শেরপুরে মাদক ও অবহেলায় মৃত্যুসহ পৃথক তিনটি মামলায় বিভিন্ন মেয়াদে ৩ ব্যক্তির সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।
মঙ্গলবার(১৬ মার্চ) দুপুরে শেরপুর জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ আল মামুন এই রায় দেন। সাজাপ্রাপ্তরা হলেন জামালপুর জেলার মেলান্দহ উপজেলার রায়ের বাকাই চরপাড়া গ্রামের মৃত গফুর মন্ডলের ছেলে মিনহাজ উদ্দিন (৩৫), শেরপুর সদর উপজেলার কসবা মোল্লাপাড়া এলাকার সামছুল হকের ছেলে আবদুল মোতালেব (৩৯) ও নালিতাবাড়ী উপজেলার ধোপাকুড়া গ্রামের আবদুল মজিদের ছেলে হাফিজুর ওরফে হাবিজুল (৩৬)।
জেলা দায়রা জজ আদালতের পাবলিকপ্রসিকিউটর(পিপি) অ্যাডভোকেট চন্দন কুমার পাল এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
জানা যায়, ২০১৬ সালের ১৫ জুন বিকেল সাড়ে ৪টায় শেরপুর সদর উপজেলার মুন্সীরচর বাজার এলাকা থেকে ৮শ পিস ইয়াবাসহ মাদক ব্যবসায়ী মিনহাজ উদ্দিনকে হাতেনাতে গ্রেফতার করে র্যাব। এই ঘটনায় র্যাব-১৪’র ডিএডি সাহেদুল ইসলাম বাদী হয়ে সদর থানায় একটি মামলা দায়ের করলে পরবর্তীতে তদন্ত শেষে একই বছরের ৩১ আগস্ট একমাত্র আসামির বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন শেরপুর সদর থানার এসআই কায়ছার আলী। বিচারিক পর্যায়ে বাদী ও তদন্ত কর্মকর্তাসহ ৮ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে মিনহাজকে দোষী সাব্যস্ত করে ৭ বছর সশ্রম কারাদণ্ড ও ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড, অনাদায়ে আরও এক মাসের কারাদণ্ডের আদেশ দেন আদালত।
২০১৮ সালের ২৮ এপ্রিল সদর থানা পুলিশ অভিযান চালিয়ে শেরপুর শহরের কসবা মোল্লাপাড়া এলাকাস্থ নিজ বসতবাড়ি থেকে ৬ গ্রাম হেরোইন ও ৬০ পিস ইয়াবাসহ হাতেনাতে গ্রেফতার করেন আবদুল মোতালেবকে। পরবর্তীতে তদন্ত শেষে একই বছরের ৩০ মে তার বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল হলে বিচারিক পর্যায়ে, বাদী ও তদন্ত কর্মকর্তাসহ ৫ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়। অতঃপর মোতালেবকে দোষী সাব্যস্ত করে মাদক আইনের পৃথক দু’টি ধারায় ৫ বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড ও ১০ হাজার টাকা করে অর্থদণ্ড, অনাদায়ে আরও ১ মাসের কারাদণ্ডের আদেশ দেন আদালত। তবে উভয় সাজা একইসাথে কার্যকর হবে বলেও আদেশে উল্লেখ করা হয়।
এছাড়া ২০১৫ সালের ৩১ মার্চ রাত ১০টার দিকে নালিতাবাড়ী উপজেলার পোড়াগাও এলাকাস্থ রাস্তায় ব্যাটারিচালিত ইজিবাইকসহ পার্শ্ববর্তী ছাইচাকুড়া গ্রামের চালক উমর আলীকে একা পেয়ে ওই গাড়ি থামিয়ে গাড়িতে উঠতে চান স্থানীয় ধোপাকুড়া গ্রামের আবদুল মজিদের ছেলে হাফিজুরসহ কয়েকজন। সে ভয়ে তাদের গাড়িতে উঠাতে না চাইলে উভয় পক্ষের মধ্যে তর্কাতর্কি ও হাতাহাতি হওয়ায় অসুস্থ হয়ে পড়েন চালক উমর আলী। পরে তাকে গুরুতর অবস্থায় নালিতাবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে রাত ১১ টার দিকে তাকে মৃত ঘোষণা করেন কর্তব্যরত চিকিৎসক। ওই ঘটনায় তার ছেলে আশরাফুল বাদী হয়ে হাফিজুরসহ ৩ জনের বিরুদ্ধে নালিতাবাড়ী থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। পরবর্তীতে তদন্ত শেষে একই বছরের ৪ সেপ্টেম্বর একমাত্র হাফিজুরের বিরুদ্ধে একই ধারায় আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন নালিতাবাড়ী থানার তৎকালীন এসআই মোহাম্মদ রুহুল আমিন তালুকদার। বিচারিক পর্যায়ে বাদী, চিকিৎসক ও তদন্ত কর্মকর্তাসহ ১৭ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়। এতে ঘটনাটি পরিকল্পিত হত্যা নয় এবং তা অবহেলাজনিত মৃত্যু বলে আদালতের কাছে প্রতীয়মান হওয়ায় তাকে দণ্ডবিধির ৩০২ ধারার পরিবর্তে ৩০৪ ধারায় দোষী সাব্যস্ত করে ৭ বছর সশ্রম কারাদণ্ড ও ৫ হাজার টাকা অর্থদণ্ড, অনাদায়ে আরও ১ মাসের কারাদণ্ডের আদেশ দেওয়া হয়।