১৯৭১ সালের ১১ই মার্চ দিনটি ছিল বৃহস্পতিবার। ওইদিন টাঙ্গাইলে বিন্দুবাসিনী হাইস্কুল ময়দানে অনুষ্ঠিত বিশাল এক জনসভায় ভাষণ দেন ন্যাপপ্রধান মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী। স্বাধীনতা অর্জনে পাকিস্তানি হায়েনাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে তিনি সেদিন হুঙ্কার ছুড়ে দেন। মওলানা ভক্ত, অনুরাগী, দলীয় কর্মী ও গণমানুষের উদ্দেশে জনসভায় বঙ্গবন্ধু ঘোষিত স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রতি পূর্ণ সমর্থন ঘোষণা করে তিনি বলেন, ‘শেখ মুজিবুর রহমান ৭ কোটি বাঙালির নেতা। নেতার নির্দেশ পালন করুন। লক্ষ্য অর্জনের জন্য সবাই একজোট হয়ে ঐক্যবদ্ধ সংগ্রাম করুন। স্বাধীনতা ছাড়া আপোসের আর কোনো পথ খেলা নেই। স্বাধীনতাই একমাত্র মুক্তির পথ।’
অপরদিকে ওইদিন স্বাধীনতার অধিকার প্রতিষ্ঠাকে ভেস্তে দেওয়ার হীন উদ্দেশ্যে বাঙালিদের ওপর হামলা করে স্বৈরাচার পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী। আন্দোলনে নামে মুক্তিকামী বাঙালিরাও। ফলে উভয়দলের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংর্ঘষের ঘটনা ঘটে। যেকারণে ১১ মার্চের দিনটি রক্তভেজা হিসেবেও বাঙালি জাতির নিকট পরিচিত। একাত্তরের অগ্নিঝরা মার্চ মাসের একাদশ দিবসে মুক্তিকামী জনতা স্বাধীনতার সূর্য ছিনিয়ে আনতে জেগে উঠেছিলো। ডাক দিয়েছিলো অসহযোগ আন্দোলনের। দলমত নির্বিশেষে বাঙালিরা অবস্থান নিয়েছিলো স্বৈরাচারী পাকিস্তানি শাসক গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে। যার ফলে বাঙালিদের আন্দোলনের তোপেরমুখে পড়েন পাকিস্তানি শাসক। আন্দোলনের ফলে সৃষ্টি হয় তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের সর্বত্রজোড়ে অচলাবস্থা। স্বৈরাচারী পাকিস্তান শাসক গোষ্ঠীর সঙ্গে বাঙালিদের শুরু হয় পাল্টা-পাল্টি একাধিক হামলা-সংঘর্ষ। এতে দু’ পক্ষের অনেকেই আহত এবং নিহত হয়। রাজপথ তাজা রক্তেভেজা হয়ে যায়। কিন্তু বাঙালিরা তাতেও তাদের অবস্থান থেকে বিন্দু মাত্রও সরে দাঁড়ায়নি। বরং দৃঢ়ভাবে পাকিস্তানি শত্রুদের সঙ্গে লড়তে থাকে স্বাধীনতা আন্দোলন-সংগ্রামে। এতে ধাপে ধাপে অগ্রগতি হতে থাকে বাঙালিদের স্বাধীনতার প্রাপ্তি।
একাত্তরের ওইদিন পূর্ব পাকিস্তানের গর্ভনর হিসেবে টিক্কা খানের শপথ নেবার কথা থাকলেও বিচারপতি বি. এ. সিদ্দিকী শপথ বাক্য পাঠ করাননি। এ নিয়ে চট্টগ্রামে স্বাধীনমূখি জনতা আনন্দ মিছিল বের করে। এ রকম একটি মিছিল নগরীর দেওয়ানহাট হয়ে হালি শহরের দিকে যাওয়ার সময় হঠাৎ পথে বিহারী জল্লাদরা তলোয়ার আর গুলি নিয়ে মিছিলরত নিরীহ নিরস্ত্র বাঙালিদের আক্রমণ করে। পনেরো-বিশজন বাঙালি নিহত ও অর্ধশতাধিক আহত হবার খবর আসে। প্রত্যুত্তরে কিছু বাঙালি যুবক টাইগার-পাশে দুজন বিহারীকে গুলি করে। এ ঘটনার পর সন্ধ্যায় সারা শহরে টহল দেয় আর্মি। থমথমে হয়ে যায় পুরো শহর। আর্মির গাড়িতে বিহারী জল্লাদরাও ছিল। আগ্রাবাদ মোড় হতে পাচ-ছয়জন বাঙালি যুবককে তুলে নেওয়ার খবর পাওয়া যায়। এঁদের আর খুঁজে পাওয়া যায়নি।
