গাছের সাথে এ কেমন নিষ্ঠুরতা! সড়ক দু’ধার বা গুরুত্বপূর্ণ স্থানে গাছে লোহার পেরেক ঠুকে বিজ্ঞাপন বোর্ড লাগানো হয়েছে। খুলনার সড়ক-মহাসড়কের পাশের গাছে পেরেক ঠুকে লাগানো হচ্ছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, ব্যক্তি ও পণ্যের বিজ্ঞাপন বোর্ড। এতে সড়কের পাশের গাছগুলো ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। গাছের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ব্যাহত হচ্ছে। তাছাড়া মারা যাচ্ছে অনেক গাছ। উপজেলার মেইন সড়কের দুই পাশের গাছে গাছে পেরেক ঠুকে টাঙ্গানো হয়েছে প্যানা-ফেস্টুনসহ নানা বিজ্ঞাপন বোর্ড। গাছের দিকে তাকালেই দেখা যায় হরেক রকম বিজ্ঞাপন বোর্ড। গাছে বিজ্ঞাপন বোর্ড লাগানো প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে ডায়াগনষ্টিক সেন্টার, কোচিং সেন্টার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, নানান অখ্যাত অনিবন্ধিত প্রতিষ্ঠান, চিকিৎসক ও রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গের প্যানা ফেস্টুন। মানব জীবনে অক্সিজেন অপরিহার্য। আর এই অক্সিজেন আমরা গাছ থেকে পাই। বৃক্ষ মানুষের পরম বন্ধু। পরিবেশের ভারসম্য রক্ষায় গাছের বিকল্প নেই। গাছ তার সব কিছু বিলিয়ে দিয়ে মানুষের জীবন বাঁচিয়ে রাখছে। আর এই গাছই মানুষের নির্মম অত্যাচার থেকে রক্ষা পাচ্ছে না। কোনো নিয়মনীতি তোয়াক্কা না করেই যে যেখানে পারছে লোহার পেরেক বা তারকাঁটা ঠুকে গাছকে বিজ্ঞাপনের জন্য ব্যবহার করছে। সড়কেও গুরুত্বপূর্ণ স্থানে গাছগুলোতে দিনের পর দিন, বছরের পর বছর পেরেক বা তারাকাটা ঠুকে বিজ্ঞাপন বোর্ড লাগানো হচ্ছে। ছোট থেকে এসব গাছ পেরেক লাগানো হতে গাছটি পরিণত বয়েসে তার কান্ডে পাঁচশতাধিকেরও বেশি পেরেক লাগানো পড়ছে। গাছ বড় হচ্ছে আর পেরেকগুলি কান্ডের ভিতর অবস্থান করছে। এভাবে শত শত পেরেক যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে আর বিজ্ঞাপন বোর্ড ভরে ঝুঁকছে গাছগুলো। এভাবে দিনের পর দিন গাছকে অনেকটাই বিজ্ঞাপন বুথেরমত ব্যবহার করায় ক্ষুদ্ধ সচেতন নাগরিক ও পরিবেশবাদীরা। গাছে পেরেক ঠুকে বিজ্ঞাপন লাগানো বিষয়ে খুলনার সরকারি ব্রজলাল (বিএল) কলেজের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সেবানন্দ চক্রবর্তী বলেন, পেরেক ঠুকলে খাবার সংগ্রহের বাঁধা তৈরী হবে। গাছ শেকড়ের মাধ্যমে তার প্রয়োজনীয় পুষ্টি সংগ্রহ করে। পেরেক ঠুকানো স্থানের জাইলেম ও ফ্লোয়ামটিশু ক্ষতিগ্রস্থ হলে মূলদিয়ে গৃহীত পুষ্টি যেমন কান্ড ও শাখা প্রশাখায় সরবরাহে বাঁধা সৃষ্টি হয় তেমনি পাতায় প্রস্তুতকৃত শর্করাও গাছের অন্যান্য অংশে সরবরাহ বাঁধা গ্রস্থ হয়। গাছের জীবনী শক্তি নষ্ট হয়ে যায়। অন্যদিকে ক্ষতিগ্রস্থ অংশ দিয়ে ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক, ভাইরাস, নেমাটোডসহ বিভিন্ন অনুজীব সহজে আক্রমণ করতে পারে। এতে ধীরে ধীরে গাছ মারা যেতে পারে। নরমকান্ড বিশিষ্ট (আঠা বিশিষ্ঠ) গাছের আঠা ঝরে যায়। গাছেরও প্রাণ আছে। গাছ ব্যাথা পায়, গাছ কাঁদে। শহরের সৌন্দর্য রক্ষা ও পরিচ্ছন্নতা বিধানে সরকার ২০১২ সালে দেয়াল লিখন ও পোষ্টার লাগানো (নিয়ন্ত্রণ) আইন-২০১২ পাশ করেন। কিন্তু এই আইনের বাস্তবায়ন না হওয়ায় তা শুধু আইন নামে সিমাবদ্ধ হয়ে রয়েছে। ওই আইনের ধারা ৪ অনুযায়ী নির্ধারিত স্থান ব্যাতিত অন্য কোনো স্থানে দেয়াল লিখন বা পোষ্টার লাগানো যাবে না। কিন্তু এ আইনের তোয়াক্কা না করে গাছে গাছে পেরেক ঠুকে বিজ্ঞাপন বোর্ড লাগানোয় ঝুঁকি বাড়ছে। সামান্য ঝড়ে এসব বিজ্ঞাপন বোর্ড ছিড়ে পড়ায় পথচারীরা দূর্ঘটনার শিকারও হচ্ছে। দেয়াল লিখন ও পোস্টার লাগানো (নিয়ন্ত্রণ) আইন ২০১২ মোতাবেক সকল সাইনবোর্ড ফেস্টুন, ব্যানার অপসারণ করা প্রয়োজন। এই আইনের বাস্তবায়ন হলে বৃক্ষগুলো পেরেক যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেতে পারে। তার জন্য প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ সচেতন মহলের সহযোগীতা প্রয়োজন।
পাইকগাছা পরিবেশবাদী সংগঠণ বনবিবি সভাপতি সাংবাদিক প্রকাশ ঘোষ বিধান বার্তাসংস্থা এফএনএসকে বলেন, যে সকল প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তি সড়কের পাশের গাছে গাছে এসব সাইনবোর্ডসহ বিভিন্ন বিজ্ঞাপনের প্যানা লাগিয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী দ্রুত ব্যাবস্থা নেয়ার জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষের সু-দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবিএম খালিদ হোসেন সিদ্দিকী বার্তাসংস্থা এফএনএসকে বলেন, পেরেক মেরে গাছে বিজ্ঞাপন বোর্ড লাগানো খুবই অমানবিক কাজ। যারা পেরেক মেরে গাছে বিজ্ঞাপন বোর্ড লাগিয়েছেন তাদেরকে বিজ্ঞাপন অপসারন করার অনুরোধ জানাচ্ছি। তা না হলে গাছে লাগানো বিজ্ঞাপন দেখে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।