আগামী দুই বছরের মধ্যে খুলনার পাইকগাছাকে লবণাক্তপানি উত্তোলন বন্ধ করার ঘোষণা দিয়েছেন সংসদ সদস্য আক্তারুজ্জামান বাবু। তিনি ২ ফেব্রুয়ারী উপজেলা আইনশৃঙ্খলা ও মাসিক সাধারণ সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এলাকাকে লবণাক্ত মুক্ত করার ঘোষণা দিয়ে বলেন, দীর্ঘদিন লবণ পানি উত্তোলন করে চিংড়ি চাষ করার ফলে একদিকে মাটির উর্বরাশক্তি মারাত্মক হ্রাস পেয়েছে।
লবণাক্ততার কারণে কৃষি ফসল উৎপাদনও কমে গেছে। জীব-বৈচিত্র ধ্বংস হয়ে বিরান ভূমিতে পরিণত হতে চলেছে। প্রতিবছর রাস্তা-ঘাট, বিল্ডিং বাড়ি সহ কোটি কোটি টাকার সরকারি সম্পদ নষ্ট হচ্ছে। কর্মসংস্থানের অভাবে মানুষ এলাকা ছেড়ে চলে যাচ্ছে অনত্র। প্রাকৃতিক পরিবেশও আজ হুমকির মুখে। এ অবস্থা চলতে থাকলে আগামীতে অত্র এলাকায় মানুষের বসবাস করা কঠিন হয়ে পড়বে। এ অবস্থার পরিবর্তন দরকার। এজন্য এলাকাকে লবণ পানি মুক্ত করে মানুষের সুন্দর বসবাসের জন্য উপযোগী করে তুলতে হবে। এলাকা লবণ পানি মুক্ত করতে পারলে প্রাকৃতিক পরিবেশ স্বাভাবিক থাকবে, কৃষি ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে। নি¤œ মধ্যবিত্ত ও কৃষিভিত্তিক পরিবারের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। সুপেয় পানির সংকট থাকবে না। মানুষ হাঁস, মুরগী ও গবাদিপশু পালন করতে পারবে। দেশীয় প্রজাতির মাছ আবারও ফিরে আসবে। পুষ্টির কোনো অভাব থাকবে না। মানুষ উন্নত জীবন-যাপন করবে। এজন্য সবাই মিলে এলাকাকে লবণপানি মুক্ত করতে হবে। উপজেলা চেয়ারম্যান আনোয়ার ইকবাল মন্টু ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবিএম খালিদ হোসেন সিদ্দিকীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত পৃথক সভায় বর্তমান সময় থেকে পৌরসভার অভ্যন্তরে কোনো প্রকার লবণ পানি না উঠানো এবং ২০২২ সালের পর এলাকার কোথাও কোন লবণ পানি না উঠানোর সিদ্ধান্ত হয়। সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন, সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোঃ শাহরিয়ার হক, ওসি এজাজ শফী, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান শিয়াবুদ্দীন ফিরোজ বুলু, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান লিপিকা ঢালী, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ নীতিশ চন্দ্র গোলদার, ইউপি চেয়ারম্যান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধান ও বিভিন্ন দপ্তরের সরকারি কর্মকর্তা। এদিকে এ ঘোষণায় পাইকগাছা পৌর অভ্যন্তরে লবণ পানি উত্তোলন বন্ধে এমপি'র নির্দেশনা বাস্তবায়নে স্থানীয়দের মধ্যে আগ্রহ বেড়েছে। উপজেলা পরিষদের সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে পৌর মেয়র সেলিম জাহাঙ্গীর ও সদ্য সমাপ্ত পৌর নির্বাচনে কাউন্সিলর প্রার্থী আনোয়ারুল ইসলামের মাধ্যমে ইতোমধ্যে ৯ নং ওয়ার্ডের শিববাটী স্লুইস গেটর বাহির মুখে মাটি ফেলে লবণ পানি উত্তোলন বন্ধ করা হয়েছে। এর ২ দিন পর স্থানীয়রা উদ্বুদ্ধ হয়ে বুধবার একই এলাকার সাবেক তহশীলদার আ. খালেকের লীজ ঘেরের পানি সরবরাহের কল গই (মিনি স্লুইস গেট) মুখে মাটি ফেলে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এ সময় স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্য অবনী সানা সহ ৪০ বিঘার জমির মালিক শক্তি মন্ডল অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিয়ে জানান, লবণ পানির চিংড়ি চাষ এখন অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ ও অ-লাভজনক। অধিক ফসল উৎপাদনে আমরা লবণ পানি মুক্ত পরিবেশের পক্ষে হয়ে কাজ করছি। স্থ্নীয় পাউবোর শাখা প্রকৌশলী মো. ফরিদ উদ্দীন জানান, সমন্বয় কমিটির সিদ্ধান্তে পৌর অভ্যন্তরে লবণ পানি উত্তোলন বন্ধে মাননীয় এমপি আক্তারুজ্জামান বাবু সহ প্রশাসন কঠোর অবস্থানে। আমরা সেটা বাস্তবায়নের চেষ্টা করছি।