নীলফামারী জেলার কিশোরগঞ্জ, সৈয়দপুর, ডোমার, ডিমলা, জলঢাকা ও সদর উপজেলায় একসময় কেরোসিন শিখা ছিল গ্রামীন ঘরে ঘরে। এটি ছিলো আলোর একমাত্র উৎস। কেরোসিনের দর্প অহমিকা নিয়ে কবিতাও লেখা হয়েছে কেরোসিন শিখা বলে মাটির প্রদীপে-ভাই বলে ডাকো যদি দেব গলা টিপে, হেনকালে আকাশেতে উঠিলে চাঁদা কেরোসিন শিখা বলে এসো মোর দাদা। সময়ের পরিক্রমায় আলো জ¦ালানোর বিবিধ উৎস বিবর্তনে ¤্রয়িমান হতে হতে এখন কেরোসিনের সেই দর্প চুর্ণ হয়ে গেছে। স্মরণাতীত কাল ধরে গৃহস্থালীতে আলোর উৎস হিসেবে চলে আসা কেরোসিন যুগের সমাপ্তি ঘটছে। যা একসময় সন্ধ্যা হলেই, অজপাড়া, গ্রাম-গঞ্জের ঘরে ঘরে স্কুল-কলেজ, মাদ্রাসা পড়-য়া ছাত্র-ছাত্রীদের দেখা যেত কুপি, হ্যাছাক, হারিকেনের (লন্ঠন) ভেতরে কেরোসিন ও সূতি কাপড়ে তৈরি ফিতা দিয়ে কৃত্রিমভাবে তৈরি করে আলো জ¦ালিয়ে লেখাপড়া করতে। এখন আর সে চিত্র দেখা যায় না মায়েদের সান্ধ্যকালীন সময়ে সেই কুপি, মাটির প্রদীপ, হারিকেনের আলোয় ঘর আলোকিত করতে কিংবা পরিবারের সকল কাজ পরিচালনা করতে।
এখন আর হাটে বাজারে, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে আলোকসজ্জাসহ রিকশা-ভ্যান ও বাইসাইকেলের নিচে হারিকেন বেঁধে পথ চলতে দেখা যায় না। দেখা মেলেনা আর হারিকেন, হ্যাছাক দিয়ে জেলেদের মাছ ধরতে। সব মিলিয়ে যুগ যুগ ধরে গৃহস্থালীতে আলোর উৎস হিসাবে চলে আসা কেরোসিনের যুগের সমাপ্তিতে ফুরিয়ে আসছে কেরোসিনেরও কদর। কেরোসিনের কুপি, হ্যাছাক, মশাল, মাটির প্রদীপ, হারিকেনের (লন্ঠন) ব্যবহার আর চোখে পড়ে না। গ্রামের ঘরে ঘরে এখন নিরবছিন্ন বৈদ্যুতিক ,চার্জার এবং সোলার বাতির আলোর ঝলকানি। সাম্প্রতিক সময়ে পরিবারের আলোর উৎস হিসেবে কেরোসিনের ব্যবহার বলতে গেলে বিলীন হতে চলছে। এ জেলার প্রায় শতভাগ পরিবার বৈদ্যুতিক বাতি ব্যবহার করছে। বর্তমান পেক্ষাপটে সরকারের অন্যতম একটি শ্লোগান হচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগ ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ। এটি শুধু স্লোগানের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয় এ জেলার সবখানে এখন দখল করেছে বৈদ্যুতিক এবং সোলার বাতির আলোর ঝলকানি। প্রাচীন বাংলার গ্রামীণ ঐতিহ্য হারিকেন (লন্ঠন)এখন শুধুই স্মৃতি। প্রবীণরা মনে করেন, হারিকেন যেভাবে হারিয়ে যাচ্ছে একসময় হয়ত হারিকেন দেখতে জাদুঘরে যেতে হবে। নতুন প্রজন্ম জানবেও না হারিকেন কি ও তার ইতিহাস।
জেলায় এ ধরনের ব্যবসায়ী আবদুল হাকিম,শামিম জানান, একসময় হারিকেন, হারিকেনের ফিতা, কাঁচের ছিমনি, কেরোসিন তেল, হ্যাছাকের মেন্ডেল বিক্রি-বাট্টা ছিল লক্ষণীয়। কিন্তু এখন আর কেউ কিনছে না। মরিচার অতল গহব্বরে এখন হারিকেনের স্থান। আধুনিকতার ছোঁয়ায় বৈজ্ঞানিক যুগে ঘরে ঘরে বিজলী বাতির আলোর ঝলকানিতে হারিকেন (কেরোসিন) যুগের সমাপ্তি ঘটছে। যা ফিরে আসবে না আর কোনদিন।