১১ই মার্চ রাজধানী ঢাকাসহ এদেশের বেশকিছু স্থানে পাকিস্তানিদের সঙ্গে দফায় দফায় তুমূল রক্তক্ষয়ী সংর্ঘষ বাধে বাঙালিদের। পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে কয়েকটি ছাত্র সংগঠন এবং মুক্তি সংগ্রাম পরিষদ মিছিল-সমাবেশ করে। স্বাধীনতাকামী বিক্ষোব্ধ জনতারা সবাই নিজ নিজ অবস্থান থেকে স্বাধীনতার অধিকার প্রতিষ্ঠায় সংগ্রাম চালাতে অব্যাহত থাকে। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার চত্ত্বরে আয়োজন করা হয় এক জরুরি বৈঠক। বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় কিভাবে স্বৈরাচার পাকিস্তানিদের নিকট নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করা যায়।
দেশের অর্থনৈতিক চাকারগতি স্বাভাবিক রাখতে হরতাল, অসযোগ আন্দোলনের মধ্যেও এদিন সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ব্যাংক লেনদেন করার ঘোষণা দেয়া হয়। বাংলাদেশের কোথাও পাকিস্তানের পতাকা ওড়েনি। সারা দেশে প্রতিটি বেসরকারি ভবন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও বাসগৃহে উড়েছে স্বাধীন বাংলার পতাকা। পাকিস্তানি পতাকা উড়েছে শুধু ক্যান্টনমেন্টগুলোতে।
কার্যত বাংলাদেশ তখন পাকিস্তান নিয়ন্ত্রণমুক্ত। হাইকোর্টের বিচারপতি থেকে শুরু করে মন্ত্রণালয়ের সচিব, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি, সর্বস্তরের প্রশাসনিক কর্মকর্তা- সবাই মেনে চলেছেন অসহযোগ আন্দোলনের নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশ। আওয়ামী লীগ ও সংসদীয় দলের প্রধান শেখ মুজিব তখন বাস্তব অর্থেই ঢাকা তথা বাংলাদেশের প্রধান।
একাত্তরের ওইদিনে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ডাক, তার ও টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে স্টেট ব্যাংক, তফসিলি ব্যাংক ও সরকারি ট্রেজারিতে স্বাভাবিক লেনদেন শুরু হয়। বিমান চলাচল ছাড়া সড়ক, রেল ও নৌচলাচল অব্যাহত থাকে। নগরীর বিপণীবিতানগুলো বিকাল পর্যন্ত খোলা থাকে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, ছাত্র সংগঠন ও পেশাজীবী প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে রাজধানীতে সভা, সমাবেশ ও মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। নারায়ণগঞ্জে ছায়াছবি প্রদর্শনীর আগে প্রেক্ষাগৃহগুলোতে পাকিস্তানের জাতীয় সঙ্গীতের বদলে ‘জয় বাংলা-বালার জয়’ গান পরিবেশিত হয়।
