বছরে সারা দেশে ৫৭৫ টি ঘটনায় ৩০,৫০৫ জন ধর্মীয় সংখ্যালঘু নির্যাতনের শিকার হয়েছেন বলে দাবি করেছে বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোট। এর মধ্যে ১০৮ জন হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছেন, ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ৪২ জন। প্রতিমা ভাংচুর, বাড়িতে অগ্নি সংযোগ, জমি দখল, ধর্মান্তর, ডাকাতি ও দেশত্যাগে বাধ্যকরাসহ নানা ঘটনা ঘটে। সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতনের এসব তথ্য প্রতিদিনের সংবাদমাধ্যম থেকে সংগৃহিত।
বাংলাদেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর সরকার দলীয় নেতাকর্মীদের পাশাপাশি স্বাধীনতা বিরোধী-দুর্নীতিবাজ-জামায়াত- হেফাজত সহ অন্যান্য সংগঠনের নেতাকর্মী সমর্থক দ্বারা এবং প্রশাসনের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মদতে হামলা লুটপাটসহ ৫৭৫টি ঘটনা ঘটে। ৮৫৪৪ দশমিক ৫২ একর ভূমি জবর দখল হয়েছে। ১০৮ জনকে হত্যা করা হয়েছে। যা বিগত বছরের তুলনায় অনেক বেশি।
৫ শতাধিক পরিবারকে দেশ ত্যাগে বাধ্য করা হয়েছে। নিরাপত্তাহীনতায় ছিল ২২৬১টি পরিবার। ৮২টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা হয়েছে ও ৪২২টি পরিবারকে বসতবাড়ি থেকে উচ্ছেদ করা হয়েছে। নতুন করে ৩৬ জন হিন্দু মুক্তিযোদ্ধার গায়ে রাজাকার তকমা যুক্ত করেছে সরকার। মুক্তিযুদ্ধের সময় কোন হিন্দু রাজাকার ছিলো না। আর কেউ প্রমাণ করতে পারবে না।
সংখ্যালঘু নির্যাতনের ইতিহাস বলে- ২০০১ সালের নির্বাচন পরবর্তী সময়ে হিন্দুদের উপর ব্যাপক নির্যাতন হয়েছে। তৎকালীন ক্ষমতাশীন সরকার কোন বিচার করেনি। বিএনপি-জামায়াতে ইসলামের পাশাপাশি স্বাধীনতার ধ্বজাধারি বর্তমান আওয়ামী সরকার সেই ন্যাক্কারজনক ঘটনা বিশ্বব্যাপী প্রচার করে রাজনৈতিকভাবে সুবিধা লাভ করছে। হিন্দুদের উপর নির্যাতনকারী করো বিচার আজও হয়নি। আজ আমরা হতাশার মাঝে অবস্থান করছি। বিচার না হওয়ায় বার বার হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর স্ট্রিম রোলার চালিয়ে যাচ্ছে। এতে নিরবে প্রতিদিনই হিন্দুরা দেশ ত্যাগ করছে। ধারণা করা হচ্ছে- আগামী ২০ বছরের মধ্যে এদেশে হিন্দুর সংখ্যা শূন্য হয়ে যাবে। লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, প্রশাসনেও হিন্দু বিদ্বেষ চরম আকারে। প্রতিনিয়ত হিন্দু ধর্ম নিয়ে কটুক্তি করলেও আজ পর্যন্ত কটুক্তির অভিযোগে কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। উপরন্তু ফেসবুক হ্যাক করে মিথ্যা গুজব ছড়িয়ে শতাধিক হিন্দু যুবককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। যদিও ধর্ম নিরপেক্ষতার কথা বলে বর্তমান সরকার, কিন্তু তারা ক্ষমতায় থাকার জন্য সকল শ্রেণির পাঠ্যপুস্তক ইসলামীকরণ করছে। হিন্দু, খ্রিস্টান ও বৌদ্ধ শিক্ষার্থীদেরকে বাধ্যতমূলক ইসলাম ধর্ম পাঠ করতে বাধ্য করা হচ্ছে। হিন্দু মহাজোট পাঠ্যপুস্তকে অসাম্প্রদায়িক করার দাবি জানাচ্ছে। হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর সহিংসতা ও নির্যাতন নিরোধ কল্পে প্রতিটি স্তর থেকে দুর্নীতি নির্মূল করতে হবে। তা না করলে হয়তো আমাদেরকে সহ্য করতে হবে ভয়াবহ শাল্লা, রামু ঘটনার মত আরো শত শত ঘটনা। যা আমাদের কারোই কাম্য না।