বসুরহাট পৌরসভার মেয়র আবদুল কাদের মির্জাকে গ্রেফতার করা হতে পারে এরকম গুঞ্জন বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর থেকে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলাসহ সারা নোয়াখালীতে ছড়িয়ে পড়ে। অবশেষে গুঞ্জন মিথ্যায় পরিণত হয়েছে। তিনি বৃহস্পতিবার রাতে পৌরসভা কার্যালয়ে কয়েকজন নেতাকর্মীসহ অবস্থান করেছেন। রাত ১০টা পর্যন্ত পৌরসভার পূর্বপাশে বিপুল পরিমান র্যাব, পুলিশ মোতায়েন ছিল। রাত ১০টার পর র্যাব চলে যায়। রাস সাড়ে ১০টার দিকে পৌরসভা ভবনের পূর্ব পাশে ১০-১২জন পুলিশ, পৌরসভা কার্যালয়ের সামনে মেয়রের নিরাপত্তার জন্য ১০-১২জন পুলিশ এবং কার্যালয়ের সামনে পুকুরের দক্ষিণ পাশে ১০-১২জন পুলিশ এখন পর্যন্ত মোতায়েন রয়েছে। রাত সাড়ে ১২টা পর্যন্ত নোয়াখালী পুলিশ সুপার মোঃ আলমগীর হোসেন কোম্পানীগঞ্জ থানায় অবস্থান করছিল। বসুরহাট পৌরসভা মেয়রের অফিসের মেইন গেইটে ৪টি সিসি ক্যামেরা বসানো হয়েছে।
শুক্রবার সকাল ১০টায় পৌরসভা কার্যালয়ে হামলা, গুলি ও ককটেল বিষ্ফোরণের ঘটনায় আহত বসুরহাট পৌরসভার ৮নং ওয়ার্ডের রাজিব ও আনোয়ার, চরহাজারী ১নং ওয়ার্ডে আলা উদ্দিন, চরকাঁকড়া ৩নং ওয়ার্ডের মাঈন উদ্দিন কে তাদের বাড়িতে দেখতে যান এবং তাদেরকে আর্থিক অনুদান প্রদান করেন আবদুল কাদের মির্জা। বসুরহাট বাজারে র্যাব-১১, ডিবি পুলিশ, অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। ৪জন অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের নেতৃত্বে ২২ প্লাটুন পুলিশ, ৩ প্লাটুন দাঙ্গা পুলিশ, ১ প্লাটুন ডিবি পুলিশ, ২ প্লাটুন র্যাব এর পাশাপাশি ৭জন অতিরিক্ত পুলিশ পরিদর্শক মোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়াও পৌরসভার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে র্যাব ও পুলিশ মোতায়ন রয়েছে। পুলিশ দাবী করছে, বসুরহাট বাজারে এখন স্বাভাবিক অবস্থান বিরাজমান করছে। শুক্রবার আরও ৯প্লাটুন পুলিশ বিভিন্ন জেলা থেকে আনা হয়েছে। তবে বসুরহাটবাসী আতঙ্কে রয়েছে, পরিস্থিতি এখনও থমথমে। মেয়রের নিরাপত্তার জন্য পুলিশ বসুরহাট পৌরসভার চারিদিকে সিসি ক্যামেরা বসানো হয়েছে।
অপরদিকে বৃস্পতিবার বিকেল ৪টায় নোয়াখালী জেলা আ.লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বাদলকে নোয়াখালী প্রেসক্লাবের সামনে থেকে গ্রেফতার করেছে সাদা পোশাকদারী গোয়েন্দা পুলিশ।
এব্যাপারে নোয়াখালী পুলিশ সুপার আলমগীর এ প্রতিবেদককে বলেন, মালমার ক্রটি ও বিচ্যুতি হওয়ায় অভিযোগটি এজাহার হিসেবে গ্রহণ করা হয়নি। মামলার ক্রটি, বিচ্যুতি সঠিক হলে মামলাটি এজাহার হিসেবে গ্রহণ করা হবে।
বসুরহাট পৌরসভার মেয়র আবদুল কাদের মির্জা গুলিবিদ্ধ হওয়া আহত নেতাকর্মীদের সাথে দেখা করে এসে পৌরসভা কার্যালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, আমার দলের অনেকেই গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। তাদের মধ্যে অনেকেই বাড়িতে আছেন, তাদেরকে দেখার জন্য বাড়িতে গিয়েছিলাম। তিনি বলেন, এখানে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি মোটামুটি ভালো। আমি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ধন্যবাদ জানাই। আমি চাই কোম্পানীগঞ্জ থেকে অস্ত্রের রাজনীতি বন্ধ হোক। সেজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক। এখানে মুজাক্কির ও আলা উদ্দিনকে হত্যা করা হয়েছে। আমার ও আমার কর্মীদের ওপর যে নির্বিচারে গুলি চালানো হয়েছে আমি চাই, সরকার সুষ্ঠু তদন্ত করুক। আমরা যাতে ন্যায় বিচার পাই, সেটা নিশ্চিত করুক। সুষ্ঠু তদন্তে যদি আমরা দোষী প্রমাণিত হই তাহলে সরকার আমাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করুক।
অপরদিকে বসুরহাট বাজারে আতঙ্ক সৃষ্টি হওয়ায় ব্যবসায়ী ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। এ বিষেয়ে ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি ফরহাদ হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক নাজিম উদ্দিন নিজাম জানান, আবদুল কাদের মির্জার কিছু হলে বসুরহাট বাজার একদিনে সন্ত্রাসীরা দোকানপাট লুট করে নিয়ে যাবে। তারা আও জানান, বসুরহাট বাজারে সন্ত্রাসী কার্যকলাপের কারণে অধিকাংশ ব্যবসায়ীরা পথে বসে গেছে। তাদের পরিবার পরিজন নিয়ে চলতে কষ্ট হচ্ছে।
ওদিকে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বাদলের জামিনের আবেদন না মঞ্জুর করে জেল হাজতে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন নোয়াখালী বিজ্ঞ আদালত।
শুক্রবার দুপুরে নোয়াখালীর চীফ জুড়িশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতের বিচারক সোয়েব উদ্দিন খাঁন ১টি মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে জেল হাজতে প্রেরণ করার আদেশ দেয়। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে ৩টি মামলায় জামিনের আবেদন নাকচ হয়।
এব্যাপারে নোয়াখালী ডিবির (ওসি) হোসাইন আহম্মদ জানান, ২টি নাশকতাসহ মোট ৪টি মামলায় মিজানুর রহমানকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে।
গত মঙ্গলবার রাতে বাদল গ্রুপের গ্রেফতারকৃত বাদল গ্রুপের গ্রেফতারকৃত ২৮জনকে পুলিশি রিমান্ডের আবেদন করা হয়েছে। এর সত্যতা নিশ্চিত করেন কোম্পানীগঞ্জ থানার ওসি মীর জাহেদুল হক রনি।
উল্লেখ্য বৃস্পতিবার বিকেল ৪টায় কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বাদলকে নোয়াখালী প্রেসক্লাবের সামনে থেকে গ্রেফতার করেছে সাদা পোশাকদারী গোয়েন্দা পুলিশ।