রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার সকল মাদক ব্যবসায়ী ও গডফাদারদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে আইন শৃংঙ্খলাবাহিনীকে নির্দেশ ও অনুরোধ জানিয়েছেন গোদাগাড়ী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম। বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০ টায় গোদাগাড়ী উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে মাসিক আইন শৃংঙ্খলা, সন্ত্রাস নাশকতা, মাদকদ্রব্য-চোরাচালানসহ বিভিন্ন সভায় এই নির্দেশনা প্রদান করা হয়। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো: জানে আলমের সভাপতিত্বে উপজেলা মিলনায়তনে এই সভা হয়।
উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, গোদাগাড়ীতে কোন মাদক ব্যবসায়ী নেই, আর যদি থাকতো তবে সারাদেশে মাদকবিরোধী অভিযান চলার সময় গোদাগাড়ীতে একজন মাদক ব্যবসায়ীকে ক্রশফায়ার দেয়া হলো না কেন? মাদক ব্যবসায়ীরা খুবই শক্তিশালি। মাদক ব্যবসায়ীরা বলে পুলিশ, বিজিবি, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সদস্যদের কিনে রেখেছি, তাই তো মাদক ব্যবসা করে বীর দাপটে ঘুরে বেড়াচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, আমার সাথে এমপি মহোদয়ের সাথে ব্যানার ধরে কোন মাদক ব্যবসায়ী ছবি তুলে ফেসবুকে দেন, আমার অফিসে এসে আমার সাথে ছবি তুলে ফেসবুকে পোষ্ট দেন সেই পোষ্ট নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা করে পত্রিকায় বিস্তর লেখা হয়, কিন্তু পুলিশ তাদের ধরেন না কেন? পুলিশ, বিজিবি, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরসহ বিভিন্ন বাহনীর নিকট মাদক ব্যবসায়ীদের তালিকা আছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন করা হচ্ছে না কেন? তাদের গ্রেফতার করা হচ্ছে না কেন? তাদের গ্রেফতার করা হলে, উপজেলা চেয়ারম্যান, ইউপি চেয়ারম্যান দলীয় নেতারা কোন তদবির করবেন না।
প্রধানমন্ত্রী মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষনা করেছেন। এতে প্রমান হয় মাদকের পক্ষে কেউ নেই। আপনারা কোন ব্যক্তিকে মাদকসহ ধরলে আপনার এসপি, ডিআইজি, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মাদক ছাড়ার কথা বললে ছাড়বেন না, এজন্য আপনার চাকুরী চলে গেলে আপনাকে প্রধানমন্ত্রী পুরস্কৃত করবেন। আপনারা জনগনের উপর দোষ দিয়ে আপনার দায়িত্ব এড়িয়ে যাবেন না। সীমান্ত এলাকায় কাঁটা তারের বেড়া থাকা শর্তেও হেরোইন, ফেনসিডিল, মদসহ অন্যান্য মাদকদ্রব্য আসে কি করে ?। আপনারা আরও আন্তরিক হলে কোন মাদকদ্রব্য দেশে আসবে না।
গোদাগাড়ী প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আবদুল বাতেন বলেন, মাদক ব্যবসায়ীদের পুলিশের সখ্যতার অভিযোগ রয়েছে, কয়েক মাস থেকে পুলিশের মাদকবিরোধী অভিযান দেখা যায় না, যেখানে র্যাবসহ অন্য সংস্থার সাফল্য রয়েছে। ফলে মাদক ব্যবসায়ীরা দিন দিন তাদের অবৈধ ব্যবসা বাধাহীন গতিতে চালিয়ে যাচ্ছে। আমি দীর্ঘ দিন সংবাদ পরিবেশন করে আসছি। উপজেলা বাউন্ডারির মধ্যে ফেনসিডিলের বোতল পাওয়া যায়। মাদক ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কমিটির সভাপতি হয় এ লজ্জা কোথায় রাখি। পৌরসভা নির্বাচনে কয়েক জন তালিকা ভুক্ত মাদক নির্বাচিত হয়েছেন। এরা অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী হওয়ায় প্রভাব বিস্তার করে নির্বাচিত হয়েছেন। সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানাচ্ছি।