ন্যাপ (ওয়ালি) বাংলাদেশ শাখার সভাপতি অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ, পাঞ্জাব আওয়ামী লীগ সভাপতি এম খুরশীদ, কাউন্সিল মুসলিম লীগ প্রধান মমতাজ দৌলতানার বিশেষ দূত পীর সাইফুদ্দিন ও ঢাকায় নিযুক্ত জাতিসংঘের সহকারী আবাসিক প্রতিনিধি কে উলফ বাংলাদেশের অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে তার ধানমন্ডির বাসভবনে পৃথক বৈঠকে মিলিত হন। রাতে এক সামরিক নির্দেশে বলা হয়, কেউ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সরকারি সম্পত্তির ক্ষতিসাধন করলে অথবা সেনাবাহিনীর রক্ষণাবেক্ষণ বা গতিবিধিতে অন্তরায় সৃষ্টি করলে তাদের সংশ্লিষ্ট সামরিকবিধি অনুযায়ী বিচার করা হবে।
স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের পক্ষ থেকে এদিন দুটি বিবৃতি দেয়া হয়। পরিষদ নেতা নূরে আলম সিদ্দিকী, আ স ম আবদুর রব, শাজাহান সিরাজ ও আবদুল কুদ্দুস মাখন এক যুক্ত বিবৃতিতে বলেন, ‘১০ মার্চ ভোরে চট্টগ্রাম বন্দরের ১৭ নম্বর জেটিতে এমএন সোয়াত নামে একটি অস্ত্রবাহী জাহাজ নোঙর করে। বন্দর শ্রমিকরা ওই জাহাজ থেকে সমরাস্ত্র খালাসের নির্দেশ প্রত্যাখ্যান করেন। স্বাধীন বাংলার নিরস্ত্র জনগণের বিরুদ্ধে ব্যবহারের জন্যই এ সমরাস্ত্র বাংলাদেশে আনা হয়েছে। এ ব্যাপারে আমরা বাংলাদেশের জনসাধারণকে সজাগ করে দিচ্ছি।’
স্বাধীন বাংলা কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের অপর এক বিবৃতিতে পাকিস্তান সরকার প্রদত্ত যাবতীয় পদক ও খেতাব বর্জনের জন্য বাংলাদেশের জনগণের প্রতি আহ্বান জানানো হয়। রাতে আওয়ামী লীগের পক্ষে জনগণের উদ্দেশ্যে প্রশাসনিক ও ব্যাংকিং-সংক্রান্ত কিছু নির্দেশনামা ঘোষণা করা হয়।
জাতীয় লীগপ্রধান আতাউর রহমান খান এক বিবৃতিতে পশ্চিম পাকিস্তানের রাজনৈতিক নেতাদের উদ্দেশে বলেন, ‘ভাবাবেগে বিহ্বল না হয়ে বাস্তব সত্যকে উপলব্ধি করুন। আসুন আমরা ভাই ও বন্ধুর মতো কোলাকুলি করে পরস্পরের কাছ থেকে বিদাই নেই।’
পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান জুলফিকার আলী ভুট্টো করাচি থেকে ১১ মার্চ বঙ্গবন্ধুর কাছে তারবার্তা পাঠান। তারবার্তায় ভুট্টো বলেন, ‘আমি শিগগির আবার ঢাকায় গিয়ে আপনার সঙ্গে আলোচনা করে উদ্ভূত সমস্যার একটি সমাধান বের করার জন্য তৈরি আছি।’ করাচিতে গণঐক্য আন্দোলনের নেতা এয়ার মার্শাল (অব.) আসগর খান সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের এখন উচিত আওয়ামী লীগ প্রধানের দেয়া শর্ত মেনে নিয়ে ক্ষমতা হস্তান্তর করা। সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের হাতে অবিলম্বে ক্ষমতা ছাড়া না হলে দেশের দুই অংশকে এক রাখা কোনোভাবেই সম্ভব হবে না।’
পাকিস্তানের প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতাদের এসব বিবৃতিতে একদিকে বাংলাদেশের মানুষের মনে শক্তি সঞ্চারিত হয়, এতে পাকস্তিান বাহিনীর মনোবল ক্রমশ ভেঙে পড়তে থাকে।
অপরদিকে সারা দেশে অসহযোগ আন্দোলনের ফলে পরিস্থিতি ক্রমেই অবনতির দিকে গড়াতে থাকে। দেশের অনেক জায়গায় লোকজন চোরাগোপ্তা হামলা শুরু করে দেন।
