার পর মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে শনিবার রাত সাড়ে ১০টায় মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। মুজাক্কিরের মৃত্যুর ঘটনা কোম্পানীগঞ্জে ছড়িয়ে পড়লে বসুরহাট পৌরসভার মেয়র আবদুল কাদের মির্জার নেতৃত্বে রাতে বসুরহাট বাজারে বিক্ষোভ মিছিল হয়। বিক্ষোভ মিছিল শেষে বঙ্গবন্ধু চত্বরে সমাবেশ করা হয়। রোববার সকালে বসুরহাট বাজারে মুজাক্কিরের হত্যার বিচারের দাবীতে আবদুল কাদের মির্জা নেতৃত্বে লোকজন বসুরহাট বাজারে আবারও বিক্ষোভ মিছিল করেন। অপরদিকে উপজেলার চাপরাশিরহাট বাজারসহ বিভিন্ন বাজারে বিক্ষোভ মিছিল হয়।
সরেজমিনে উপজেলার চরফকিরা ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডে নোয়াব আলী মাস্টারের ছোট ছেলে মুজাক্কিরের বাদশা মিয়ার মেস্তরী বাড়ির গিয়ে দেখা যায় তার বোনেরা ছাড়া বাড়িতে আর কেউ নেই। পিতা-মাতা, ও ভাইয়েরা তার লাশ আনার জন্য ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালে অবস্থান করছেন। ভাইয়ের মৃত্যুতে তার বোনের আহাজারিতে আকাশ বাতাস ভারি হয়ে যায়। ৩ ভাই ৪বোনের মধ্যে মুজাক্কির সবার ছোট, বড় ভাই মোফাচ্ছের ঢাকার ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সহকারী গবেষক, আরেক ভাই নুর উদ্দিন সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। মুজাক্কির গতবছর নোয়াখালীর বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ থেকে মাস্টার্স পরীক্ষা দিয়ে প্রথম শ্রেণীতে পাস করেন। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত তার লাশ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রয়েছে। মুজাক্কিরের মৃত্যুতে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। কোম্পানীগঞ্জে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। তার মৃত্যুতে বাংলাদেশ আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, বসুরহাট পৌরসভার মেয়র আবদুল কাদের মির্জা এবং কোম্পানীগঞ্জ প্রেসক্লাবের পক্ষ থেকে গভীর শোক ও সমবেদনা জ্ঞাপন করা হয়। অনতিবিলম্বে দোষীদের শাস্তির দাবী করেন।
বিকেলে নোয়াখালী জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার খালিদ ইবনে মালেকের নেতৃত্বে একদল পুলিশ নিহত মুজাক্কিরের বাড়িতে পরিদর্শনে যান। এরপর তিনি চাপরাশির বাজারের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ জব্দ করেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষার্থে চাপরাশিরহাট বাজারে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার খালিদ ইবনে মালেক ও কোম্পানীগঞ্জ থানার ওসি জাহেদুল হক রনির নেতৃত্বে একদল পুলিশ অবস্থান নিয়েছে।
নোয়াখালী জেলা আ.লীগের সিনিয়র নেতা ও বসুরহাট পৌরসভার মেয়র আবদুল কাদের মির্জা এ প্রতিবেদকে বলেন, আমি ঘটনার আগেই জিডি করেছি, যাহার নং-৬৯৫, তারিখ-১৫/০২/২০২১। একরাম চৌধুরী আমাকে হত্যা করবে অথবা একটি লাশ ফেলবে। তাদের পূর্ব পরিকল্পনা মোতাবেক একরাম চৌধুরীর বাসায় বসে এ পরিকল্পনা করা হয়। মুজাক্কির সাংবাদিক হিসেবে সংবাদ সংগ্রহের জন্য সেখানে যেতে পারে। তাদের লেলিয়ে দেওয়া সন্ত্রাসী বাহিনীর অস্ত্রে মুজাক্কির নিহত হন।