উপজেলার গোপালপুর মিষ্টির দোকানের সামনে হেরোইন, ইয়াবা, ফেনসিডিলের কারবার চলে এ ছাড়া রাজাবাড়ী, প্রেমতলী হাসপাতাল এলাকা, রেলবাজার মনির হোটেল, কসাইপাড়া, মহিশালবাড়ী গরুরহাট, সুলতানগজ্ঞ, ফিরোজ চত্ত্বর, সুলতানগজ্ঞ, বাসুদেবপুর, পিরিজপুর, কুমুরপুর, মাদারপুর, শিবসাগর প্রভূতি এলাকায় অবাধে হোরোইন, ফেনসিডিল, ইয়াবা, গাঁজাসহ বিভিন্ন ধরনের মাদকসেবন, বেচা বিক্রিসহ ছোটবড় অপরাধ হয়। ওই স্থানে অভিযান ও মোবাইলকোর্টসহ মাদকব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে সামাজিকভাবে প্রতিরোধ গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নেয়া প্রয়োজন। তার বক্তব্যকে সমর্থন দেন পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ¦ অয়েজ উদ্দিন বিশ্বাস, উপজেলা চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম।
অন্যান্য বক্তাগণ বলেন, গোদাগাড়ীর আইনশৃঙ্খলা ভালই আছে, তবে আরও ভাল রাখার জন্য উপজেলার পুলিশ, বিজিবি, সরকারী কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি, স্থানীয় নেতৃবৃন্দের অনেক সচেতন হতে হবে। গোদাগাড়ীর একটাই বদনাম মাদক, হিরোইন, ইয়াবা, ফেনসিডিল,গাঁজাসহ বিভিন্ন ধরণের মাদক ব্যবসায়ী গডফাদার এখানে রয়েছে। এদের কারণে মাঝে মাঝে আইন শৃঙ্খলার অবনিতি হয়। করোনার কারণে মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান কম হওয়ায় পালিয়ে থাকা বিভিন্ন সংস্থার তালিকাভুক্ত মাদক ব্যবসায়ীরা বীর দাপটে এলাকায় এসে তাদের অবৈধ কারবার আবার চালু করায় মাদকের সহজলভ্যতা ফের শুরু হয়েছে।
বিজিবি যদি মনে করেন সীমান্ত দিয়ে মাদক তো দূরের কথা একটি পাখিও আসবে না সেটা সম্ভব। পুলিশ বিজিবিকে মাদক প্রতিরোধে আরও সচেতন হতে হবে। তাদরের এবং সমাজের অবক্ষয় প্রতিরোধে, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা জনপ্রতিনিধিদের এ সভায় উপস্থিত থাকা প্রয়োজন কিন্তু তারা প্রায় অনুউপস্থিত থাকেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষনা করেছেন তাই কোনভাবে মাদকব্যবসায়ীরা যেন পার পেতে না পারেন সেজন্য তাদের বিরুদ্ধে শক্ত মামলা, চার্জসীট প্রদান করতে হবে।
সভায় ১৭ মার্চ জাতির জনকের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন, ২৫ মার্চ গণহত্যাদিবস ও ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা উদযাপনের প্রস্তুতি নিয়ে বিভিন্ন আলোচনা হয়।
সভায় উপস্থিত ছিলেন, গোদাগাড়ী মডেল থানার ওসি খলিলুর রহমান পাটোয়ারী, বিজিবির প্রতিনিধি, উপজেলা ভারপ্রাপ্ত সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আশোক কুমার চৌধুরী, মহিশালবাড়ী মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক, সাংবাদিক কলামিষ্ট মোঃ হায়দার আলী। গোদাগাড়ী শিশু নিকোতনের অধ্যক্ষ বরজাহান আলী পিন্টু, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান, বিভিন্ন দপ্তরের প্রধানগণ ও সুধিজন উপস্থিত ছিলেন।