আসন্ন রোজা ঘিরে দেশে নিত্যপণ্যের আমদানি বেড়েছে। রোজার মাসে দেশে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকার ভোগ্যপণ্য আমদানি হয়। ওসব পণ্যের মধ্যে রয়েছে ছোলা, তেল, দুধ, চিনি, খেজুর মটর, মশুরসহ বিভিন্ন ধরনের ডাল। অন্তত ২৫টি দেশ থেকে ওসব খাদ্যপণ্য আমদানি করা হয়। ব্যবসায়ীরা বেশ আগে থেকেই আমদানির প্রক্রিয়া শুরু করে। ফলে রোজা শুরুর মাস দুয়েক আগে থেকেই ওসব পণ্য দেশে আসতে থাকে। গতমাস থেকেই চট্টগ্রাম বন্দরে রোজার পণ্যের চালান আসা শুরু হয় । রমজানের এখনো একমাস বাকি। ফলে প্রস্তুতি যা হবার তার ৯০ ভাগ ইতিমধ্যে হয়ে গেছে। নিত্যপণ্যের পাইকারী ব্যবসায়ী এবং চট্টগ্রাম বন্দর সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, রোজার পণ্য নিয়ে দেশের ভোগ্যপণ্যের বৃহত্তম পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জ ইতিমধ্যে প্রস্তুত। আর চট্টগ্রাম বন্দরে আমদানির চালান বাড়ছে। তবে হাতে এখনো কিছু সময় হাতে থাকায় খালাসে ধীরগতি পরিলক্ষিত হচ্ছে। অনেক ব্যবসায়ীই বন্দর থেধকে পণ্য ডেলিভারি নিয়ে চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন স্থানের গুদামে সংরক্ষণ করছে। রমজানে নিত্যপণ্যের বাজারের ঊর্ধ্বমুখিতা নিয়ে ভোক্তা সাধারণ উদ্বিগ্ন থাকলেও ব্যবসায়ীদের মতে, এ নিয়ে উৎকণ্ঠার কোনো কারণ নেই। প্রতিবছরই এমন শঙ্কা থাকে। শেষ পর্যন্ত দেখা যায় বাজার পরিস্থিতি স্বাভাবিক। এবারও তা-ই হবে। পণ্য আসছে, আরো আসবে। কোন ধরনের সঙ্কট হবে না।
সূত্র জানায়, রমজান সামনে রেখে ইতিমধ্যে আমদানি হয়েছে বিপুল পরিমাণ ভোগ্যপণ্য। তার মধ্যে আছে ছোলা, মশুর, মটর ও খেজুর। প্রতিবছরই এমন হয়। কিন্তু যেভাবে চালান আসছে সে গতিতে আমদানিকারকরা পণ্য খালাস নিচ্ছে না। সেজন্য ইয়ার্ডে নির্দিষ্ট সময়ের বেশিদিন যেন পণ্য না রাখা হয় সেজন্য আমদানিকারকদের নানাভাবে তাগাদা দেয়া হচ্ছে। কারণ ইয়ার্ডে পণ্য বেশি জমে থাকলে বন্দরে স্বাভাবিক পণ্য ওঠানামা ব্যাহত হয়। তবে আমদানিকারকরা চায় রমজানে বাজার পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার স্বার্থে বন্দর কর্তৃপক্ষ যেন বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে। কারণ ব্যবসায়ীদের যতোটা সম্ভব দ্রুত পণ্য খালাসের চেষ্টা রয়েছে। আমদানিকারকদের মতে, রোজায় ভোগ্যপণ্যের সঙ্কট যেন না হয় সেজন্য আগেভাগেই পণ্য আমদানি করা হচ্ছে। কিন্তু রোজার আরো মাসখানেক বাকি। এখনো খুচরা বাজারে রোজার পণ্যের চাহিদা সেভাবে সৃষ্টি হয়নি। আমদানি পণ্যের গুণগত মান ঠিক রাখতে মানসম্পন্ন গুদামের অভাব রয়েছে। তাছাড়া বাইরে গুদামজাত করার ভাড়া বেশি, যার প্রভাব পড়তে পারে পণ্যের মূল্যের ওপর। বিভিন্ন দিক বিবেচনায় বন্দর অভ্যন্তরে পণ্য রাখা হচ্ছে। তবে তা অনির্দিষ্টকালের জন্য নিশ্চয় নয়। এখন থেকেই পণ্য ডেলিভারি শুরু হয়ে গেছে। বন্দর কর্তৃপক্ষ তথা সরকারের উচিত বিষয়টি যৌক্তিকভাবে বিবেচনা করা। তবে উৎকণ্ঠা থাকলেও শেষ পর্যন্ত পণ্যের সঙ্কট হবে না।
এদিকে রোজার পণ্যগুলোর মধ্যে চিনি ও তেল ওই দুটি পণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণ করে ৬টি প্রতিষ্ঠান। তারাই উৎপাদনকারী, আমদানিকারক এবং বাজারে সরবরাহকারী। ফলে ওই দুই পণ্যের ব্যাপারে কোন মন্তব্য করতে রাজি নন পাইকারী ব্যবসায়ীরা। তবে বেশ কিছুদিন ধরে দুধ, চিনি, তেল, আটা, চালসহ কিছু অত্যাবশকীয় নিত্যপণ্যের মূল্যের উর্ধগতি পরিলক্ষিত হচ্ছে। সেজন্য প্রয়োজন টিসিবির মাধ্যমে ন্যায্যমূল্যে পণ্য বিক্রির পাশাপাশি বাজারে কঠোর মনিটরিং জরুরি বলে অনেকে মত দিয়েছে।
অন্যদিকে পাইকারী ব্যবসায়ীরা জানান, বাজারে পণ্যের পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে। আমদানিকৃত সকল পণ্য চট্টগ্রামের মাঝিরঘাট, সদরঘাট, সাগরিকা, পাহাড়তলী এবং চট্টগ্রামের বাইরের গুদামগুলোতে রয়েছে। তবে ডিও’র মাধ্যমে খাতুনগঞ্জ থেকে বিক্রি হয়। রোজাকে সামনে রেখে চট্টগ্রামের এবং বাইরের ব্যবসায়ীরা ডিও কিনছে। খুচরা পর্যায়ের ব্যবসায়ীরা এখনো রোজার পণ্য না তুললেও পাইকারদের প্রস্তুতি প্রায় শতভাগই সম্পন্ন। ছোলা, মটর, মশুর, খেজুরসহ আরো কয়েকটি নিত্যপণ্যের কোন সঙ্কট এখনো পর্যন্ত নেই, রোজাতেও হবে না। তবে রোজার শুরুতেই একসঙ্গে বেশি পণ্য যদি ভোক্তারা ক্রয় করে তবে বাজারে সঙ্কট দেখা দেয়। যা মূল্যের ওপর প্রভাব ফেলে। ক্রেতাদের উচিত হবে আতঙ্কিত না হয়ে একসঙ্গে অধিক পরিমাণ পণ্য ক্রয় না করা।