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে ক্ষমতায় আসার আর থাকার লোভিদের দৌড়াত্ম্যের দাপটে জেগে উঠছে ধর্মান্ধরা। যখন দেশে বন্ধুরাষ্ট্র ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আসার প্রস্তুতি চলছে, তখন দেশের শাল্লায় সংখ্যালঘু নির্যাতন চলছে, যা কারোই কাম্য নয়। আমাদের দেশের সুশীতল হাওরের দুর্গম এলাকা সুনামগঞ্জ জেলার শাল্লা উপজেলা। যেখানে পাকা রাস্তা নেই বললেই চলে। উপজেলার প্রতিটি গ্রামে যেতে হলে হাওর-বিলঝিল পাড়ি দিয়ে যেতে হয়। সে জন্য এ এলাকায় যাতায়াতের প্রথম পছন্দের তালিকায় রয়েছে মোটরবাইক। এ উপজেলার একশ ঘরের মধ্যে নব্বই ঘরই হিন্দু সম্প্রদায়ের। আর সেই তালিকায় রয়েছে উপজেলার হবিবপুর ইউনিয়নের নোয়াগাঁও গ্রাম। নোয়াগাঁও গ্রামে সেদিন কী এমন ঘটেছিল, দেশজুড়ে সে আলোচনা তুঙ্গে। এরই খোঁজ করতে বৃহস্পতিবার গ্রামটি ঘুরে করে যা পাওয়া যায় তা রীতিমতো অবাক করার মতো। এর আগে ১৫ মার্চ জেলার দিরাই উপজেলা হেফাজতে ইসলামের শানে রিসালাত সম্মেলনে আমন্ত্রিত হয়ে এসে বক্তব্য দেন দলটির কেন্দ্রীয় আমির জুনায়েদ বাবুনগরী, নায়েবে আমির নূরুল ইসলাম খান, জুনাইদ আল হাবীব ও দলটির যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হক।
সম্মেলনের পরে মাওলানা মামুনুল হককে নিয়ে হিন্দু অধ্যুষিত নয়াগাঁও গ্রামের গুপেন্দ্র দাশের ছেলে ঝুমন দাশ আপন নামের এক যুবক ফেসবুকে তাঁর একটি কমেন্ট শেয়ার করেন। সঙ্গে সঙ্গে তা ভাইরাল হয়ে ছড়িয়ে যায়। ফলে আশপাশের গ্রামের মামুনুল হকের অনুসারীরা জড়ো হয়ে মিছিল করেন। এই ঘটনার খবর পেয়ে শাল্লা থানা-পুলিশ পরিস্থিতি শান্ত রাখতে ঘটনাস্থলে গিয়ে অভিযুক্ত যুবককে গ্রেপ্তারের আশ্বাস প্রদান করে এবং পরে ১৬ মার্চ রাত ১১টায় এলাকাবাসীর সহযোগিতায় শাসকাইবাজার থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
পরিস্থিতি শান্ত থাকার পর হঠাৎ কেন এবং কী করে পরদিন সকাল ১৭ মার্চ হিন্দু অধ্যুষিত এই গ্রামে মামুনুল হকের অনুসারীদের সংঘবদ্ধ হামলা, বাড়িঘর ভাঙচুর, লুটপাট হামলা, তা নিয়ে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে! এর নেপথ্যে কি আরও কোনো ঘটনা রয়েছে। হামলার নেতৃত্ব বা ইন্ধনদাতা কারা কারা। প্রকাশ্যে মাইকিং করে হিন্দুদের বাড়িতে হামলার ঘটনার পেছনে আর কোনো ঘটনা লুকায়িত আছে কি না, এমন প্রশ্ন করেছেন অনেকেই। নোয়াগাঁও হিন্দুদের ঘরবাড়ি ভাঙচুরে যোগ দিয়েছিলেন নাচনী, চন্ডিপুর, সন্তোষপুর, ধনপুর, খাশিপুরসহ দিরাই শাল্লা উপজেলার কয়েক গ্রামের হাজারো মানুষ।
