আজ অগ্নিঝরা মার্চ মাসের সতেরোতম দিবস। ১৯৭১-এর রক্তঝরা মার্চের ১৭ তারিখ ছিল বাংলার অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৫২তম জন্মবার্ষিকী। পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়া হিয়া খানের সঙ্গে আলোচনা শেষে দুপুরে ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাসভবনে বিদেশি সাংবাদিকদের সঙ্গে দেশের পরিস্থিতি নিয়ে ঘরোয়া আলোচনাকালে একজন সাংবাদিক বঙ্গবন্ধুকে প্রশ্ন করেন, ৫২তম জন্মদিনে আপনার সবচাইতে বড় ও পবিত্র কামনা কী? উত্তরে বঞ্চিত বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা স্বভাবসিদ্ধ কণ্ঠে বলেছিলেন, ‘জনগণের সার্বিক মুক্তি।’ এরপর সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে তাকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জ্ঞাপনকালে তিনি ব্যথাভারাতুর কণ্ঠে বেদনার্ত স্বরে বলেছিলেন, ‘আমি জন্মদিন পালন করি না, আমার জন্মদিনে মোমের বাতি জ্বালি না, কেকও কাটি না। এ দেশে মানুষের নিরাপত্তা নাই। এদেশের প্রতিটি মানুষগুলো না খেয়ে মরছে। আপনারা আমাদের জনগণের অবস্থা জানেন। অন্যের খেয়ালে যে কোনো মুহূর্তে তাদের মৃত্যু হতে পারে। আমি জনগণেরই একজন, আমার জন্মদিন-ই কী, আর মৃত্যুদিন-ই কী? আমার জীবন ও মৃত্যু দু’টোই আমার জনগণের জন্য।’ কত বিশাল হৃদয়ের মহৎ মনের অধিকারী মানুষ ছিলেন তিনি। নিজের সবকিছুই তিনি জনগণের জন্য উৎসর্গ করেছিলেন।
১৯৭১ সালে এই দিনে ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত সমাজের সর্বস্তরের মানুষ মিছিল করে শত শত মুজিব ভক্ত এবং শিশু-কিশোর ধানমন্ডির ৩২ নম্বর রোডের বাসভবনে গিয়ে তাদের প্রাণপ্রিয় নেতা বঙ্গবন্ধুকে ফুলের তোড়া দিয়ে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানায়। এই শুভেচ্ছা ও ভালবাসার জবাবে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘যে জাতির ভাষা, সংস্কৃতি ও স্বাধীনতা আন্দোলনের জন্য জীবনের বেশির ভাগ সময় জেলখানায় কাটিয়ে দিয়েছি, সেই পরাধীন দেশে আমার জন্ম দিনই বা কী আর মৃত্যু দিনই বা কী। জন্মদিন উদযাপনসহ সবকিছুই সার্থক হবে সেদিন, যেদিন স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করতে পারব। সেদিন আমাদের ত্যাগ, জীবন দান, আন্দোলন সংগ্রাম- সবকিছুই সার্থক হবে।’
প্রেসিডেন্টের সঙ্গে আজকের বৈঠক প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা বলেন, আলোচনা চলবে। বৈঠকে তার চার দফা পূর্বশর্ত নিয়ে আলোচনা হয়েছে কিনা জানতে চাওয়া হলে আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ মুজিবুর রহমান বলেন, আমি বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করছি। আমি যখন আলোচনা করি অবশ্যই আমার দাবির কথাও বলি। আলোচনা ফলপ্রসূ হচ্ছে কিনা প্রশ্নের জবাবে বঙ্গবন্ধু বলেন, আলোচনা ফলপ্রসূ হচ্ছে, না নিরর্থক হচ্ছে জানি না।
