দীর্ঘ ২০ বছর বন্ধ থাকার পর শনিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) থেকে কাজীরহাট-আরিচা নৌপথে ফেরি চলাচল আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়েছে।
শনিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী কাজীরহাট ঘাট থেকে ফেরি চলাচলের উদ্বোধন করেন। এর মাধ্যমে দীর্ঘদিনের প্রতীক্ষার অবসান হওয়ায় পাবনা বেড়া উপজেলাসহ গোটা পাবনাবাসীর মধ্যে খুশির আমেজ দেখা দিয়েছে।
ফেরি চলাচল উদ্বোধন উপলক্ষে কয়েক হাজার মানুষ কাজীরহাট ফেরিঘাটে জড়ো হন। এসব মানুষের করতালি ও উল্লাসের মধ্য দিয়ে ফেরি চলাচলের উদ্বোধন করা হয়। উদ্বোধনের আগে আরিচা থেকে ‘বেগম রোকেয়া’ ও ‘বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান’ নামের দুটি ফেরি আরিচা থেকে পাঁচটি পণ্যবোঝাই ট্রাক ও অন্যান্য যানবাহনসহ কাজীরহাটে পৌঁছে। ওই দুটি ফেরিতে করেই নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রীসহ অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা আরিচা থেকে কাজীরহাটে পৌঁছেন।
ফেরি চলাচল উদ্বোধনের পর বেড়া উপজেলার কাজীরহাট উচ্চবিদ্যালয় মাঠে আলোচনাসভার আয়োজন করা হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পাবনা ১ আসনের সাংসদ শামসুল হক টুকু, পাবনা-২ আসনের সাংসদ আহমেদ ফিরোজ কবির, মানিকগঞ্জ-১ আসনের সাংসদ নাঈমুর রহমান দুর্জয়, বিআইডব্লিউটিএর অতিরিক্ত সচিব সৈয়দ মো. তাজুল ইসলাম, পাবনা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ রেজাউল রহিম লাল, পাবনা জেলা প্রশাসক কবীর মাহমুদ, পাবনা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মহিবুল ইসলাম খান, বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যান কমডোর গোলাম সাদেক।
ব্যবসায়ী ও পরিবহন নেতারা জানান, কাজীরহাট ফেরিঘাটটি একসময় উত্তরাঞ্চলের প্রবেশদ্বার হিসেবে পরিচিত ছিল। বঙ্গবন্ধু সেতু চালু হওয়ার আগে উত্তরাঞ্চলের সঙ্গে ঢাকা, চট্রগ্রামসহ দেশের অন্যান্য এলাকার যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম ছিল কাজীরহাট ফেরিঘাট। তবে বঙ্গবন্ধু সেতু চালু হওয়ার পর একপর্যায়ে বন্ধ হয়ে যায় ফেরি চলাচল। ২০০১ সাল থেকে টানা প্রায় ২০ বছর ধরে কাজীরহাট-আরিচার মধ্যে ফেরি চলাচল বন্ধ থাকে। এই সময়ের মধ্যে পাবনাবাসীর পক্ষ থেকে বারবার ফেরি চালু করার দাবি তোলা হয়। এর মধ্যে অন্তত পাঁচজন মন্ত্রীসহ সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা কাজীরহাটে গিয়ে ফেরি চলাচলের প্রতিশ্রুতি দেন। কিন্তু প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়িত না হওয়ায় চরম হতাশ হয়ে পড়েছিলেন পাবনাবাসী। অবশেষে ফেরি চালু হওয়ায় পাবনাবাসীর মধ্যে ব্যাপক খুশির আমেজ দেখা দিয়েছে।
ব্যবসায়ী ও পরিবহন নেতারা হিসাব দিয়ে জানান, পাবনা, নাটোরসহ উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু হয়ে ঢাকায় যাতায়াতে অতিরিক্ত ১৭৫ কিলোমিটার ঘুরে যেতে হয়। কিন্তু কাজীরহাট ফেরিঘাট হয়ে যাতায়াতে ১৭৫ কিলোমিটার দূরত্ব কম হয়। ফলে পণ্য বহনে খরচও কম হয়।
এদিকে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি) সূত্রে জানা গেছে, প্রতিদিন চারটি ফেরি কাজীরহাট ও আরিচার মধ্যে যাতায়াত করবে। প্রয়োজ দেখা দিলে ভবিষ্যতে ফেরির সংখ্যা আরও বাড়ানো হবে।
পণ্য নিয়ে ফেরিঘাটে আসা ট্রাচালক আসাদুল ইসলাম ও রেজাউল হক বলেন, ‘যমুনা সেতুর তুলনায় কাজীরহাট-পাটুরিয়া নৌপথে ট্রিপ প্রতি দুই থেকে তিন হাজার টাকা সাশ্রয় হওয়ার কথা। এ ছাড়া আমরা (ট্রাকচালকেরা) ফেরিতে বিশ্রামের সুযোগ পাবো। তাই সব মিলিয়ে ফেরি চালু হওয়ায় আমরা খুব খুশি।’
নগরবাড়ী শিল্প ও বণিক সমিতির সভাপতি এ এম রফিকউল্লাহ বলেন, ‘আমাদের দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান হয়েছে। ফেরি চলাচল বন্ধ থাকায় নগরবাড়ী, কাজীরহাটের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অসংখ্য ব্যবসায়ী ও শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছিলেন। ফেরি চালু হওয়ায় এখানকার ব্যবসায়িক স্থবিরতা কেটে যাবে, বেকারত্বও দূর হবে। এজন্য সবাই খুব খুশি।’