গণমাধ্যম বলছে- এই হামলার মূল নেতৃত্বে ছিলেন দিরাই উপজেলার নাচনী গ্রামের বর্তমান ইউপি সদস্য শহীদুল ইসলাম স্বাধীন ও একই গ্রামের ক্ষমতাধর আরেক ব্যক্তি পক্কন মিয়া। জানা যায়, নাচনী গ্রামের স্বাধীন স্থানীয় বরাম হাওরের কুচাখাই বিলের ইজারাদার। জলমহাল নিয়ে স্বাধীনের সঙ্গে কিছুদিন ধরে গ্রেপ্তার যুবক ঝুমন দাশসহ নোয়াগাঁও গ্রামে কিছু লোকের বিরোধ চলে আসছিল। জলমহালে অবৈধভাবে মৎস্য আহরণ ও জলমহালের পানি শুকানোর ফলে চাষাবাদে সেচের পানির সংকটের ব্যাপারে নোয়াগাঁও গ্রামের হরিপদ দাশ ও মুক্তিযোদ্ধা জগদীশ দন্দ্র দাস শাল্লা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর স্বাধীন মেম্বারের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন।
অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ৮ জানুয়ারি সরেজমিনে কুচাখাই বিলে গিয়ে অবৈধ সেলাই মেশিন সহ মাছ ধরার বিভিন্ন উপকরণ জব্দ করে জলমহালের পানি ছেড়ে দেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আল মোক্তাদির হোসেন। এ সময় বাঁধ কাটার কাজে নোয়াগাঁও গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা অকিল চন্দ্র দাসের ছেলে অমর চন্দ্র দাস ও পানি ছেড়ে দেওয়ার দৃশ্য ফেসবুকে প্রচার করেন একই গ্রামের ঝুমন দাশ। এই ঘটনায় স্বাধীন মেম্বার নোয়াগাঁও হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনকে হুমকিধমকি দিয়ে আসছিলো। ঝুমন দাশের এই ইস্যুকে কাজে লাগিয়ে হেফাজতের অনুসারী ও তার নিজস্ব লোকদের দিয়ে বুধবার নোয়াগাঁও গ্রামে ভাঙচুর ও লুটপাট করেছে বলে অভিযোগ করে গ্রামের অনেক ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার। বলা চলে, মামুনুল হকের অনুসারীদের কাঁধে ভর করে হিন্দুদের বাড়িতে তান্ডব চালায় স্বাধীন মেম্বার। শুধু একটা স্ট্যাটাস দেওয়াকে কেন্দ্র করে হিন্দু-অধ্যুষিত নোয়াগাঁও গ্রামে যে হামলা চালানো হয়েছে তাতে ৩০-৩৫টি ঘরবাড়িতে ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়েছে। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির উপজেলায় শাল্লার এমন ঘটনায় নড়েচড়ে বসেছে পুলিশ বিভাগসহ সরকারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে সংখ্যালঘু কেবল ব্যবহৃতই হয়েছে। কখনো সম্মানিত করেনি কোন ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল বা নেতা। তাঁর প্রমাণ ৫০ বছরের রাজনৈতিক উত্থান ও পতনের ইতিহাস। সেখানে পূর্ণিমা ধর্ষণ সহ শত শত ধর্ষণ-খুন-নির্যাতন-নিপীড়নের ঘটনা রয়েছে। বিচিত্র ঘটনায় অগ্রসর বাংলাদেশের রাজনীতিকদের দ্বিচারণের কারণে ভোলায় কথিত ফেসবুক মেসেজ নিয়ে যে সংঘর্ষ এবং হিন্দুদের ওপর হামলা হলো তা হঠাৎ করে ঘটেনি৷ অভিযুক্ত যুবক বিপ্লব চন্দ্র শুভর ফেসবুক আইডি হ্যাকের ঘটনা আগেই জানতে পেরেছিল পুলিশ৷ যারা হ্যাক করেছে তাদেরও আটক করা হয়৷ পরবর্তীতে পুলিশ স্থানীয় ‘তৌহিদী' নেতাদের সাথে বৈঠক করে৷ তারা সমাবেশ করবে না বলার পর পুলিশ আশ্বস্ত হয়৷ কিন্তু পরবর্তীতে শুধু সংঘর্ষ ও হতাহতের ঘটনাই নয় প্রায় একই সময় হিন্দুদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, মন্দির