ফরিদপুরের ভাঙ্গন কবলিত ডিক্রিরচর ইউনিয়ন রক্ষায় বাম্বু বান্ডেলিং প্রযুক্তি ব্যবহা করে ব্যক্তি উদ্যোগে পদ্মানদীর উত্তর পাড়ে বাঁধ নির্মাণ প্রকল্পের কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। বাঁধ নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হলে নদী ভাঙ্গনের হাত থেকে রক্ষা পাবে ১টি হাসপাতাল, ১টি কমিউনিটি ক্লিনিক, ৬টি সরকারি প্রাথমকি বিদ্যালয়, ১টি জুনিয়র হাই স্কুল ও মসজিদ-মাদ্রাসাসহ কয়েক হাজার বসতবাড়ি এবং হাজার হাজার একর ফসলী। এ কাজের অর্থায়ন করেছে শারমিন গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শিল্পপতি মো. ইসমাইল হোসেন। আর কারিগরি সহায়তা দিচ্ছেন ফরিদপুর নদী গবেষনা ইনষ্টিটিউট।
ফরিদপুর সদর উপজেলার অবহেলি ও পদ্মা নদীর ভাঙ্গন কবলিত ইউনিয়নটির নাম হচ্ছে ডিক্রিরচর ইউনিয়ন। পদ্মা নদীর ভাঙ্গনের কারণে ছিন্ন-ভিন্ন হয়ে গেছে এ ইউনিয়নটি। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে নদী ভাঙ্গণ হলেও ভাঙ্গন রোধে কোন কাজ না হওয়ায় এলাকাবাসী এই ইউনিয়নের কৃতী সন্তান শারমিন গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ইসমাইল হোসেন এর কাছে সহযোগিতা চায় এলাকাবাসী।
এলাকাবাসীর কথা চিন্তা করে মো. ইসমাইল হোসেন দ্রুত ফরিদপুর নদী গবেষনা ইনস্টিটিউট এর কারিগরি সহযোগিতা চান। নদী গবেষনা ইনস্টিটিউট এর প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা নদী ভাঙ্গণ কবলিত স্থান পরিদর্শণ করে দুই হাজার মিটার বাঁধ একটি প্রকল্প প্রনয়ন করে। শারমিন গ্রুপের সম্পূর্ণ অর্থায়নে ও নদী গবেষনা ইনস্টিটিউট এর কারিগরি সহায়তায় গত মঙ্গলবার দুপুরে বাঁধ নির্মাণ কাজে উদ্বোধন করা হয়। দ্রুত গতিেিত বাঁধ নির্মান কাজ এগিয়ে যাচ্ছে। আর বাঁধ নির্মাণ সম্পূর্ণ হলে নদী ভাঙ্গনের হাত থেকে রক্ষা পাবে ভূইয়া ডাঙ্গী, ভাংগী ডাঙ্গী, কাজেম মাতুব্বরের ডাঙ্গী, রোকন হাজীর ডাঙ্গী, ব্যাপারী ডাঙ্গী, মুন্সী ডাঙ্গী, উজির মাহমুদের ডাঙ্গীসহ ১টি হাসপাতাল, ১টি কমিউনিটি ক্লিনিক, ৬টি সরকারি প্রাথমকি বিদ্যালয়, ১টি জুনিয়র হাই স্কুল ও মসজিদ-মাদ্রাসাসহ কয়েক হাজার বসতবাড়ি ও হাজার হাজার একর ফনলী জমি। আর ভাঙ্গণ রোধে কাজ হওয়ায় খুশি নদী ভাঙ্গন কবলিত এলাকাবাসী।
ডিক্রিরচর ইউনিয়নের বি এম আলাউদ্দিন বলেন, আমরা পদ্মা নদী ভাঙ্গনে কারণে আমরা একেবারে নিশ্ব হয়ে গেছি। এখন আমাদের যাওয়ার কোন স্থান নেই। সরকারিভাবে নদী ভাঙ্গন রোধে কোন কাজ না, হওয়ায় আমাদের এলাকার সন্তান নিজ উদ্যোগে নদী ভাঙ্গন রোধে কাজ করা আমরা খুশি। এখন আমরা নদী ভাঙ্গনের হাত থেকে রক্ষা পাব।
ডিক্রিরচর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান মেহেদী হাসান মিন্টু বলেন, নদী ভাঙ্গনের কারণে আমার ইউনিয়নের হাজার হাজার পরিবার জেলার বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়েছে। এখনও ৪টি ওয়ার্ড নদী ভাঙ্গনের ঝুকির মধ্যে আছে। কিন্তু বাঁধ নির্মানে সরকারী ভাবে কোন প্রকল্প গ্রহন না করায় এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে আমরা আমাদের এলাকার কৃতী সন্তান শারমিন গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ইসমাইল হোসেন এর কাছে সহযোগিতা চাই, তিনি আমাদের কথা চিন্তা করে বাঁধ নির্মানের জন্য ১৫লাখ টাকা দিয়েছে। এখন বাঁধ নির্মাণ কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। বাঁধ নির্মাণ সম্পূর্ণ হলে আমার ইউনিয়নের ৭/৮হাজার পরিবারসহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাসপাতালসহ বহু স্থাপনা নদী ভাঙ্গণ থেকে রক্ষা পাবে।
শারমিন গ্রুপ ব্যাস্থাপনা পরিচালক মো. ইসমাইল হোসেন বলেন, আমার জন্মস্থান এটা, আমার শৈশব কেটেছে এখানে, এখন সামর্থ হয়েছে এলাকার মানুষের জন্য কিছু করার। তাই ডিক্রিরচরের স্কুল, হাসপাতাল, মসজিদসহ বিভিন্ন স্থাপনা ও জনবসতী নদী ভাঙ্গনের কবল থেকে রক্ষায় চেষ্টা করছি। তারই অংশ হিসাবে নদী তীরে বাঁধ নির্মাণ প্রকল্পের সূচনা হলো। আমরা চেষ্টা করব চরাঞ্চলের মানুষের সবধরনের সমস্যা সমাধানে তাদের পাশে থাকতে।
এদিকে নদী ভাঙ্গনে ক্ষতিগ্রস্থ এলাকাও বাঁধ নির্মাণ কাজ পরিদর্শন করেছেন হা-মীম গ্রুপের চেয়ারম্যান মো. মোতালেব হোসেন। এ সময় তার সাথে ছিলেন, ডিক্রিরচর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান মেহেদী হাসান মিন্ট, বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা একেকে’র নির্বাহী পরিচালক এ এ জলিল, বি এম আলাউদ্দিনসহ স্থাণীয় গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ।
বাম্বু বান্ডেলিং প্রযুক্তি প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক ও নদী গবেষনা ইনস্টিটিউটের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা কাজী রেজাউল করিম বলেন, বাম্বু বান্ডেলিং প্রযুক্তি ব্যাপক ভাবে সফল হবে। এখানে আমরা কয়েক বার এসে দেখলাম এখানে এই প্রযুক্তিটা ফলপ্রসু হবে। এই প্রযুক্তি ব্যবহা করে স্বল্পব্যায়ে নদী ভাঙ্গণ রোধে সফল হবে। ব্যডক্ত উদ্যোগে সারাদেশে যদি এভাবে কাজ হয় তাহলে আর নদী ভাঙ্গবেনা।