এদিন বরিশাল কারগার ভেঙ্গে ৪০জন কয়েদি পালিয়ে বের হয়। নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে ২জন নিহত ও ২০আহত হয়েছিলো। বগুড়া জেলখানা ভেঙ্গে ২৭ জন কয়েদি পালিয়ে যায়। এ সময় কারারক্ষীদের গুলিতে ১ জন কয়েদি নিহতসহ ১৫ জন আহত হয়। কুমিল্লা কারাগার থেকেও বন্দী পলায়নের ঘটনা ঘটে। এছাড়া বেশ কিছু কয়েদি দেশের বিভিন্ন কারাগার থেকে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। এতে সৃষ্টি হয় আইন শৃঙ্খলার চরম পরিস্থিতি। পূর্ব পাকিস্তানের প্রশাসনের উপর বাঙালি রাজনৈতিক নেতাদের কর্তৃত্ব আরো সুসংহত হতে থাকে।
পূর্ব ঘোষিত অনুযায়ী এদিন দেশব্যাপী হরতাল পালিত হয়। পূর্ব পাকিস্তান সিভিল সার্ভিসের দ্বিতীয় শ্রেণীর কর্মচারীরা বঙ্গবন্ধুর প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন করেন। তারা আওয়ামী লীগের তহবিলে এক দিনের বেতন দান করেন। করাচিতে এয়ার মার্শাল মোহাম্মদ আসগর খান এক সংবাদ সম্মেলন করেন। সেখানে তিনি বলেন, পাকিস্তানকে রক্ষা করার জন্য হাতে আর মাত্র ক’টি দিন বাকি আছে। ঢাকায় একটি গুলি কিংবা সামরিক ব্যবস্থা নেয়া হলে পাকিস্তান ভেঙে যাবে।
ঢাকার জাতিসঙ্ঘের সহকারী আবাসিক প্রতিনিধি উলফ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে সাক্ষাৎ করেন বিশ্বসংস্থার কর্মচারীদের অন্যত্র স্থানান্তর বিষয়ে আলোচনা করার জন্য। তবে তার প্রয়োজন নেই বলে সিদ্ধান্ত নেন তিনি।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তাজউদ্দিন আহমদ এক বিবৃতিতে ব্যাংকসহ বিভিন্ন অফিসকে নির্দেশ দিয়ে বলেন, ‘কায়েমি স্বার্থের চক্রান্ত ব্যর্থ করুন। চূড়ান্ত বিজয়ের জন্য অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে কঠোর শৃঙ্খলা রক্ষা করতে হবে।’
স্বাধীন বাংলার দাবিতে অবিচল সর্বস্তরের মানুষ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশ অনুযায়ী সরকারের সাথে সব ধরনের অসহযোগিতা অব্যাহত রাখেন। হাইকোর্টের বিচারপতি ও প্রশাসনের সচিবসহ সারা বাংলায় সরকারি ও আধাসরকারি প্রতিষ্ঠানের সর্বস্তরের কর্মচারি অফিস বর্জন করেন।
সচিবালয়, মুখ্য সচিবের বাসভবন, প্রধান বিচারপতির বাসভবনসহ সকল সরকারি ও আধাসরকারি ভবন ও বাড়ির শীর্ষে স্বাধীন বাংলার পতাকা উড়ানো হয়। জাতীয় পরিষদ সদস্য মোহাম্মদ জহিরউদ্দিন পাকিস্তান সরকার প্রদত্ত খেতাব বর্জন করেন। রাওয়ালপিন্ডিতে এক সরকারি ঘোষণায় ২৩ মার্চ পাকিস্তান দিবসের নির্ধারিত সম্মিলিত সশস্ত্র বাহিনীর কুচকাওয়াজ, খেতাব বিতরণ ও অন্যান্য অনুষ্ঠান বাতিল করা হয়।
প্রাদেশিক পরিষদে আওয়ামী লীগ দলের নেতা ক্যাপ্টেন মনসুর আলী এক বিবৃতিতে বাংলাদেশের জন্য পাঠানো খাদ্যবোঝাই মার্কিন জাহাজের গতি বদলে করাচি প্রেরণের ঘটনায় উৎকণ্ঠা ও নিন্দা প্রকাশ করেন।