এবং বাড়িঘরে হামলা ও লুটপাটের ঘটনাও ঘটেছে৷ হিন্দুদের যেসব বাড়ি ঘরে হামলা হয়েছে তা থানা থেকে মাত্র থেকে দুইশ গজের মধ্যে৷ কিন্তু পুলিশ ওইসব এলাকায় আগাম কোনো নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে৷ হামলার শিকার সঞ্জয় দাস গণমাধ্যমকে জানিয়েছিলো- ‘‘একটি মন্দির, একটি দোকান ও নয়টি ঘরে হামলা ও লুটপাট চালানো হয়৷ আমার বৃদ্ধ মাকে মারধোর করা হয়৷ কিন্তু পুলিশ আগাম কোনো নিরপত্তার ব্যবস্থা নেয়নি৷ এখনো আমরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি৷''
তবে একথা সত্য যে, যারা গুজব ছড়ায় তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে দেখেনি জনতা। ২০১৬ সালের অক্টোবরে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে হিন্দুদের ওপর হামলাও হয়েছিল ঠিক একই পদ্ধতিতে৷ রসরাজ নামের একজন ফেসবুকে ইসলাম ধর্মকে অবমাননা করে পোস্ট দিয়েছিল বলে গুজব ছাড়ানো হয়েছিল৷ পরে জানা যায় রসরাজ সেই পোস্টই দেয়নি৷ ফেসবুক সম্পর্কে তার কোনো ধারণাও ছিল না৷ কিন্ত তথ্য প্রযুক্তি আইনে পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করে৷ পেশায় জেলে রসরাজ তিনমাস কারাবাসের পর জামিনে মুক্তি পায়৷ কিন্তু এক্ষেত্রেও পুলিশ আগাম কোনো ব্যবস্থা নেয়নি৷ অথচ কয়েক দিন ধরেই ওই কথিত ফেসবুক পোস্ট নিয়ে উত্তেজনা চলছিল৷ রংপুরের গঙ্গাচড়ায় ২০১৭ সালের নভেম্বরে হিন্দুদের বাড়িঘরেও একই পদ্ধতিতে হামলা করা হয়৷ টিটু রায় নামে একজনের বিরুদ্ধে ফেসবুক ধর্মীয় অবমাননার অভিযোগ তোলা হয়৷ পরে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ৷ কিন্তু তদন্তে জানা যায়, ফেসবুকে পোস্ট দেয়া তো দূরের কথা সে লেখা পড়াই জানে না৷ টিটুর ছবি দিয়ে আরেকজন তার নামে ফেসবুকে আইডি খুলেছিল। এমন সব অন্ধকারের ঘটনাগুলো থেমে যেতো যদি দুর্নীতি থামানো যেতো থানায়-পুলিশ লাইনে আর প্রশাসনে। সত্যি কথা এটাই ‘পুলিশ ও প্রশাসন যথাসময়ে ব্যবস্থা নিলে প্রতিটি ঘটনাই ঠেকানো যেতো’। ২০১২ সালের সেপ্টেম্বরে রামুর বৌদ্ধ পল্লিতে হামলার পেছনেও একই কৌশল অবলম্বন করা হয়৷ উত্তম বড়ুয়া নামে একজনের বিরুদ্ধে ইসলাম অবমাননা করে ফেসবুক পোস্ট-এর গুজব ছড়িয়ে চালানো হয় সেই হামলা৷ হামলার পর থেকে উত্তম নিখোঁজ আছেন৷ তাঁর স্ত্রী রীতা বড়ুয়া এক সন্তান নিয়ে এলাকা ছেড়ে এখন অন্য জায়গায় চলে গেছেন৷ তিনি জানান, ‘‘পুলিশও তাঁর কোনো খোঁজ দিতে পারছেনা৷ আমি একটি সন্তান নিয়ে অনেক কষ্টে আছি৷'' গণমাধ্যম সবসময় সত্য এবং সুন্দরের সাথে থাকার আপ্রাণ চেষ্টা করে। আর তাই পত্রিকার পাতায় সেসময় উঠে এসেছিলো- এই প্রতিটি ঘটনার ক্ষেত্রে হামলার আগে পুলিশ ঘটনা সম্পর্কে জানতে পেরেছিল৷ উত্তেজনা ছড়ানো, মাইকিং করার পরও তারা আগাম কোনো নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারেনি৷ ফেসবুকে ধর্ম অবমাননার গুজব ছাড়িয়ে রামু, উখিয়া, টেকনাফ, পাবনা, দিনাজপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, রংপুরসহ আরো অনেক জায়গায় আমরা সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘটনা দেখেছি৷ যার সর্বশেষ ঘটনা দেখলাম ভোলার বোরহানউদ্দিনে৷ প্রতিটি ঘটনায় হামলার আগে পরিবেশ নানাভাবে উত্তপ্ত করা হয়৷ পুলিশ নির্বিকার থাকে৷ এমনকি যারা এই গুজব ছড়ায় তাদের বিরুদ্ধেও পরে কোনো ব্যবস্থা নিতে দেখিনি৷ আর হামলাকারীরাতো বিচারের আওতায় আসেই না৷ তবে এবার ভোলায় একমাত্র ব্যতিক্রম আমরা দেখেছি৷ যারা ফেসবুক হ্যাক করে অপকর্ম করেছে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে৷ কিন্তু তারপরও পুলিশ কার্যকর ব্যবস্থা না নেয়ায় সংঘর্ষ এবং হিন্দুদের বাড়িঘরে হামলার ঘটনা ঘটেছে৷ বাংলাদেশে মুসলিম জনগোষ্ঠী মোট জনসংখ্যার ৮৮ দশমিক ৪ ভাগ৷ হিন্দু এবং অন্য ধর্মাবলম্বী ১১ দশমিক ৬ ভাগ৷ ২০১১ সালের আদমশুমারির হিসাবে সংখ্যালঘুদের সংখ্যা ছিল ৯ দশমিক ৬ শতাংশ৷ সরকারি হিসাবে বাংলাদেশের জনসংখ্যা এখন ১৬ কোটি ৪৬ লাখের হিসাবে তাদের সংখ্যা ১ কোটি ৭৪ লাখ৷
প্রতিনিয়ত দেশ-মানুষ-মাটির প্রতি ভালোবাসা থেকে বলতে চাই ‘২০১২ সাল থেকে সংখ্যালঘুদের নির্যাতনে ফেসবুকের মত ডিজিটাল ব্যবস্থাকে গুজব ছড়ানোর জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে৷ আগে অন্যভাবে গুজব ছড়ানো হতো৷ বাকি কৌশলগুলো একই আছে৷ যদি না এই কৌশল থেকে সরানো যায় আমাদের দেশকে, তাহলে ক্রমশ সহিংসতায় আমরা হারাবো ভাতৃত্বময় আলোকিত ইতিহাসের সোপান। যা কারোই কাম্য হতে পারে না। আমি মনে করি- দেশে সংখ্যালঘু প্রতিটি সহিংসতা থামানো সম্ভব হতো, যদি দুর্নীতি তাদেরকে গ্রাস করে না নিতো। পুলিশ ও প্রশাসন যথাসময়ে ব্যবস্থা নিলেও এই প্রতিটি ঘটনাই ঠেকানো যেত৷ কারণ প্রতিটি ঘটনাই পরিকল্পিতভাবে হয়েছে৷ হামলার কয়েকদিন আগে থেকেই গ্রুপগুলো প্রকাশ্যে তৎপরতা চালিয়েছে৷ মাইকিং করেছে, বিদ্বেষ ছড়িয়েছে এবং লোকজনকে সংগঠিত করেছে৷ আর প্রতিটি ঘটনায়ই দেখা গেছে ফেসবুকে ধর্মীয় অবমাননার গুজব বা অন্যরা তা পোস্ট করে সংখ্যালঘুদের ফাঁসিয়েছে৷ যা আগেই পুলিশ জানত৷ তাহলে পুলিশ প্রশাসন আগাম ব্যবস্থা নেয় না কেন? কারণ একটাই- ‘পুলিশের ওপর একটা রাজনৈতিক চাপ থাকে৷ একটা ভয়ের পরিবেশে তারা কাজ করেন৷ তারা সেই বিষয়গুলো বিবেচনা করে৷ তারা চায় কিছু একটার মাধ্যমে পরিস্থিতি অনুকূলে নিতে৷ চাপ কমাতে৷ এই নিস্ক্রিয়তার মধ্যে একটি ব্যবসাও আছে৷ ঘটনা ঘটলে মামলা হয়৷ এর বেনিফিট বেশি৷ মামলা হবে, অজ্ঞাতনামা আসামি হবে৷’
শুধু দুর্নীতির রাজনীতির কারণে নির্মমতা বাড়ছে, বাড়ছে সহিংসতা প্রতিদিন-প্রতিক্ষণ। নির্মমতা চাই না, তাই চাই প্রতিবাদ-প্রতিরোধ দুর্নীতিবাজ-জঙ্গী-হেফাজতের পৃষ্টপোষকদের সকল অন্যায় কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে। দুর্নীতি থামানোর জন্য চাই পুলিশ-প্রশাসনে নিরব চিরুনী অভিযান নিরন্তর। যেন থামে দুর্নীতি, জনগন পায় সুনীতি, মানবতা পায় সম্প্রীতি...
মোমিন মেহেদী : চেয়ারম্যান, নতুনধারা বাংলাদেশ এনডিবি