একাত্তরের ওই দিন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানি সামরিক কর্তৃপক্ষের ঘোষিত তদন্ত কমিশন প্রত্যাখ্যান করে বলেন- ‘বাঙালি জনগণের পক্ষ্য থেকে আমি যে দাবি জানিয়েছি, পাকিস্তানের ঘোষিত তদন্ত কমিশন যে তা পূরণ করতে পারবে না কমিশনের প্রকৃতি দেখেই বুঝা যায়।’
বঙ্গবন্ধু আরো বলেন- সামরিক আদেশ বলে এর গঠন এবং সামরিক কর্তৃপক্ষের কাছে রিপোর্ট পেশের ব্যবস্থা দুটোই অত্যন্ত আপত্তিকর।
একাত্তরের এদিনে ‘বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ’ এর এক বিবৃতিতে বাংলাদেশ স্বাধীনতা সংগ্রামে বিশ্বের সকল জনগণের সমর্থন আশা করা হয়। অন্যদিকে পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি) তৎকালীন প্রধান জুলফিকার আলী ভট্টো করাচী থেকে ঢাকা আগমনের তার অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করে বলেন- প্রেসিডেন্টের ১৬ই মার্চের অনুরোধক্রমে তিনি যদি ঢাকা আসেন তবে তাতে বিশেষ কোনো ফলোদয় হবে না। মরহুম শেরে বাংলার পতœী বেগম ফজলুল হক এক বিবৃতিতে কালবিলম্ব না করে শেখ মুজিবুর রহমানের ৪দফা দাবি মেনে নিয়ে শুধু গণতন্ত্রের দিশারী নয়, প্রিয় পাকিস্তানের ত্রাণকর্তারূপে সুনাম করার জন্য পাকিস্তানের প্রেসিডেন্টে জেনারেল ইয়াহিয়া খানের প্রতি আহ্বান জানান।
একাত্তরের অসহযোগ আন্দোলনের ১৭ মার্চ ছিলো বঙ্গবন্ধু ঘোষিত বাংলার অসহযোগ আন্দোলনের ষষ্ঠদশ দিবস। এই দিন সকাল ১০টায় ঢাকায় প্রেসিডেন্ট ভবনে পাকিস্তানি জেনারেল ইয়াহিয়া খানের সঙ্গে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দ্বিতীয় দফা আলোচনা করেন। কড়া সামরিক প্রহরার মধ্যে প্রেসিডেন্ট ভবনে এ বৈঠক হয়। এই রুদ্ধদ্বার বৈঠক প্রায় এক ঘণ্টা স্থায়ী হয়।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন, আওয়মী লীগ নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, খোন্দকার মোশতাক আহমদ, তাজ উদ্দীন আহমদ, তৎকালনি ক্যাপ্টেন মনসুর আলীসহ বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ আরো ৬জন।
অপরদিকে সামরিক উপদেষ্টারা ইয়াহিয়া খানের সঙ্গে ছিলেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আলোচনার একপর্যায়ে প্রেসিডেন্ট ভবন থেকে বেরিয়ে অপেক্ষমাণ সাংবাদিকদের বলেন- ‘আলোচনা শেষ হয়নি। আলোচনা আরো হবে। প্রেসিডেন্ট আমাদের দাবিগুলো বিশ্লেষণ করে দেখার জন্য আমাদের কাছে সময় চেয়েছেন। আমি তাকে সময় দিয়েছি। তারা যত খুশি বিচার বিশ্লেষণ করে দেখুক। আমাদের আর একচুলও নড়ার ক্ষমতা নেই। আমার ৬দফা দাবি তাদের মানতে হবে। ৬দফা এখন আমি, বা আওয়ামী লীগের নয়।’
বৈঠক শেষে বঙ্গবন্ধুর গাড়ি বাসভবনের দিকে যাওয়ার সময় রাস্তার দু'পাশে অপেক্ষমাণ জনতা ও পথচারীরা 'জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু' ধ্বনি দিতে থাকেন। সাংবাদিকরাও বঙ্গবন্ধুকে অনুসরণ করে তার বাসভবনে গিয়ে পৌঁছান। বাসভবনে পৌঁছানোর পর দেশি-বিদেশি সাংবাদিকদের অনুরোধে বঙ্গবন্ধু তাদের সঙ্গে এক ঘরোয়া আলোচনায় মিলিত হন।
