চলতি বছরের আগামী ২৬ মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ উপলে নীলফামারীর চিলাহাটি ও ভারতের হলদীবাড়ি সীমান্ত হয়ে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে বাংলাদেশের তৃতীয় যাত্রীবাহী রেল সেবা চালু হতে যাচ্ছে। সপ্তাহে প্রতি সোম বৃহস্পতিবার নিউ জলপাইগুড়ি থেকে বেলা ২টায় এবং ঢাকা থেকে মঙ্গল ও শুক্রবার দিবাগত রাত একটায় ট্রেনটি যাতায়াত করবে। ২৫ ফেব্রুয়ারী সাংবাদিকদের বিষয়টি নিশ্চিত করেন বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক ধীরেন্দ্র নাথ মজুমদার। এ রেলসেবার চালুর বিষয়টি ছড়িয়ে পড়লে জেলাবাসী আনন্দ আত্মহারা হয়ে উঠে।
জানা যায়, দীর্ঘ ৫৫ বছর পর গত বছরের ১৭ ডিসেম্বর চিলাহাটি-হলদিবাড়ি রুটে পণ্যবাহী ট্রেনের আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয়েছিল। ওই দিন ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী যথাক্রমে শেখ হাসিনা ও শ্রী নরেন্দ্র মোদী এটির উদ্বোধন করেছিলেন। তিনি জানান, বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের জন্মশতবর্ষকে সামনে রেখে নতুন করে বাংলাদেশের ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট থেকে ভারতে পশ্চিমবঙ্গের শিলিগুড়ি (নিউ জলপাইগুড়ি বা এনজেপি) পর্যন্ত যাত্রীবাহি এই রেল সেবারও উদ্বোধন করবেন দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী।
বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক ধীরেন্দ্রনাথ মজুমদার জানান, গত ২৪ ফেব্রুয়ারী দুই দেশের রেল কর্মকর্তাদের বৈঠক শেষে এ রেল সেবা শুরুর পরিকল্পনা করা হয়েছে। এটি হবে পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে বাংলাদেশের তৃতীয় যাত্রীবাহি রেল সেবা। এই নতুন রেল পরিসেবায় নিউ জলপাইগুড়ি ও ঢাকার মধ্যে ট্রেনটি চলবে সপ্তাহে দুদিন। নিউ জলপাইগুড়ি থেকে ছাড়বে সোম ও বৃহস্পতিবার বেলা দুইটায়। আর ঢাকা থেকে ছাড়বে মঙ্গল ও শুক্রবার দিবাগত রাত একটায়। যাত্রাপথে সময় লাগবে ৯ ঘন্টা। তবে এই পথের ভাড়া এখনো নির্ধারণ করা না হলেও ইঙ্গিত দেয়া হয়, এসির ভাড়া ২ হাজার, চেয়ারকোচের ভাড়া ১ হাজার ৫’শ এবং স্লিপার কাসের ভাড়া ১ হাজার ২’শ-এর কাছাকাছি থাকবে।
ভারতের রেলওয়ের কাটিহার ডিভিশনের ডিআরএম (ডিভিশনাল রেলওয়ে ম্যানেজার) রবীন্দ্র কুমার ভার্মা সাংবাদিকদের জানান, এর আগে ২০০৮ সালের ১৪ এপ্রিল বাংলা নববর্ষের দিন “মৈত্রী এক্সপ্রেস” ট্রেনের মধ্যে দিয়ে চালু হয়েছিল ঢাকা-কলকাতা প্রথম যাত্রীবাহী রেল। এরপর ২০১৭ সালের ৯ নভেম্বর দ্বিতীয় রেল “বন্ধন এক্সপ্রেস” চালু হয়েছিল কলকাতার সঙ্গে বাংলাদেশে খুলনার মধ্যে। আর এবার ২৬ মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে চালু হচ্ছে নিউ জলপাইগুড়ি থেকে ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট পর্যন্ত তৃতীয় যাত্রীবাহী রেল পরিষেবা। তবে এখনো এই ট্রেন পরিষেবার নাম কী হবে, তা ঠিক হয়নি।
বাংলাদেশ রেলওয়ের পরিচালনা শাখার একাধিক কর্মকর্তা জানান, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বাণিজ্য ও পর্যটন বাড়াতে ট্রেন সেবা বাড়ানো হচ্ছে। অচিরেই নতুন ট্রেনের নাম ও টিকিটের মূল্য ধার্য করা হবে। ট্রেনটি হবে ১০ কামরার হবে। ট্রেনটি ৯ ঘণ্টায় নীলফামারীর চিলাহাটি ও ভারতের হলদিবাড়ি সীমান্ত দিয়ে চলাচল করবে। নিউ জলপাইগুড়ি থেকে ঢাকার দূরত্ব ৫৩০ কিলোমিটার। এর মধ্যে বাংলাদেশ অংশে রয়েছে ৪৪৬ কিলোমিটার। ভারতের অংশে রয়েছে ৮৪ কিলোমিটার। এই দীর্ঘপথে থাকছে উভয় দেশের ১৫টি স্টেশন। তবে কোনো স্টেশনে ট্রেনটি দাঁড়াবে না।
এদিকে এই ট্রেন চালুকে কেন্দ্র করে নীলফামারীর চিলাহাটি রেলষ্টেশনের নতুন রূপে তৈরীর নির্মাণ কাজ দ্রুত গতিতে চলছে। চিলাহাটি রেলস্টেশনকে আন্তর্জাতিকমানের হিসাবে তৈরীর কাজ চলছে। অপর দিকে ভারতের হলদিবাড়ি রেলষ্টেশনওে আন্তর্জাতিকমানের তৈরী করা হয়েছে।
নীলফামারী চেম্বার অফ কমার্স এ- ইন্ডাস্ট্রি’এর সভাপতি মারুফ জামান কোয়েল বলেন, ওই ট্রেনে আমরা নীলফামারী জেলায় আসন বরাদ্দের দাবি করছি। পাশাপাশি উত্তরাঞ্চলে যারা ভারতে চিকিৎসার জন্য যান তাদের জন্য চিলাহাটি স্টেশন থেকে বিশেষ ব্যবস্থা দেয়ার জন্য সরকারের কাছে আহবান জানাই।