ন্যাপ (ওয়ালী) পূর্ববাংলা শাখার সভাপতি অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ, পাঞ্জাব আওয়ামী লীগ সভাপতি এম খুরশীদ, কাউন্সিল মুসলিম লীগ প্রধান মমতাজ দৌলতানার বিশেষ দূত পীর সাইফুদ্দিন ও ঢাকায় নিযুক্ত জাতিসংঘের সহকারী আবাসিক প্রতিনিধি কে উলফ আজকের এইদিনে শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে পৃথক বৈঠকে মিলিত হন।
সংগ্রামী জনতা সেনাবাহিনীর রেশন ও নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রীর স্বাভাবিক সরবরাহের ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি করে। সিলেটে রেশন নেয়ার সময় সেনাবাহিনীর একটি কনভয়কে বাধা দেয়া হয়। যশোরেও এ ধরনের ঘটনা ঘটে।
রাতে সামরিক কর্তৃপক্ষ ১১৪ নম্বর সামরিক আদেশ জারি করে নির্দেশ দেয় যে, কেউ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সরকারি সম্পত্তির ক্ষতিসাধন করলে অথবা সশস্ত্রবাহিনীর রক্ষণাবেক্ষণ বা গতিবিধিতে অন্তরায় সৃষ্টি করলে তাদের কার্যকলাপ আক্রমণাত্মক কাজের শামিল বলে গণ্য হবে, যা সংশ্লিষ্ট সামরিক বিধি অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান জুলফিকার আলী ভুট্টো করাচি থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কাছে একটি তারবার্তা পাঠান। এতে তিনি বলেন, উদ্ভূত সামপ্রতিক ঘটনাবলীতে আমি গভীরভাবে মর্মাহত ও উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছি। দেশের ভবিষ্যৎ আজ অনিশ্চিত। এ ব্যাপারে আমাদের উভয়ের অনেক দায়িত্ব রয়েছে। ধ্বংস এড়ানোর জন্য সম্ভাব্য সবকিছুই আমাদের করতে হবে। যে কোনো মূল্যের বিনিময়ে দেশকে রক্ষা করতে হবেই।
করাচিতে গণঐক্য আন্দোলনের নেতা এয়ার মার্শাল (অব.) আসগর খান সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন, খুব দ্রুত পটপরিবর্তন হচ্ছে। দেশকে বিচ্ছিন্নতার হাত থেকে রক্ষা করতে হলে যথা শিগগির ব্যবস্থা নিতে হবে। আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ মুজিবুর রহমানই কার্যত এখন ঢাকার সরকার। তিনি বলেন, সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের হাতে অবিলম্বে ক্ষমতা ছাড়া না হলে দেশের দুই অংশকে এক রাখা কোনোভাবেই সম্ভব হবে না।
১১ মার্চ থেকে চলচ্চিত্র প্রদর্শকরা বঙ্গবন্ধুর অসহযোগ আন্দোলনের প্রতি সমর্থন জানিয়ে ঢাকাসহ সারাদেশে অনির্দিষ্টকাল প্রেক্ষাগৃহ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেন।
লাহোরে ন্যাপের মহাসচিব সি আর আসলাম বলেন, দেশের বর্তমান সঙ্কটের জন্য একচেটিয়া পুঁজিপতি ও আমলারাই দায়ী। ভুট্টোর হুমকিপূর্ণ মনোভাব ও ক্ষমতা লিপ্সাই রাজনৈতিক সঙ্কটকে আরো মারাত্মক করে তুলেছে।
ওইদিন বাঙালিদের প্রকৃত অবস্থা বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরার জন্য বঙ্গবন্ধু বিদেশী সাংবাদিকদের প্রতি আহ্বান জানান। আর সাংবাদিকরাও এব্যাপারে দায়িত্ব পালন করতে তৎপর থাকেন।
(লেখক : এম. কে. দোলন বিশ্বাস, দৈনিক সংবাদের সাবেক সহ-সম্পাদক)