বঙ্গবন্ধু বলেন, আমি জনগণেরই একজন। আমার জন্মদিনই কি, আর মৃত্যুদিনই কি! আামর জনগণের জন্যই আমার জীবন ও মৃত্যু। আপনারা জনগণের অবস্থা জানেন। অন্যের খেয়ালে যে কোন মুহূর্তে তাদের মৃত্যু হতে পারে। প্রেসিডেন্টের সঙ্গে আজকের বৈঠক প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা বলেন, আলোচনা চলবে।
বৈঠকে তার চার দফা পূর্বশর্ত নিয়ে আলোচনা হয়েছে কিনা জানতে চাওয়া হলে আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ মুজিবুর রহমান বলেন, আমি বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করছি। আমি যখন আলোচনা করি অবশ্যই আমার দাবির কথাও বলি। আলোচনা ফলপ্রসূ হচ্ছে কিনা প্রশ্নের জবাবে বঙ্গবন্ধু বলেন, আলোচনা ফলপ্রসূ হচ্ছে, না নিরর্থক হচ্ছে জানি না।
বৈঠক শেষে দেশি-বিদেশি সাংবাদিকদের বঙ্গবন্ধু বলেন, আলোচনা এখনও শেষ হয়নি। তবে আলোচনার পরবর্তী সময়ও ঠিক হয়নি। আলোচনা চলছে। লক্ষ্য অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলনও চলবে। এর বেশি আর কিছু আমার বলার নেই। সাংবাদিকদের সঙ্গে আলোচনা শেষে বঙ্গবন্ধু সরাসরি তার বাসভবনে ফিরে যান।
বঙ্গবন্ধু এদিন পাকিস্তানিদের হুশিয়ারী দিয়ে বলেন- ‘আমার দাবিকৃত ৬দফা এদেশের জনগণেরই সম্পত্তি।’ অপরদিকে শেখ মুজিবুর রহমান ওই আলোচনায় ইয়াহিয়ার সঙ্গে মিলিত হওয়া এবং দু’পক্ষের উপদেষ্টা নেতৃবৃন্দের বৈঠকের ফলে আলোচনারত ছাত্র-জনতার মখোসঙ্গত কারণে বিভ্রান্তিও সৃষ্টি হয়েছিলো।
এসময় বিভ্রান্তি পরিস্থিতিতে সুষ্পষ্ট বক্তব্য রেখেছিলেন মজলুম জননেতা মাওলানা আবদুল খান ভাসানী। তিনি তার বক্তব্যে উল্লেখ করেন- ইয়াহিয়া খান ও শেখ মুজিবের মধ্যে আপস বা সমাঝোতাতার কোনো প্রশ্নই উঠতে পারে না। কোনো সমঝোতা হলে জনগণ তা মেনে নেবে না। আগামী ২৫শে মার্চের মধ্যে বাংলাদেশের ‘স্বাধীনতা’ স্বীকার করে নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে মাওলানা ভাসানী বলেছিলেন- ‘ইয়াহিয়া এখন যা করতে পারেন তাহলো অন্তর্বতীকালীন তত্ত্ববধায়ক সরকার গঠন করা। যার কাজ হবে দু’অংশের সম্পদ ও দায়দেনা হিসাব করা এবং জন সংখ্যার ভিত্তিতে দু’অংশের মধ্যে তা বন্টন করা।[’
এদিনের আলোচনা সম্পর্কে তখন সাংবাদিকদের শেখ মুজিব তেমন কিছু না বললেও তার আইন ও সংবিধান বিষয়ক উপদেষ্টা ড. কামাল হোসেন (বর্তমান গণফোরাম সভাপতি) পরবর্তীকালে জানিয়েছেন-১৭ই মার্চের বৈঠকেও শেখ মুজিব অবিলম্বে সামরিক আইন প্রত্যাহার ও সংখ্যাগরিষ্ঠ দল আওয়ামী লীগের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের দাবি জানান।
