সৈয়দপুরে রেলওয়ের জমিতে অবৈধভাবে বহুতল ভবন নির্মান করা হচ্ছে। ওই ভবনের ওয়েল্ডিং কাজে অবৈধভাবে বিদ্যুৎ ব্যবহার করে ওভারলোড ওয়েল্ডিং মেশিন চালানোর ফলে আশেপাশের দোকানের একাধিক কম্পিউটারসহ বিভিন্ন দামি ডিভাইস নষ্ট হয়ে গেছে। ক্ষতিপুরনের দাবিতে বিক্ষোভ করেছে ক্ষতিগ্রস্থ ব্যবসায়ীরা।
৪ মার্চ শহরের শহীদ ডাঃ জিকরুল হক রোডস্থ সৈয়দপুর প্রেসক্লাবের সামনে তারা ওই বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে। এ সময় শহরের এ প্রধান সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। পরে ওভারলোড ওয়েল্ডিংয়ের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করলে পরিস্থিতি শান্ত হয়।
ওই এলাকার ব্যবসায়ীরা জানান, প্রেসক্লাব সংলগ্ন রেলওয়ের লিজ নেয়া জায়গায় ইমতিয়াজ প্রবাল দীর্ঘ প্রায় ২ মাস ধরে বহুতল ভবন নির্মানের কাজ করছেন। রেলওয়ের জমিতে কোন প্রকার নির্মাণকাজ করা অবৈধ হলেও তিনি এর কোন তোয়াক্কা না করেই চালিয়ে যাচ্ছেন তার ভবনের নির্মান কাজ। এমনি পরিস্থিতিতে সপ্তাহ খানেক আগে রাস্তার উপর প্রধান বৈদ্যুতিক ১১০০ ভোল্টেজের তারের উপর রড ফেলে দেয়ায় অগ্নিকান্ডের ঘটনাও ঘটে। পরে খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিস এসে তা নিয়ন্ত্রণ করে। ৩ মার্চ থেকে তিনি তার দোকানে ব্যবহৃত ২২০ ভোল্টের লাইন দিয়েই ৪৪০ ভোল্টের ওয়েল্ডিং মেশিন চালানোয় আশেপাশের দোকানগুলোর সংযোগেও এর প্রভাব পড়ায় লো ভোল্টেজ ও ওভার ভোল্টেজের চাপে ব্যাপক সমস্যা দেখা দেয়। এতে পাশের পপুলার হোমিও ফার্মেসীর ৩টি সিসি ক্যামেরা, ২টি এলইডি বাল্ব, মিলন কম্পিউটারের হার্ডডিস্ক, রাউটার, মিথিলা কম্পিউটারের প্রিন্টার, এলইডি টিউবলাইট, জনি বোরকা হাউসের ২টি বাল্ব, সিসি ক্যামেরা, নওশাদ ফুল বিতানের কম্পিউটার, আলপনা টেলিকমের একটি মোবাইল সার্ভিসিং ডিভাইসসহ আশেপাশের দোকানের বিভিন্ন ইলেকট্রিক পন্য সামগ্রী নষ্ট হয়ে যায়। এতে প্রায় কয়েক লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে ব্যবসায়িরা জানান।
এ ব্যাপারে আলপনা টেলিকমের সোহাগ জানান, ইতোপূর্বে তিনি নির্মাণ কাজে গ্যাস ওয়েল্ডিং ব্যবহার করলেও বুধবার হতে বিদ্যুতের খুটি থেকে অবৈধ সংযোগ নিয়ে ওয়েল্ডিংয়ের কাজ করায় এ বিভ্রাট দেখা দেয়। যে কারণে এতগুলো ইলেকট্রিক ডিভাইস নষ্ট হয়। বাধ্য হয়ে আমরা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে থাকি। এখনও তিনি গায়ের জোড়ে বলছেন তার ওয়েল্ডিংয়ের জন্য এসব নষ্ট হয়নি বরং আমাদের বৈদ্যুতিক সংযোগ লুজ থাকায় এমনটা হয়েছে। তার এ ভবন নির্মাণে ইতোপূর্বেও নানা অঘটন ঘটেছে। কিন্তু তারপরও তিনি বেপরোয়া। কোনরকম নিরাপত্তা ব্যবস্থা না নিয়েই তিনি এমনভাবে বহুতল ভবন তৈরী করছেন। এতে যে কোন সময় বড় ধরণের দূর্ঘটনা ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
পপুলার হোমিও ফার্মেসীর ডাঃ এরশাদ হোসেন বলেন, এভাবে কি করে তিনি দোকানের সাধারণ বৈদ্যুতিক লাইন ব্যবহার করে উচ্চ ভোল্টেজের ওয়েল্ডিং মেশিন চালাচ্ছেন তা বোধগম্য নয়। একেতো অবৈধভাবে রেলওয়ের ও পৌরসভার কোন প্রকার অনুমোদন না নিয়েই ভবন নির্মান করা হচ্ছে। তার উপর বিদ্যুৎ ব্যবহারেও অবৈধ পন্থায় অবলম্বন করেছেন। আমরা আমাদের ক্ষতিপুরণ দাবি করছি। এখানে বড় ধরণের দূর্ঘটনা ঘটলে এর দায় কে নিবে। আমরা অবরোধ না করলে বিদ্যুৎ বিভাগের লোকজন আসতো না। কারণ তাদেরকে ম্যানেজ করেই ওই ব্যক্তি তার ভবনের নির্মাণ কাজ করছেন বলে জানা যায়।
সৈয়দপুর নর্দান ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানীর সাব ইঞ্জিনিয়ার ও বিদ্যুৎ লাইনের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কৃষ্ণ রায় জানান, তিনি যে মেশিন ব্যবহার করছেন তা ৪৪০ ভোল্টেজের। এজন্য তিন তারের সংযোগপূর্ণ লাইন ব্যবহার করতে হয়। কিন্তু তিনি ওভারলোড ব্যবহার করায় অন্যান্য সংযোগে এর প্রভাব পড়ায় এমনটা ঘটতে পারে। আমরা বিষয়টি দেখছি। আপাতত ওয়েল্ডিংয়ের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছি। আবারও যদি তিনি এ সংযোগে ওয়েল্ডিং মেশিন ব্যবহার করেন তাহলে তার সকল মালামাল জব্দ করা হবে।
এ ব্যাপারে সৈয়দপুর নর্দান ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানীর নির্বাহী প্রকৌশলী সালাহ উদ্দিন বলেন বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
এদিকে ভবনের মালিক ইমতিয়াজ সাংবাদিকদের বলেন, বিদ্যুৎ অফিসের সাথে কোন প্রকার কথা বলিনি। দোকানের যে সংযোগ আছে তা দিয়েই ওয়েল্ডিং মেশিন চালানো হয়েছে। এতে তো কোন সমস্যা হওয়ার কথা নয়। ২২০ ভোল্টের সংযোগে কিভাবে ৪৪০ ভোল্ট মেশিন চালালেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমার কোন ধারণা নেই। যদি প্রয়োজন হয় তাহলে বিদ্যুৎ অফিসে যোগাযোগ করবো।