নোয়াখালীর কোম্পানগঞ্জের বসুরহাট পৌরসভার মেয়র আবদুল কাদের মির্জার কর্তৃক আয়োজিত বিএনপির স্থায়ী কমিটির অন্যতম সদস্য ও সাবেক উপরাষ্ট্রপতি ব্যারিষ্টার মওদুদ আহমদের মৃত্যুতে নাগরিক শোক সভা ও মিলাদ মাহফিল চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজির নির্দেশে স্থগিত করা হয়।
সরেজমিনের গিয়ে জানা যায়, বসুরহাট পৌরসভার মেয়র আবদুল কাদের মির্জার বসুরহাট পৌরসভা কার্যালয়ে হল রুমে বিকেল ৪টায় এ নাগরিক শোকসভা ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজনের পূর্ব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়। দুপুর ২টায় ফেইসবুক লাইভে এসে আবদুল কাদের মির্জা বলেন, এখন থেকে ১ঘন্টা আগে কোম্পানীগঞ্জ থানার ওসি আমাকে জানান, আপনার আয়োজিত নাগরিক শোকসভা ও মিলাদ মাহফিল ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে স্থগিত করা হলো।
এ বিষয়ে আমি চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি মোঃ আনোয়ার হোসেনকে আমাকে ফোন করে জানান, ব্যারিষ্টার মওদুদের মৃত্যুতে শোকসভা ও মিলাদ মাহফিল ও কোন কর্মসূচি পালন করা যাবে না, আপনি প্রয়োজনে নোয়াখালীতে এ কর্মসূচি পালন করুন। তাঁকে বললাম শনিবার আমি প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের ৮ম মৃত্যুবার্ষিকী পালন করেছি, তিনি বললেন, সে ব্যাপারে আমি কিছু জানিনা। আজকে জেনেছি তাই বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছি।
কাদের মির্জা বলেন, যেদেশ গুনি ব্যক্তিকে সম্মান করে, সে দেশে গুনি ব্যক্তির জন্ম হয়। আমি মনে করি ব্যারিষ্টার মওদুদ আহমদ একজন গুনি ব্যক্তি এবং আমাদের সম্পদ। তিনি ১৯৬৯সালে বঙ্গবন্ধুর আগরতলা ষড়যন্ত্রের মামলায় ড.কামাল হোসেনের সহযোগী আইনজীবী ছিলেন। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের সংবিধান রচয়িতা ড.কামাল হোসেনের সহযোগী হিসেবে বাংলাদেশের সংবিধান রচনা করেছেন। আইয়ুব খানের সাথে গোল টেবিল বৈঠকে বঙ্গবন্ধুর সাথে ছিলেন। তিনি একজন মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক।
মির্জা কাদের আরও বলেন, আমি একজন জনপ্রতিনিধি হিসেবে মনে করেছি মওদুদ আহমেদ একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা, আমাদের এ অঞ্চলের একজন কৃতী সন্তান, তার জন্য শোকসভা ও মিলাদ মাহফিল করার প্রয়োজন অনুভব করে আমি এ নাগরিক শোকসভা ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করেছি। কিন্তু প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞায় এ কর্মসূচি পন্ড হয়ে গেল। আমি ডিআইজিকে জানালাম তিনি বলেন, আপনি নোয়াখালী গিয়ে প্রোগ্রাম করুন, অথচ তিনি গতকাল (শনিবার) আমাকে এ প্রোগ্রাম করার অনুমতি দিয়েছেন।
কাদের মির্জা আরও বলেন, মওদুদ আহমদের লেখা বইয়ে তিনি উল্লেখ করেছেন, আমাদের স্বাধীনতার ইতিহাস ও জাতীয় ইতিহাসে অবিস্মরণী নেতৃত্ব বঙ্গবন্ধ শেখ মুজিবুর রহমান।
তিনি ওবায়দুল কাদেরকে উদ্দেশ্য করে বলেন, তিনি বলেছিলেন, তারা যদি অধম হয়, আমরা উত্তম হব না কেন। নেতাজী এ বক্তব্য কি মানুষের জন্য, নিজের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়, মনে রাখবেন অপমান ফেরত যায়।
তিনি বলেন, শুক্রবার বিকেলে সরকারী মুজিব কলেজ মাঠে ব্যারিষ্টার মওদুদ আহমদের জানাজার পূর্ব মুহূর্তে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান মোঃ শাহাব উদ্দিন বক্তব্য দেওয়ার সময় বাংলাদেশ সরকারের একজন গুরুত্বপূর্ণ উপদেষ্টা (ড.তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী) চেয়ারম্যানের কাছ থেকে মাইক কেড়ে নিল। আর এ অপবাদ পড়ল আমার ওপর। শতাধিক নেতা ঐ মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন, কেউ যদি বলতে পারেন আমি মাইক কেড়ে নিয়েছি তাহলে আমি হিজরত করব। সাহাব উদ্দিনকে যারা অপমান করেছে, একদিন সে অপমান তাদের কাছে ফেরত আসবে, অপেক্ষা করতে হবে।
কাদের মির্জার আরও বলেন, বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, আলোচনা সভা ও মেলার আয়োজন করা হয়েছিল। অপরাজনীতির হোতারা অস্ত্রশস্ত্র দিয়ে আক্রমণ করে সব কিছু তছনছ করে দিয়েছে। থানায় অভিযোগ করেও কোন বিচার পায়নি। আমার পৌরসভায় ২হাজার গুলি করেছে। আমাকে মারার জন্য ৫শত গুলি করেছে। পুলিশ এদের কাউকে এখনও গ্রেফতার করেনি। গতকাল রাতে (শনিবার) আমার কর্মী সবুজের বসুরহাট পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ডের বাড়িতে পুলিশ হানা দেয়। এ সময় সবুজকে না পেয়ে তার স্ত্রীর কাছে ৫ হাজার টাকা দাবী করেন, পরে সবুজের স্ত্রী ৫শত টাকা দেয় পুলিশকে। পরে পুলিশ বাকী টাকার হুমকি দিয়ে আসে না হলে সবুজের অসুবিধা হবে।
এসময় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে উপজেলা চরহাজারী ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের মাঈন উদ্দি বাবুকে ১লক্ষ টাকা এবং চরকাঁকড়া ২নং ওয়ার্ডের গোলাম ছারওয়ারকে ১লক্ষ টাকা ঘর তৈরী করার জন্য অনুদান প্রদান করেন। বর্তমানে বসুরহাট পৌরসভার মিলনায়তনে মওদুদ আহমদের মৃত্যুতে শোকসভাকে কেন্দ্র করে র্যাব-১১, ডিবি ও দাঙ্গা পুলিশ ঘিরে রেখেছে। পৌরসভা কার্যালয়ের লোকজনকে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না।