কবিতা ও গীতিকবিতার পাঠ আগেই চুকেছেন অভিনেত্রী কুসুম সিকদার। গান একটি; মিলেছে ভালো করতালি। একটি বই; পেয়েছেন দারুণ স্বীকৃতি। এবার তিনি গ্রন্থমেলায় হাজির হচ্ছেন গল্পকার হিসেবে! অথচ তার মূল পরিচিতি অভিনেত্রী, কণ্ঠশিল্পী হিসেবেও সুনাম রয়েছে বেশ। বিজ্ঞাপন আর টিভি নাটক তো বটেই, চলচ্চিত্রেও তিনি দাগ রেখেছেন দ্রুত সময়ে। অভিনয়ের জন্য পেয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। অথচ প্রায় দুই দশকের ক্যারিয়ারে তার কাজের সংখ্যা একেবারেই হাতে গোনা। নাটক, গান ও সাহিত্যে কুসুমের সব্যসাচী পথচলায় এবার যুক্ত হচ্ছে গল্পগ্রন্থ ‘অজাগতিক ছায়া’। এতে থাকছে দুটি গল্পÑশরতের জবা ও ছায়াকাল। ধ্রুবএষের প্রচ্ছদে বইটি প্রকাশ করছে তা¤্রলিপি, এই গ্রন্থমেলায়। কুসুমবলেন, ‘১৮ সাল থেকে তো ঘোষণা দিয়েই অভিনয় থেকে দূরে আছি। কারণ, আমি একটু নিজেকে সময় দিতে চেয়েছি। উদ্দেশ্য ছিল লেখার টেবিলে মন বসানো। এরমধ্যে এলো মহামারি। ফলে আমার ইচ্ছেটা আরও আরাম পেলো। বলতে পারেন লকডাউনে বসেই লিখলাম গল্পগুলো। এরমধ্যে দুটি নিয়ে একটি বই করছি। এটাই আমার প্রথম গল্পের বই।’ গল্পের ধরন প্রসঙ্গে কুসুম জানান, রহস্য ও রোমাঞ্চ ঘরানার বই এটি। পাঠকরা অলৌকিক একটা আবহের মধ্যে ডুবে যাবেন। এর বেশি আগাম বললে পাঠকের ভেতরে জন্ম হওয়া রহস্য নষ্ট হতে পারে বলে মনে করেন এই তরুণ গল্পকার। ২০০২ সালে দেশের অন্যতম রিয়েলিটি শো (সাবান সুন্দরী) থেকে রাজকীয় ওপেনিং পান সিকদার বংশের কুসুম। এরপর বিজ্ঞাপন ও নাটকে নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করেন খুব দ্রুত সময়ে অল্প কিছু কাজ দিয়ে। নাম লেখান চলচ্চিত্রেও। মাত্র তিন ছবিÑ‘লাল টিপ’, ‘গহীনে শব্দ’ ও ‘শঙ্খচিল’। শেষ ছবি থেকে ঘরে তুলে নেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার-২০১৬। এতে তিনি ক্যামেরার পেছনে পান কিংবদন্তি নির্মাতা গৌতম ঘোষ আর সামনে অভিনেতা প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়কে। মূলত এরপরই ঘোষণা দিয়ে অভিনয় থেকে বিরতি নেন কুসুম। তাহলে কি অভিনয়ে আর ফিরছেন না! লেখার টেবিলেই বাকি জীবন! জবাবে কুসুমবলেন, ‘আসলে বিষয়টা তো দলিলে সই করে কাউকে কথা দেওয়ার মতো বিষয় না। এটি একেবারেই ভেতর থেকে তাগিদ আসার বিষয়। আমি অভিনয় থেকে দূরে থাকার কারণ, নিরিবিলি নিজের মধ্যে থাকা। এটাই একমাত্র কারণ, তা কিন্তু নয়। পরিবেশ পরিস্থিতি আমাকে সায় দিয়ে কালও অভিনয় করতে পারি। তবে এই মুহূর্তে অভিনয় নিয়ে আমার কোনও পরিকল্পনা নেই।’ এরমধ্যে তিনি আত্মপ্রকাশ করেন কবি হিসেবে! ২০১৫ সালের গ্রন্থমেলায় প্রকাশ করেন প্রথম কবিতার বই ‘নীল ক্যাফের কবি’। ৩৪টি কবিতায় সাজানো বইটি থেকে ভালো সাড়া পান। স্বীকৃতি হিসেবে পান সিটি-আনন্দ আলো সাহিত্য পুরস্কার। এরপর ২০১৭ সালে সবাইকে চমকে দেন নিজের কথা-কণ্ঠে ‘নেশা’ গানচিত্র প্রকাশ করে। হৃদয় খানের সুর-সংগীতে বাঁধা গানটির ভিডিও নিয়ে বিতর্ক হলেও অডিও/গায়কি/গান টিকে থাকবে অনন্তকালÑঅভিমত বিজ্ঞদের। অবশ্য দুই দশক আগে নিজের প্রথম ও একমাত্র গানের অ্যালবাম প্রকাশ করে বুঝিয়ে দেন কিশোরী কুসুম, বৈচিত্র্যের সন্ধানে শুরু থেকেই তিনি ‘কচ্ছপ’; মানে স্লো অ্যান্ড স্টেডি।