মানুষ মানুষের জন্য, জীবন জীবনের জন্য। মানুষ বাঁচে তার কর্মের মধ্যে, বয়সে নয়। আসলেই প্রবাদটি নিরন্তর সত্য। এখনও এমন উদর সহনুভূতি মনোভাবের মানুষ রয়েছে, যা ভাবাই অকল্পোনীয়। মানুষ এখনও মানুষকে নিয়ে এমনটায় ভাবে, যার বাস্তব চিত্র ধরা পড়েছে যশোরের মণিরামপুর পৌর শহরের মক্কা মদিনা ভ্যারাইটিস ষ্টোরে।
মঙ্গলবার দুপুরে এ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানটির সামনে খাদ্য সামগ্রী ভর্তি মনোগ্রামযুক্ত একটি ফ্রিজ দৃষ্টিগোচর হয়। যাতে লেখা রয়েছে “শান্তির ছোঁয়া, সাধারন সেবা গ্রহন কেন্দ্র। এই ফ্রিজ শুধুমাত্র অসহায়, দরিদ্র ও ক্ষুধার্ত পথচারীদের জন্য। আপনি যদি ক্ষুধার্ত হন, আল্লাহর নামে কিছু খেয়ে যান। এ ছাড়া আরও লেখা রয়েছে ওই ফ্রিজের মনোগ্রামে- অসহায়ের মুখে ফুঁটবে হাঁসি, যদি মানবতার ডাকে এগিয়ে আসি।”
প্রতিষ্ঠানের সত্ত্বাধিকারী আলহাজ¦ আলী রেজা জানান, সপ্তাহের প্রতি শনিবার কমপক্ষে ৬০ জন পথচারী গরীব, অসহায়, দরিদ্র, ক্ষুধার্ত এবং ভিক্ষুকদের খাবার জন্য ডিম-খেঁচুড়ির প্যাকেট বিতরণ করা হয়। আর মঙ্গলবার অনুরুপভাবে দরিদ্র-ভিক্ষুকদের মাঝে দুইদিনের পরিমাণ মতো চাউল, আটা, পেঁয়াজ, অয়োডিন লবণ, ডালসহ বিভিন্ন শুকনো খাদ্য সামগ্রী সরবারাহ করা হয়। এ ছাড়া ওই সকল পথচারীদের জন্য প্রতিদিন ফ্রিজ থেকে কলা, কেক, খাবার স্যালাইন, আর্সেনিকমুক্ত পানি, ও বিভিন্ন ধরনের ফল খেতে দেওয়া হয়।
তিনি আরও বলেন, দীর্ঘদিন ধরে অনেক ভাবেই চেষ্টা করেছি গরীব, অসহায়, দরিদ্র, ক্ষুধার্ত ও ভিক্ষুকদের সেবায় নিজেকে আত্মনিয়োজিত করবার জন্য। সপ্তাহে দুই দিন শনিবার এবং মঙ্গলবার মণিরামপুরের বাজার (হাট) হওয়ার সুবাদে নিজের ব্যবসা দেখাশোনার পাশাপাশি অসহায়দের মুখে হাঁসি ফুটাতে খাদ্য এবং খাবর সামগ্রী বিতরণের জন্য এ দিন দ্ইুটি বেছে নিয়েছি। আগামীর দিনগুলো এভাবেই মানুষের কল্যাণে কাজ করে যাওয়ার ইচ্ছে পোষণ করেছি।
মঙ্গলবার ঘড়ির কাটায় যখন দুপুর ১টা বেজে ১৩ মিনিট, কথা হয় সাহায্য নিতে আসা (ভিক্ষুক) ষাটোর্ধ্ব আছিরন বেগমের সাথে। তিনি বলেন, আমি আজ প্রায় ১০ বছর যাবত অসুস্থ হয়ে খুব কষ্টের মধ্যে বেঁচে আছি। এলাকায় তেমন কারোর সহযোগীতা না পেয়ে, আজ মানুষের দ্বারে দ্বারে গিয়ে সাহায্যের পথ বেছে নিয়েছি। মণিরামপুর বাজারে এই দোকান মালিকের রান্না করা খাবার এবং বিভিন্ন খাদ্য সামগ্রী বিতরণ আমার জীবনে এই প্রথম দেখলাম। আমি এটা পেয়ে খুবই খুশি। এমন মনোভাবের মানুষ প্রতিটি ঘরে জন্ম নিলে কোন বাবা-মা না খেয়ে থাকতোনা। শেষ বয়সে কাউকে রাস্তায় এবং মানুষের দ্বারে সাহায্যের (ভিক্ষা) হাত পাততে হতোনা।
এ দোকানে অবস্থান করার ২০ মিনিটের মধ্যে দেখা মেলে ৫৫ বছরের ময়না, ৬৪ বছরের আনছার আলী, ৬৩ বছরের হাফিজুর, ৬৫ বছরের ছলে, ৩৫ বছরের নাছরিন বেগম ও ৫০ বছরের আনোয়ারা বেগমসহ আরো অনেকের সাথে। তারা প্রত্যেকে এ দোকানের প্রতি দিনকার খাবার ও খাদ্য সামগ্রী বিতরণের প্রতি সন্তোষ প্রকাশ করেন।
মণিরামপুর বণিক সমিতির সাধারন সম্পাদক আলহাজ¦ শফিকুল ইসলাম শফি জানান, মক্কা মদিনা ভ্যারাইটিস ষ্টোরের সত্ত্বাধিকারী আলী রেজার এ মহতি উদ্যোগ এবং মানবেতর সেবায় নিজেকে বিলিয়ে দেয়ার বিরল ঘটনা নিসন্দেহ প্রশংসনীয়। তিনি আরও বলেন অসহায়, ক্ষুধার্ত-ভিক্ষুদের সেবায় বাজারের অন্যান্য ব্যবসায়ীদেরও এমন সহানুভূতি উদ্যোগী হয়ে আরো এগিয়ে আসা দরকার।