অপর দিকে পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ সংসদীয় দলের নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুুজিবের স্বাধিকারের প্রস্তাব মেনে নিতে অস্বীকার করেন ইয়াহিয়া। ফলে যা আশঙ্কা করা হয়েছিল শেষ পর্যন্ত তা-ই হল। দুদিনের মুজিব-ইয়াহিয়া আলোচনা ব্যর্থ হল। প্রেসিডেন্ট জেনারেল ইয়াহিয়া খানের সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর আলোচনা ব্যর্থ হওয়ার খবর দ্রুত সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। ক্ষোভ ও প্রতিবাদে ফেটে পড়ে দেশের সব শ্রেণী-পেশার মানুষ। এ দ্বিপক্ষীয় আলোচনার মূূল বিষয়বস্তু সম্পর্কে বঙ্গবন্ধুর আইন ও সংবিধান উপদেষ্টা ড. কামাল হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, বঙ্গবন্ধু অবিলম্বে সামরিক আইন প্রত্যাহার করে সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের জন্য জোর দাবি জানিয়েছেন। কী প্রক্রিয়ায় ক্ষমতা হস্তান্তর করা যায় এবং এর আইনি সমাধান কী- সে বিষয়ে দুপক্ষের আইন উপদেষ্টাদের একটি বৈঠকের ব্যাপারেও দুই নেতা সম্মত হয়েছেন। বঙ্গবন্ধু ও ইয়াহিয়ার সম্মতির পরিপ্রেক্ষিতে ১৭ই মার্চ দিনে দুপক্ষের আইন বিশেষজ্ঞদের এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের পক্ষে আওয়ামী লীগের প্রাদেশিক কমিটির সহসভাপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, দলের সাধারণ সম্পাদক তাজউদ্দীন আহমদ ও ড. কামাল হোসেন এবং প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার পক্ষে তার আইন উপদেষ্টা বিচারপতি কর্নেলিয়াস, জেনারেল পীরজাদা ও কর্নেল হাসান অংশ নেন। এই বৈঠকে দুই পাকিস্তানের জন্য পৃথকভাবে দুটি সংবিধান রচনা এবং সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের আইনি প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা হয়। এ বৈঠক সম্পর্কে শহরে নানা গুজব ছড়িয়ে পড়ে। গুজব ছড়িয়ে পড়ে যে শেখ মুুজিব ক্ষমতার লোভে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার সঙ্গে আপসরফা করে ক্ষমতা ভাগাভাগি করতে যাচ্ছেন।
১৭ মার্চ সকাল থেকে বঙ্গবন্ধুর ধানমন্ডির ৩২ নম্বর ভবনের সামনে হাজার হাজার ছাত্র-জনতা সমবেত হতে থাকে। সমবেত জনতার মধ্য থেকে মুহুর্মুহু গান ওঠে- ‘আপস না, সংগ্রাম, সংগ্রাম সংগ্রাম, তোমার আমার ঠিকানা- পদ্মা মেঘনা যমুনা, তোমার নেতা, আমার নেতা- শেখ মুজিব, শেখ মুজিব, জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ ইত্যাদি। এদিকে স্বাধীন বাংলা কেন্দ্রীয় ছাত্রসংগ্রাম পরিষদের নেতারা বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে সার্বিক সহায়তা দেয়ার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, গণচীন, ভারতসহ বিশ্ববাসীর প্রতি আহ্বান জানান। নেতারা এক দফার আন্দোলনকে সারা দেশে ছড়িয়ে দেয়ার জন্য সব জেলা ও থানা কমিটির প্রতি আহ্বান জানিয়ে সবাইকে যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দেন। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বলা হয়, প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান যদি সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর না করে, তবে শুরু হবে এক দফার সংগ্রাম। ১৭ মার্চ মুজিব-ইয়াহিয়া আলোচনা শেষে মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী এক বিবৃতিতে বলেন, বাংলার মানুষ কোনো আপোশ বা সমঝোতা মেনে নেবে না। তিনি বলেন, আগামী ২৫ মার্চের মধ্যে স্বাধিকারের দাবি মেনে না নিলে এক দফার আন্দোলনের মাধ্যমে স্বাধীনতা আদায় করা হবে। এ দিন ঢাকার রাজপথে ছাত্র-জনতার মিছিলের ঢল নামে। তারা মিছিলে মিছিলে রাজপথ মুখরিত করে স্বাধীনতা আন্দোলনকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার শপথ গ্রহণ করে। বায়তুল মোকাররমে অনুষ্ঠিত ছাত্র ইউনিয়নের সমাবেশ থেকে পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর জেনারেলদের ঢাকা আগমনে গভীর উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা প্রকাশ করে জনগণকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানানো হয়। বিকালে নগরীতে স্বাধীনতাকামী আন্দোলনরত কয়েকটি ছাত্র গ্র“পের কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত হয়। এসব কুচকাওয়াজে বিপুলসংখ্যক ছাত্রীও অংশ নেয়। কুচকাওয়াজে ডামি রাইফেলও ব্যবহার করা হয়। অন্যদিকে দেশের সেনাছাউনিগুলোতে বাঙালি নেতা কর্মকর্তাদের মধ্যে যোগাযোগ অব্যাহত থাকে। চট্টগ্রামে ক্যাপ্টেন রফিকের (পরবর্তীকালে মেজর, বীরোত্তম ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী) নেতৃত্বে বাঙালি সেনা কর্মকর্তারা আওয়ামী লীগ নেতা আতাউর রহমান কায়সারকে নিয়ে গোপনে তার বাসভবনে পরবর্তী করণীয় সম্পর্কে এক সভায় মিলিত হন। অতি গোপনে যোগাযোগ রক্ষা করা হয় ঢাকার সঙ্গেও। ক্যাপ্টেন রফিকের নেতৃত্বে চট্টগ্রামে প্রতিরোধ ব্যূহ গড়ে তোলার প্রস্তুতি সম্পর্কেও জানানো হয় আওয়ামী লীগ নেতাদের। চট্টগ্রামসহ সারা দেশের বাঙালি সেনা কর্মকর্তাদের গোপন সামরিক প্রস্তুতি সম্পর্কেও বঙ্গবন্ধুকে বিস্তারিতভাবে অবহিত করা হয়। (তথ্য সূত্র : সংবাদ/যুগান্তর-১৭.০৩.২০১৪, বাংলাদেশ প্রতিদিন-১৫.০৮.২০১৪)
এদিন অসংখ্য মিছিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাসভনের সামনে ভীড় জমায়। জনতা, ‘জয়বাংলা ধ্বনিতে আকাশ-বাতাস মুখরিত করে তুলেন। মিছিলকারীরা এই মহান নেতা বঙ্গবন্ধুকে তার জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানায়। শেখ মুজিব মিছিলকারীদের উদ্দেশ্যে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দেন। বঙ্গবন্ধুর কন্ঠে এদিন বারবার উচ্চারিত হতে থাকে শুধু স্বপ্নের রূপময় স্বাধীন একটি বাংলাদেশের কথা। বঙ্গবন্ধুর সেদিনের স্মৃতিচারণ করে পরবর্তীতে কবি ডি এল রায় লিখে ছিলেন, ‘এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি, সকল দেশের রানী সে যে আমার জন্মভূমি’।
লেখক: এম. কে. দোলন বিশ্বাস, দৈনিক সংবাদের সাবেক সহ-সম্পাদক।